রুচির দুর্ভিক্ষে হিরো আলমের মতো লোকের উত্থান হয়েছে , বলেছেন নাট্য জগতের কিংবদন্তি, বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশীদ।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- রুচির দুর্ভিক্ষে হিরো আলমের মতো লোকের উত্থান হয়েছে , বলেছেন নাট্য জগতের কিংবদন্তি, বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশীদ। ‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এই উত্থান কীভাবে রোধ করা যাবে, এটা যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিক সমস্যাও।’ কথাগুলো নাট্যজন মামুনুর রশীদের। সম্প্রতি অভিনয় শিল্পী সংঘের একটি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। হিরো আলম সম্পর্কে আগে তিনি খুব একটা জানতেন না। তবে নাট্যাঙ্গনের কয়েকজন তাঁকে হিরো আলমের কর্মকাণ্ড সম্পর্ক অবহিত করেছিলেন। এর পর থেকেই হিরো আলমকে নিয়ে বিরক্ত ছিলেন তিনি। মামুনুর রশীদ বললেন, ‘কয়েকজন বলার পর খোঁজ নিয়ে দেখলাম, হিরো আলম যখন সংসদ নির্বাচন করছে, তাকে কেউ একজন একটা গাড়ি দিচ্ছে। সেই গাড়ির আবার নয়-দশ বছরের ফিটনেস নেই। এই হিরো আলম নিয়ে আমি অনেক দিনই বিরক্ত ছিলাম। বিরক্ত ছিলাম এই কারণেও, আমাদের দেশের মানুষের তো রুচির দুর্ভিক্ষ হয়ে গেছে। তাহলে এ ধরনের সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী? ‘উত্তরণের উপায় খুব কঠিন। কারণ, আমাদের রাজনীতিও তো রুচিহীন হয়ে গেছে। ওই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনা কঠিন। রাজনীতি যদি সুস্থ হতো, দুর্নীতিপরায়ণ সমাজ যদি না হতো, তাহলে কিছু একটা হতো,’ বললেন মামুনুর রশীদ। কথায় কথায় মামুনুর রশীদ এ-ও বললেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র তো কোনোভাবে রুচির উন্নয়নে কাজ করছে না। তাই এখন আমার আর রাজনীতির কাছে, রাষ্ট্রের কাছে, সংস্কৃতির কাছে, কোথাও আবেদন-নিবেদন নেই। আমার আবেদন, যে মানুষগুলো সামাজিক কাজের প্রতি দায়বদ্ধ, তাঁদের কে বলতে চাই, আপনারা এগিয়ে আসুন। তাঁরাই যদি আওয়াজ তোলেন, সারা দেশে মানুষ যদি প্রশ্ন করতে শুরু করে, মানুষ যদি সব ধরনের অন্যায়ে বাধা দেয়, বলতে থাকে, এটা ঠিক হচ্ছে না; এটা করতে পারবে না, তাহলেই হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ তো বাধা দেওয়াও ভুলে গেছে। কথার কথা, কাল মুরগির দাম ছিল ১০০ টাকা, আজ হয়ে গেছে ১৫০ টাকা। তারপরও কিন্তু মানুষ কিনছে!’ দেশের বাইরের উদাহরণ টেনে এনে মামুনুর রশীদ বললেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তো সাধারণ মানুষ বাধা দেয়। অস্ট্রেলিয়াতে একবার দেখেছি, একদিন সকালে হঠাৎ কলার দাম বেড়ে গেল। ওদের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব রাষ্ট্রব্যবস্থা এ নিয়ে তোলপাড়। শেষমেশ দাম কমাতে বাধ্য হলো। বাইরে থেকে আমদানি করা শুরু করল, তখন ব্যবসায়ীরাও বিপদে পড়ে গেলেন। আর আমাদের এখানে রাষ্ট্র কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয় না, আর মানুষও এত বেশি দাম সত্ত্বেও সবকিছু মনে নিচ্ছে! মেনে নিচ্ছে বলেই ব্যবসায়ীরা যা খুশি করছেন। বাংলাদেশ একটা ব্যবসায়ীদের রাষ্ট্র হয়ে গেছে, আ স্টেট অব বিজনেসম্যান।’ ক্ষোভ থেকে মামুনুর জানালেন, ‘আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, দেশে একটা রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। আমরা সেই রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। কী রকম? একদিকে মুক্তচিন্তা। মুক্ত চিন্তার জন্য হুমায়ূন আজাদ প্রাণ দিয়েছিলেন। মুক্তচিন্তার আরও অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের মিডিয়া মুক্ত হওয়ার ফলে আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতি দ্বারা উত্থান। আজ আমাদের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। কী সুন্দর রাস্তাঘাট হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে, আমরা খুব মুগ্ধ। দেশের মানুষের কষ্টের অবসান হবে। কিন্তু দেশের মানুষের সংস্কৃতি ও রুচিই যদি ঠিক না করা যায়, এসব কে ব্যবহার করবে, তাই সংস্কৃতি ও রুচির উন্নয়নে কাজ করতে হবে।’