বিলেতের আয়না ডেক্স :- জাতির পিতার আদর্শে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়বো:– প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। বানাবো আগামী দিনের বাংলাদেশ, স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ। গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনটাকে উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। তার ভেতরে যে মানসিকতা ছিল, মানুষের প্রতি দরদ ছিল, এটা ছোটবেলা থেকেই প্রকাশ পেয়েছিল। স্কুলে যখন পড়তেন তখন যার বই নেই তাকে নিজের বই দিয়ে দিতেন। গায়ের জামা কাপড় দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধানও মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছিলেন আমার দাদা-দাদি। বড় হয়ে যারা শোষিত ও বঞ্চিত ছিল, একবেলা খাবার পেতো না, যাদের কোনো পুষ্টি ছিল না, রোগের চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিল না, ঘরবাড়ি ছিল না সেই সব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আজ আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারি, বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি। সেই ৪৮ সাল থেকেই এই আন্দোলন তিনি শুরু করেছিলেন। তারই নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়। কাজেই জাতির পিতার এই জন্মদিনকে আমরা শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। অক্ষম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্ধকে অন্ধ বলিও না, পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না- এটা হোক ছোটবেলার শিক্ষা। কাজেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমরা কিন্তু প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেই, বৃত্তিও দিয়ে থাকি। কাজেই সবাই এই সংসারের, সবাই এই সমাজের। বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালোবাসতেন, শিশুদের প্রতি তার অত্যন্ত দরদ ছিল। শিশুদের সঙ্গে খেলা করতেও তিনি পছন্দ করতেন। কাজেই জাতির পিতার এই জন্মদিনটিকে আমরা শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। শিশুরা আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ, তারা যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকের শিশুরাই স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই, আজকের শিশুরাই তো হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এই দেশটাকে গড়ে তুলবে। এবারের শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য চমৎকার হয়েছে বলে জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ও শিশু দিবসের এই প্রতিপাদ্য হলো- ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’। আমি মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই এরকম একটা সত্যিকার উপযোগী প্রতিপাদ্য গ্রহণ করার জন্য। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত শিশু সমাবেশে যোগ দেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার তুলে দেন। এ ছাড়া গরিব-মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। বক্তব্য শেষে শিশু প্রতিনিধির বক্তব্য, বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, কাব্য নৃত্যগীতি আলেখ্যানুষ্ঠান উপভোগ করেন। এরপর তিনি শিশু দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করেন। সেনানিবাসে বঙ্গবন্ধু’র জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে একযোগে ঢাকাসহ দেশের সকল সেনানিবাস ও বৈদেশিক মিশনে অবস্থানরত কন্টিনজেন্টসমূহে উদ্যাপন করা হয়। দিবসটি উদ্যাপনে সেনাবাহিনীর সকল স্তরের সামরিক এবং অসামরিক ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে বিবিধ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আইএসপিআর জানিয়েছে, দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকাসহ সকল সেনানিবাসের প্রতিটি প্রবেশ পথ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ সুসজ্জিত করা হয়। ঢাকাসহ সকল সেনানিবাস এবং বৈদেশিক মিশনে অবস্থানরত কন্টিনজেন্টসমূহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনীর ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান, ৭ই মার্চের ভিডিও চিত্র এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান। এ দিনে জাতির পিতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সেনানিবাসসমূহের সকল মসজিদে বাদ জুমা বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার, জেসিও, অন্য পদবির সেনাসদস্য এবং অসামরিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সেইসঙ্গে সেনাবাহিনী পরিচালিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতির পিতার জীবনীর ওপর আলোচনা সভা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সাহেরা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ১৯৯৭ সাল হতে সারা দেশে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।