বিলেতের আয়না :- মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রামে নৌকার ৭প্রার্থী চ্যালেঞ্জে স্বতন্ত্র বিদ্রোহী’দের লড়াই-এ চট্টগ্রামে নৌকার ৭প্রার্থী চ্যালেঞ্জের মুখে স্বতন্ত্র বিদ্রোহী’দের তীব্র লড়াই-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। চট্টগ্রামে১৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ১৬৩ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২২টি রাজনৈতিক দলের ১৩২ জন। ৩১ জন স্বতন্ত্র- যারা আওয়ামী লীগের নেতা। সবকটি আসনে এবার দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মোট আসন রয়েছে ১৬টি মধ্যে তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করেনিতাদের প্রার্থী পরিবর্তন করেনি ১১টি আসনের। বাকি পাঁচ আসনে নতুন প্রার্থী দিয়ছে শেষ পর্যন্ত জোট বিবেচনায় বিশেষ ভাবে একাধিক আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড থেকে প্রার্থী পরিবর্তনেরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গত (বৃহস্পতিবার) শেষ দিনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৬ প্রার্থীই তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে তা হবে আওয়ামী লীগের জন্য গলার কাঁটা-এমনটিই আশঙ্কা করছেন দলের নেতাকর্মীরা। এবার জেলার ১০ আসনে ১০৩ জন এবং নগরী ও নগরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ৬ আসনে ৬০ জন প্রার্থী। দুই আসনে সরাসরি দুজন নারী প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং বন্দর-পতেঙ্গা আসনে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেত্রী রেখা আলম চৌধুরী। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান,১৬আসনের বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আবার ৮টিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। নেতাকর্মীদের মতে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মাঠে না থাকলেও স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহীদের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় নৌকাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলের সঙ্গে টেক্কা দিতে প্রার্থী হয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন। আসনটিতে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে। তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। চট্টগ্রাম-১২(পটিয়া) আসনের সংসদ-সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অন্যান্য নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ১৫বছরে তিনি পটিয়ার আনাচে-কানাচে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন। দল থেকে তার মনোনয়ন না পাওয়ার খবরে পটিয়ার সর্বত্র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) বর্তমান এমপি ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী অওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্বাচিপ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব। দুজনই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান শুক্রবার বিকালে বলেন,দলের বা নৌকা প্রতীকের সঙ্গে আমাদের কোনো সাংঘর্ষিক বক্তব্য নেই। নৌকা যাকে দেওয়া হয়েছে তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম,এখনো আছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে মনোনয়নপত্র দাখিল ও নির্বাচনটি যেন উৎসবমুখর ও অধিকসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত ও নির্বাচনটা যেন দেশ ও দেশের বাইরে একটি মাইলফলক হিসাবে বা ইতিবাচক চিহ্নিত হয়ে থাকে। ভোটাররা যাতে তার পছন্দমতো প্রার্থীকে বেছে নিতে পারেন। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ-সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মুজিবুর রহমান। তিনি স্মার্ট গ্রুপ ও দৈনিক পূর্বদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনও প্রার্থী হয়েছেন। বেশিরভাগ আসনে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন দুই বর্তমান সংসদ সদস্য ও দলটির হেভিওয়েট কয়েকজন নেতা। অন্তত ৭টি আসনে প্রভাবশালী বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নৌকার প্রার্থীদের। সংশ্লিষ্টরা জানান,চট্টগ্রামে কোনো কোনো প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারলে এলাকায় অবস্থান বিদ্রোহীদের তুলনায় দুর্বল।বিএনপি জামায়াতের বিশাল ভোট-ব্যাংক রয়েছে। দিনশেষে নৌকার বিদ্রোহীদের ভাগে যেতে পারে এই ভোট-ব্যাংকের বিশাল একটি অংশ। আবার যদিও বিদ্রোহী হওয়া প্রার্থীরা জানিয়েছেন,গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা সাক্ষাৎ করতে যান। সেখানে সভাপতি বিনা ভোটে নির্বাচিত না হতে নৌকার বিরুদ্ধে ডামি প্রার্থী রাখতে বলেন। মূলত এই নির্দেশনা থেকে তারা স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানান। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, নির্বাচন নিয়ে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কেউ নির্বাচিত না হয়, সেটা কীভাবে করা যায় এরকম একটা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা সবাই যার যার মতো ফ্রি স্টাইলে নির্বাচন করব। এ বিষয়ে সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে একটি নির্দেশনা শিগগিরই দেবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। মনোনয়নপত্র জমাদানকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ,জাতীয় পার্টি,তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি,বিএনএফ,সুপ্রিম পার্টি,জাসদ, সাম্যবাদী দল,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ,মুসলিম লীগ,বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ,জাকের পার্টি,ন্যাশনাল পিপলস পার্টি,গণমুক্তি সাংস্কৃতিক জোট,বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি, ন্যাপ,গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোট।