জুন ৯, ২০২৩

জাতীয়

স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা সিরাজুল আলম খান আর নাই

বিলেতের আয়না ডেক্স :- স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা সিরাজুল আলম খান আর নাই। স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠনের কারিগর ।বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ খ্যাত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সিরাজুল আলম খান দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ৭ মে রাতে অসুস্থতা নিয়ে রাজধানী ঢাকার পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত ১ জুন তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয় ৮২ বছর বয়সি প্রবীণ এই রাজনীতিবিদকে। সিরাজুল আলম খানের জন্ম ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে তিনি খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা চিরকুমার সিরাজুল আলম খান ঢাকার কলাবাগানে ভাইদের সঙ্গেই থাকতেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একজন সফল সংগঠক সিরাজুল আলম খান ছয় দফা এবং পরবর্তী সময়ে ১১ দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। এ নিউক্লিয়াস গড়ে তোলার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিক-জনতাকে সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অপরাপর ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মিলে গড়েন মুজিব বাহিনী। এই বাহিনীর সরকারি নাম বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)। এর প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, আর উপপ্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়ায় থেকে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি ক্ষমতার সঙ্গে শামিল হননি। বরং তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্নেহে বেড়ে রাজনীতিতে বিকশিত হয়ে শীর্ষে ওঠা সিরাজুল আলম খান এরপরই হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিরোধী। যদিও সিরাজুল আলম খান জীবদ্দশায় কখনো জাসদের নেতৃত্বে আসেননি বা থাকেননি। জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসাবে তাদের কাছে ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ বা ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসাবে পরিচিত এই রাজনীতিবিদ কখনো জনসম্মুখে আসতেন না। এমনকি বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসাবে পরিচিতি পান সিরাজুল আলম খান। রাজনীতির সতীর্থ, সঙ্গী-সাথী, ঘনিষ্ঠজনসহ অনেকে তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেও ডাকতেন, চিনতেন। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের পর ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ গঠন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর গঠন এবং সমবায়ভিত্তিক অর্থনীতিসহ ১৫ দফা করণীয় উত্থাপন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের রূপরেখা প্রদান করেন সিরাজুল আলম খান। ১৯৭৫ সালে সিপাহি-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনাকারী এই রাজনীতিবিদ বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনার সঙ্গে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আমৃত্যু জড়িয়ে ছিলেন। কখনো সফলতা, আবার কখনো ব্যর্থতায় মোড়ানো ছিল তার জীবন। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। কনভোকেশন মুভমেন্টের কারণে ১৯৬৩ সালের শেষদিকে প্রথম গ্রেফতার হন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আবার গ্রেফতার এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। খালেদা জিয়ার শাসনামলে ১৯৯২ সালের ২৪ মার্চ বিদেশে যাওয়ার পথে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিরাজুল আলম খানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে চার মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মুক্তি পান তিনি। জানাজা ও দাফন : সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত হবে। তার মরদেহ নেওয়া হবে গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে। শোক প্রকাশ : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে গভীর শোক এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এক শোকবার্তায় মরহুম সিরাজুল আলম খানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে সিরাজুল আলম খানের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আজীবন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। আরেক শোকবার্তায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনালগ্নের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত। তিনি আমাদের সত্তার মাঝে অমর হয়ে থাকবেন। তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সতীর্থ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ, নেপথ্যের নায়ক ও সফল স্বপ্নদ্রষ্টা। বাঙালির জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, ছাত্র ও যুবকদের মনে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র এবং সব সংগ্রাম আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার অন্যতম কৌশল প্রণয়নকারী ছিলেন তিনি। একাত্তরের আগেই সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসাবে রেখে বিএলএফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। জয় বাংলা বাহিনী গঠন, জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন, জাতীয় সংগীত নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা, অসহযোগ আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনন্য ইতিহাসের নায়ক সিরাজুল আলম খান। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় সমাজতান্দ্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি, সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের সভাপতি জোনায়েদ সাকী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তারা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

জাতীয়

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৪ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার

বিলেতের আয়না ডেক্স :- সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৪ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার সিলেটের গোলাপগঞ্জে পরোয়ানাভূক্ত ৪জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। বুধবার (৭জুন) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো : উপজেলার বাদে রনকেলী এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে জানে আলম (৩৫), ঘোষগাঁও (টিলাবাড়ী) এলাকার মৃত মখদ্দছ আলীর ছেলে মো: ফখরুল ইসলাম (৫২), ফখরুল ইসলামের স্ত্রী সাকিয়া বেগম (৩৫) ও একই গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম (৫০)। পুলিশ জানায়, সিলেট জেলার অপরাধ দমন, আসামী গ্রেফতার ও জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য সঙ্গবদ্ধ অপরাধী গ্রেফতারে পুলিশ সবার্ধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (৭জুন) গোলাপগঞ্জ থানার এসআই সৈয়দ জহির আলী, এসআই পার্থ, এএসআই/ প্রনয় ও এএসআই মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জাতীয়

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পিকআপ -ট্রাক সংঘর্ষ ১৪ জন নিহত।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পিকআপ -ট্রাক সংঘর্ষ ১৪ জন নিহত। দক্ষিণ সুরমায় স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭ জন। নিহতরা সবাই নির্মাণশ্রমিক। তারা সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে যাচ্ছিলেন। বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাজিরবাজারের কুতুবপুর এলাকায় বালুবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-০৭৮০) ও নির্মাণ শ্রমিকদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানের (সিলেট-ন ১১-১৬৪৭) ভয়াবহ সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ১১ জন ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর নারীসহ আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। বিকেলে এ ১৪ মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতরা হলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার হলদিউড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫), নেত্রকোনার বারোহাট্টা উপজেলার দশদার গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ মিয়া (৪৬), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁও গ্রামের মৃত ওয়াহাব মিয়ার ছেলে শাহিন মিয়া (৫০), একই উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের হারুণ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬), তলেরবন্দ গ্রামের মৃত আমান উল্লাহর ছেলে আউলাদ তালুকদার (৫০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৫০), একই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৬), একই গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া (১৯), মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৬০), সাগর আহমদ (১৮), উপজেলার মধুপুর গ্রামের মৃত সোনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া (৪০), গছিয়া গ্রামের মৃত বারিক উল্লাহর ছেলে সিজিল মিয়া (৩৫), কাইমা গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫)। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া পিকআপে প্রায় ৩০ জন নির্মাণ শ্রমিক ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকায় কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী মালবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় আর তিনজনের। আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানাপুলিশ এবং সিলেট ও ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সিলেট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া বলেন, সংঘর্ষের পর শ্রমিক বহনকারী ডিআই ট্রাকটি সড়কের পাশে পড়ে যায় এবং বড় ট্রাকটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ১১ জন প্রাণ হারান। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে আরও তিনজন মারা যান। আহত ঠিকাদার শের ইসলাম জানান, তিনি ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে ট্রাকে করে কাজে যাচ্ছিলেন। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তার ভাই সাহেদ নুরও রয়েছেন। শের ইসলাম বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান দিকে এসে আমাদের ট্রাকে ধাক্কা দিয়েছিল। শ্রমিকরা জানান, তারা নগরীর আম্বরখানা বড়বাজারের একটি মেসে থাকেন। প্রতিদিন ঠিকাদারদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সাইটে গিয়ে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করেন। প্রতিদিনের মতো বুধবারও পিকআপে করে গোলায়াবাজারে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজে যাচ্ছিলেন তারা। দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারের কুতুবপুরে এলে বিপরীত থেকে আসা বালুবাহী দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তবে শ্রমিকরা গোয়ালাবাজার এলাকায় কোনো সাইটে বা কোনো ঠিকাদারের অধীনে কাজে যাচ্ছিলেন কি না, তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। আহত শ্রমিকদের ধারণা, উল্টো দিক থেকে আসা দ্রæতগতির ট্রাকটির চালক সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাই ট্রাকটি একবার রাস্তার ডানে ও আরেকবার বাঁয়ে আসছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ট্রাকটি শ্রমিকবাহী পিকআপ ভ্যানটির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খায়।

Scroll to Top