বিলেতের আয়না ডেক্স :- আরামবাগের জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান এবারও জিতবে নৌকা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরামবাগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে আগতদের হত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ! স্মরণকালে এমন জন¯্রােত আর দেখেনি আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার রাজধানী ঢাকার মানুষ। কয়েক কিলোমিটার এলাকা যেন মানুষের মহাসমুদ্র! যে সমুদ্রের শুরু থাকলেও কোথায় যে শেষ কেউ তা বলতে পারেনি। ঢাকা বিভাগের সকল জেলার লাখ লাখ মানুষের ¯্রােতে পুরো ঢাকা মহানগরের একাংশ যেন পরিণত হয়েছিল বিশাল জনসমুদ্রে। স্বপ্নযাত্রার মেট্রোরেলের মতিঝিল পর্যন্ত উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণকালের বৃহৎ ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য ঢাকা বিভাগের সকল মানুষকে আহ্বান জানালেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ দেশের জনগণ আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগণের সেবা করে যাব। নৌকা এবার জিতবেই।’ বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, সহিংসতা করে দেশের অগ্রযাত্রাসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিতে চায়। কে তাদের অধিকার দিয়েছে ধ্বংস করার? অবিলম্বে তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। না করলে কিভাবে এসব বন্ধ করতে হয় তা আমাদের জানা আছে। কাউকেই ছাড়া হবে না। যারা সন্ত্রাস করছে, অগ্নিসন্ত্রাসের যারা ইন্ধন দিচ্ছে, দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক ছাড়া হবে না। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ধরে এনে শাস্তি দেব ওই কুলাঙ্গারকে (তারেক রহমান)। আর দেশের মানুষের কাছে আমার একটাই চাওয়া, সবাই যেন স্বাধীন দেশের আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে। ওই সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তপরায়ণদের যেন প্রত্যাখ্যান করে। কানা-খোঁড়া যাকেই মনোনয়ন দেই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তাকে বিজয়ী করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, আগামী নির্বাচনের তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা হতে পারে। সেই নির্বাচনে কানা-খোঁড়া বা যাকেই প্রার্থী দিই তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। এবার নৌকা জিতবেই। এ সময় ওয়াদা চাইলে সমাবেশে উপস্থিত লাখ লাখ নেতাকর্মীরা দু’হাত তুলে এবং নৌকা মার্কার গগণবিদারী স্লোগান দিয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা দিতে, নৌকা মার্কাই পারে উন্নয়ন দিতে। আমি ঢাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ করব, একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই এতো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটা আমরা নির্ধারণ করব। যাকে মনোনয়ন দেব ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। যেন আবারও আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক উন্নয়নকাজ বাকি সেগুলোও যেন শেষ করতে পারি। কারণ অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদীরা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে এ দেশটাকে টিকতে দেবে না। সে জন্যই সকলকেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র ব্যারিস্টার ফজরে নূর তাপস, আতিকুল ইসলাম, সাবের হোসেন এমপি, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, একেএম শামীম ওসমান, যুবলীগের শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, কৃষক লীগের উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ। যৌথভাবে সমাবেশা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে দশ লক্ষাধিক মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি নিকট অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মহাসমাবেশ স্থল আরামবাগ থেকে মতিঝিল, কমলাপুর, ইত্তেফাক মোড়, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ চারপাশে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য। নানা স্লোগানে, নাচে গানে খ- খ- বর্ণিল মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে ঢাকা মহানগরীর এই প্রাণকেন্দ্রটি। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ঢাকা মহানগরের অলিগলিতে গণমানুষের ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে আরামবাগ-মতিঝিলসহ পুরো এলাকার কয়েক কিলোমিটার পথ। পুরো এলাকাই রীতিমত মহাসমাবেশ স্থলে পরিণত হয়েছে। মহানগরের নেতারা এই বিভাগীয় মহাসমাবেশকে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের সেই ঐতিহাসিক গণসমাবেশের সঙ্গে তুলনা করেন। শনিবার সকাল থেকে ঢাকা মহানগরীতে গণমানুষের ঢল থেকে ভাসতে থাকে ‘জয় বাংলা আর বারবার দরকার, শেখ হাসিনার সরকার’ স্লোগান। সকাল ১০টা থেকে ঢাকা মহানগরী সকল থানা, ওয়ার্ড ছাড়া ঢাকা বিভাগের সকল জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে শত শত বাসে-ট্রাকে করে সভাস্থল নগরীর আরামবাগে রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও স্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন শেষে মেট্রো ট্রেনযোগেই সমাবেশস্থল আরামবাগে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগ দেন। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল স্টেশনে আসতে সময় লাগে মাত্র ২৫ মিনিট। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে আসার আগেই পুরো এলাকা রীতিমত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শেষে নিজেই জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, মার্ক কী নৌকা স্লোগান ধরলে মহাসমাবেশে উপস্থিত প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের পাল্টা স্লোগানে পুরো নগরীই যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশকে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমাদের কাজ। দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যাতে করে ঘাতকের দল, বিএনপি-জামায়াত এ দেশের মানুষকে আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। আর দেশের জনগণের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সাবধান করে দিচ্ছি, ধ্বংসযজ্ঞ করলে ছাড়ব না ॥ বিএনপিকে ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার সাবধানবাণী উচ্চারণ করে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করা। সবকিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে এভাবে? তাদের কে অধিকার দিয়েছে? কাজেই তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। আর এটি যদি বন্ধ করতে না পারে কীভাবে বন্ধ করাতে হয় তা আমাদের জানা আছে। এটি আমরা ছাড়ব না। সমাবেশে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এরা যেন জ্বালাও পোড়াও ধ্বংস করাই যেন তাদের একটি উৎসব। এই হলো বিএনপির চরিত্র। আমার প্রশ্ন তারা মানুষের ভাত দিতে পারেনি। মানুষের ঘর দিতে পারেনি। মানুষকে কাপড় দিতে পারেনি। তাদের আমলে বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে আমাদের দেশের মানুষকে পরাত। আর সেই মানুষগুলোর ওপর তারা এই অত্যাচার কিভাবে করে? ঢাকাবাসীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আগুন দিয়ে পোড়াবে