আজ ৫ই ডিসেম্বর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী
বিলেতের আয়না ডেক্স :- আজ ৫ই ডিসেম্বর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৩ সালের এই দিনে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মারা যান। হাইকোর্টের পাশে তিন নেতার মাজারে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। উপমহাদেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন প্রতিভাবান রাজনীতিক, আইনজ্ঞ, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভা ও গণপরিষদের সদস্য এবং অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীসহ তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের সংগঠিত করতে ১৯২৬ সালে ইনডিপেনডেন্ট মুসলিম পার্টি ও ১৯৩৭ সালে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের অনবদ্য বিজয়েও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি শ্রমজীবীসহ এতদাঞ্চলের অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে নাবিক, রেল কর্মচারী, পাটকল ও সুতাকল কর্মচারী, রিকশাচালক, গাড়িচালকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষায় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ উপমহাদেশের মেহনতি মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষকে সোচ্চার ও সংগঠিত করেছিলেন। এক জন প্রতিভাবান রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে তার দক্ষ পরিচালনায় গণমানুষের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আরও বিকশিত হয়। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব পাকিস্তান সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দীর্ঘ ২৪ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বাণী তার মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণীতে বলেছেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আমৃত্যু আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। গণতন্ত্রের বিকাশ ও এতদাঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যে অবদান রেখে গেছেন, জাতি তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তার জীবন ও কর্ম আগামী প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও মানুষের কল্যাণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও আদর্শ আমাদের সব সময় সাহস ও প্রেরণা জোগায়।’ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ। সাধারণ মানুষের প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম মমত্ববোধ। তিনি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ এবং এ অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সারা জীবন কাজ করেছেন। গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ আখ্যায়িত করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিবৃতিতে বলেন, তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার নেতৃত্বের অসাধারণ বলিষ্ঠতা, দৃঢ়তা ও গুণাবলি জাতিকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন।