দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন আর নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বেশি। এর আগে গত বছর মাঝামাঝি প্রকাশিত শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ। শুমারি-পরবর্তী যাচাইয়ে (পোস্ট ইনিউমারেশন চেক) আরো ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জন বেড়েছে। গতকাল রবিবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চূড়ান্ত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনাপ্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও বিবিএস মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের যন্ত্র আছে, জ্ঞান আছে, জনবল আছে। সরকারি কর্মকর্তা আছে। তাহলে কেন জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে? জনশুমারির পেছনে কেন দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে? এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো দেশগুলো কীভাবে জনসংখ্যার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে, তা পর্যালোচনা করতে বিবিএসকে নির্দেশ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, নেদারল্যান্ডসে এক বছরের মধ্যে জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ইউরোপের দেশগুলোতেও তা-ই হচ্ছে। আমাদের দেশেও এক বছরের মধ্যে জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন তিনি। ঘটা করে জনশুমারি করার ধারা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। উল্লেখ্য, প্রতি ১০ বছর পর পর দেশে জনশুমারি করে আসছে বিবিএস। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনে ‘আদমশুমারি’র পরিবর্তে ‘জনশুমারি’ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালে জনশুমারি হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও ট্যাব কেনা নিয়ে জটিলতায় এক বছর পর ষষ্ঠ জনশুমারি হয় ২০২২ সালে। ওই বছর ১৫ থেকে ২১ জুন দেশ জুড়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা করা হয়। এক মাসের ব্যবধানে শুমারির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। তখন বলা হয়, দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক মানুষ বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা প্রতিবেদনে বিআইডিএস জানায়, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৪৭ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে। তাদের যোগ করলে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে। এবার সেই সংখ্যাই প্রকাশ করা হলো। প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানান, সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ঢাকা বিভাগে, ৪ কোটি ৫৬ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৭ ভাগ। সবচেয়ে কম মানুষ বাস করে বরিশাল বিভাগে ৯৩ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে পাঁচ শতাংশ। মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটি ৪৫ লাখ বা ৯১ ভাগ। অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ কোটি ৫২ লাখ বা ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কত সংখ্যক প্রবাসী বসবাস করেন, এবারের জনশুমারিতে তা প্রকাশ করার কথা থাকলেও সে তথ্য দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানান, জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত আছে। ঐ সময়ের মধ্যে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীদের তথ্য দেওয়া হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কতসংখ্যক প্রবাসী বসবাস করছেন, তা জানতে সবার আগ্রহ আছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তথ্যটি প্রকাশ করা যেত। এটা তেমন কঠিন ছিল না। চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে হিজড়া ১২ হাজার ৬২৯ জন। মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ পল্লিতে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করে। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ১ কোটি ৭১ লাখ ৬০ হাজার ১৭৫ জন। অর্থাত্ দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ১০ শতাংশ তরুণ। সবচেয়ে কম হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৮ বছর বয়সি মানুষ। জনসংখ্যার হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। শহরের বসবাস করে ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর গ্রামে ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ মানুষ বসবাস করে। গ্রামে বসবাস করে ১১ কোটি ৬১ লাখ মানুষ। আর শহরে ৫ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ।