বিলেতের আয়না ডেক্স :- বিজয়ের ৫২ বছর অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। বছর ঘুরে আবার এলো ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালির জাতিরাষ্ট্র গঠনের জন্মযুদ্ধে জয়ের দিন। আজ বিজয়ের ৫২তম বার্ষিকী। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এসেছে বিজয়, এসেছে লাল-সবুজের পতাকা। বিশ্বের হাতে গোনা যে কটি দেশের স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিজয়েরও উৎসব রয়েছে তার একটি বাংলাদেশ। তবে বাঙালির চলার পথ মসৃণ ছিল না; লড়তে হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের সঙ্গে থেকেই। তারপরও শত বাধা অতিক্রম করে স্মার্ট, উন্নত ও সমৃদ্ধির পথ বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই এগিয়ে যাওয়ার প্রাণশক্তি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজ, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, উন্নয়নের জাদুকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপ্রতিরোধ্য, অদম্য, সাহসী যাত্রায় ছুটে চলা শেখ হাসিনা কোটি বাঙালির স্বপ্নপূরণে জেগে আছেন পদ্মায়, কর্ণফুলীর তলদেশে, সাগরপাড়ে ট্রেনের ছুটে চলায় কিংবা রাজধানীর মেট্রোরেলে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে সামরিক আক্রমণের পর শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটাতে পরদিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা সফল পরিণতি পায় ৯ মাস পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। এদিন ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। যাদের রক্তের বিনিময়ে দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটেছিল, বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশের, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের বার্ষিকীতে সেই বীর সন্তানদের স্মরণ করছে জাতি। ’৯০-এ গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের পর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ওই সময় পালন করে আওয়ামী লীগ। ২০২১ সালে বাংলাদেশ পালন করে জন্মের সুবর্ণজয়ন্তী। আর এই উদযাপনও হয় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়। যার কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। উচ্চ প্রবৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠা, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা সূচকে অগ্রগতির পর বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে পৌঁছানো। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে বিজয় দিবস পালনে ঢাকায় ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোতে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করে। ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানায় শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবে। তাদের টিকেট দেওয়া হলেও কোনো ধরনের চার্জ নেওয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সি শিশু, শিক্ষার্থী, এতিম ও প্রতিবন্ধীদের প্রবেশাধিকার ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে।