জৈন্তিয়ায় লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য টানছে পর্যটকদের মন।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- জৈন্তিয়ায় লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য টানছে পর্যটকদের মন। বিলের পানির ওপর সবুজের ফাঁকে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রং-তুলির আঁচরে। তাই যেন সৌন্দর্যমণ্ডিত সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লাল শাপলা বিল হিসেবে খ্যাত ডিবির হাওরে পর্যটকদের ভিড় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিলের পানিতে ঘুরে বেড়িয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। তবে এখানে যে শুধু লাল শাপলা বা প্রকৃতির সবুজ রংয়ের সমারোহই ঘটেছে এমনটাও নয়, এখানে লাল শাপলার মাঝেই দেখা মিলছে বেশ কয়েক জাতের পাখি। চারপাশ তাদের কলরবে মুখর। শীতে এত এত অতিথি পাখি দেখে মুগ্ধ পর্যটকেরা। পান, পানি, নারী—এই তিনে জৈন্তাপুরী। ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের গভীরতা বোঝাতে এই উপকথা প্রচলিত আছে সিলেটের জৈন্তাপুরে। পান-সুপারিতে আতিথেয়তা সিলেটের সংস্কৃতিরই একটি অংশ। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, জৈন্তা রাজ্য শাসন করেছেন খাসিয়া রানি জৈন্তেশ্বরী দেবী। আর স্বচ্ছ জলের সারি নদীর মোহনীয় নীলের কথা কে না জানে। এই তিন উপকথার ফাঁকে নিজের উপস্থিতি জানান দেয় মেঘালয়ের পাহাড়ের কোলে থাকা জৈন্তার লাল শাপলার বিল। বিলে ফুটে থাকা অজস্র লাল শাপলার রূপে মজে থাকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আর নৌকা দিয়ে বিলের মাঝখানে গেলে তো কথাই নেই। লতাপাতা-গুল্মে ভরা বিলের পানিতে ভেসে থাকা হাজার হাজার লাল শাপলার মাঝে নিজেকে স্বর্গরাজ্যের বাসিন্দা মনে হবে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়ে ওঠা সৌন্দর্য বুঝি এমনই হয়। সম্প্রতি ডিবির হাওর ঘুরে দেখা গেছে, লাল শাপলার বিলটিতে অসংখ্য অতিথি পাখি। পাখিগুলোর মধ্যে আছে বালিহাঁস, শামুকখোল, মেটে–মাথা তিতি, সাদা বক, কানি বক, মাছরাঙা, নীলকণ্ঠী, জলময়ূর ও সরালি হাঁস। স্থানীয় লোকজন বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অতিথি পাখির উপস্থিতি বেশি। সম্প্রতি বিলের বাঁধ উঁচু করা, হাওরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকা, সামাজিক বনায়নের গাছ লাগানো ও উপজেলার অন্যান্য বিলের পানি সেচ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে অতিথি পাখিগুলো ডিবির হাওরে আশ্রয় নিচ্ছে। লাল শাপলার বিল হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে কিছু লোক এখানে পাখি শিকার করতেন। তবে পরবর্তী সময়ে পরিবেশকর্মীরা স্থানীয় লোকজনের কাছে বিষয়টি বেআইনি বলে প্রচার চালানোয় মানুষ সচেতন হয়েছেন। এখন আর পাখিশিকারিদের তৎপরতা নেই। বিলটি নিরাপদ হওয়ায় এবার পাখি বেশি এসেছে বলে মত তাদের। ডিবির হাওরে বেড়াতে আসা পর্যটকরা জানান, ডিবির হাওরে বেড়াতে এসে মুগ্ধ তারা। লাল শাপলার বিলে পাখিগুলো দেখে বেশি ভালো লেগেছে তাদের। পাখিগুলো যাতে কেউ শিকার না করেন কিংবা বিরক্ত না করেন, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে জানান তারা। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ গনমাধ্যমকে বলেন, জৈন্তাপুরের লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। পর্যটকদের জন্য ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে, নতুন আরও একটি পার্কিংয়ের স্থান নির্মাণ হবে, পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য এক কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজ এ মাসেই শুরু হবে। লাল শাপলার বিলের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ। ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল, কেন্দ্রী বিলসহ ৯০০ একর এলাকাজুড়েই লাল শাপলার ‘রাজ্য’। পরিবেশকর্মী মো. খায়রুল ইসলাম জানান, লাল শাপলার বিল কেবল সৌন্দর্যের পরিচয়ই বহন করে না, জৈন্তিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সম্মিলন এই চারটি বিলের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। লাল শাপলার বিলে আসা পর্যটকেরা ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারছেন। সিলেটের জৈন্তাপুর হয়ে জাফলং ঘুরতে যাওয়ার সময় পর্যটকেরা লাল শাপলার বিলে ঘুরে যান। অনেকে কেবল বিলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। পুরো দিনটা কাটিয়ে দেন এখানেই। ভোরবেলা দূর থেকে দেখলে মনে হবে প্রকৃতি লালগালিচা বিছিয়ে পর্যটকদের বরণ করতে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এ ডাক উপেক্ষা করা সাধ্য কার! প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। তার মধ্যে বালিহাঁস, পাতি সরালি, পানকৌড়ি, নীলকণ্ঠী, সাদা বক, জল ময়ূরসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি দেখা যায়। তখন নতুন রুপ দেখা যায় শাপলার বিলের।