আওয়ামী লীগ-জাপা বিশেষ বৈঠক -৩৫ আসনে নৌকা প্রত্যাহার চায় জাতীয় পাটি।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- আওয়ামী লীগ-জাপা বিশেষ বৈঠক –৩৫ আসনে নৌকা প্রত্যাহার চায় জাতীয় পাটি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে ৩৫টি আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। বুধবার (০৬ডিসেম্বর) রাতে গুলশানে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার বাসায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনকালীন এই সময়ে এই বৈঠকটি রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আসন্ন নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অর্থবহ করে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। জাতীয় পার্টির দাবির প্রেক্ষিতে আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জাপা নেতাদের জানান। আরেকটি সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি থেকে ৩৮ জনের একটি তালিকা ওবায়দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তর করেন জাপা মহাসচিব। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির পক্ষে দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জানান, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করবে জাতীয় পার্টি। রাজধানীর বনানীতে দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপিবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও কিংস পার্টি নামে পরিচিতি পাওয়া দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতা নিশ্চিত ছিল না। যদিও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার আভাস দেন, জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা হতে পারে। সন্ধ্যায় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু জানান, বুধবার (০৬ডিসেম্বর) আলোচনা হবে জাপার সঙ্গে। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও জাতীয় পার্টির সঙ্গে কৌশলগত ঐক্যে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদের দুটি বক্তব্যের পর এমন ধারণা পাওয়া যায়। নির্বাচনে প্রথম অবস্থায় জাতীয় পার্টি ভোটে যাবে কি না- তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করার সময়ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের দল। মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৌশলগত জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালে আমরা নির্বাচন করেছিলাম। গতবার তারা আমাদের কৌশলগত জোট ছিল। এবারও সেটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্য আসার কিছু পরেই ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় বৈঠকে বসে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এর আগে সোমবার রাতে জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের। সেখানে আমু এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে শরিকদের আসন ভাগাভাগির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মঙ্গলবার আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন জোটগতভাবে হবে। বুধবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ। জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টিসহ আরো কয়েকটি দল নিয়ে গঠন করা হয় মহাজোট। ওই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে মহাজোট। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না করেই নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি। ওই ভোটে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল। এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে না থাকলেও ভোটে আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় পার্টি। গত সংসদ নির্বাচনে তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন। এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে। এই সংসদেও বিরোধীদলের আসনে রয়েছে জাতীয় পার্টি।