রাজধানীতে ২৩ শর্তে দুই দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলো।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- রাজধানীতে ২৩ শর্তে দুই দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলো। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠন এবং নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সমাবেশ করার জন্য বিএনপিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল পর্যন্ত সভা-সমাবেশ ও মাইকের ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও মাইকিং মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে শুরু করে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন- ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর আগে দুপুরে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, পবিত্র আশুরায় নিরাপত্তা ও ভিভিআইপি মুভমেন্ট নিশ্চিত শেষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ফোর্স থাকলে দুই রাজনৈতিক দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেসময় তিনি আরও বলেন, ২৯ জুলাই শনিবার পবিত্র আশুরা পালিত হবে। শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে এটি সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আগের দিন থেকে এ ব্যাপারে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে। এছাড়া শুক্রবার ভিভিআইপি মুভমেন্ট থাকায় দুই দলকে মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ এর আগে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বৃহস্পতিবার শান্তি সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু গতকাল দিনভর নাটকীয়তা শেষে রাতে জানানো হয়- শুক্রবার বিকেল ৩টায় আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলার (পুরোনো) মাঠে তাদের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসমাবেশ নয়াপল্টনেই অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। বিনা কারণে শুধু ভয় আর আতঙ্ক ছড়াতে সরকারের হুকুমে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ২৩টি শর্ত হচ্ছে ১. এ অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ৩. অনুমোদিত স্থানেই (বিএনপির জন্য পুলিশ হাসপাতাল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে এবং আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গসংগঠনকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে) যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ৪. কোনও অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনও ধরনের জনসমাগম করা যাবে না। ৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। ৬. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী- নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। ৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৯. শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না। ১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। ১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে- এমন কোনও বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। ১৩. সমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ১৪. সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে। ১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। ১৬. কোনও অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। ১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়— এমন কার্যকলাপ করা যাবে না। ১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কার্যকলাপ বা বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। ১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। ২০. কোনও ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। ২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনও বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। ২২. উল্লিখিত শর্তাবলি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। ২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ দর্শানো ছাড়া এ অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।