এক নজরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়ন
বিলেতের আয়না ডেক্স :- এক নজরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়ন সিলেট জেলার গোলাপগন্জ উপজেলার পূর্বকোনে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ৯ নং পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়ন। ১৯৬৭ ইংরেজি সনে তৎকালীন আমুড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙ্গে কুশিয়ারার পশ্চিম দিকের অংশকে পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়ন এবং পূর্বদিকের অংশকে পূর্ব আমুড়া ইউনিয়ন( বতর্মান বুধবারী বাজার ইউনিয়ন) নামে দুটি নতুন ইউনিয়নের আত্মপ্রকাশ হয়। ২১.৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ইউনিয়নে মোট গ্রাম রয়েছে ৯টি। এগুলো হলো শিলঘাট, ধারাবহর, কদম রাসুল, আমনিয়া, ডামপাল, ইসলামটুল, আমুড়া, সুন্দিশাইল এবং ঘাগুয়া।এই ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা হচ্ছে ২১, ০১০ জন, মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১৩,০২০ জন এবং স্বাক্ষরতার হার প্রায়৭৭℅। আমুড়া ইউনিয়নে ২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১ টি সরকারী কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজ, ১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬ টি কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া গোলাপগন্জ উপজেলার একমাত্র স্টেডিয়ামটি ইউনিয়নের ধারাবহর গ্রামে অবস্থিত এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একই গ্রামের প্বার্শে অবস্থিত। ছোট বড় টিলা, খাল, বিল,নদী নালা পরিবেষ্টিত আমুড়া ইউনিয়নের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সুন্দর্য্য সবার নজর কাড়ে। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্হান গুলির সংক্ষিপ্ত পরিচিত নিম্নে তুলে ধরাহলো। ▪এরাল বিল: গোলাপগঞ্জের আমুড়া ইউনিয়নের একাংশ ( আমনিয়া, সুন্দিশাইল, আমুড়া) জুড়ে রয়েছে সুবিশাল এরাল বিল। এখানে শীতকালে লাল শাপলার সৌন্দর্য অবলোকনে ছুটে আসেন পর্যটন পিপাসুরা। বিলের মধ্যখানে দ্বীপের মতো টিলা এবং চারদিকে বিস্তৃত জলরাশির মধ্যে রয়েছে নানান প্রজাতির মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ। পাশাপাশি অতিথি পাখির অবাদ বিচরণ এবং তাদের ঝাকে ঝাকে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ। ▪সুন্দিশাইল শহীদ মিনার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ অক্টোবর আমুড়া ইউনিয়নের এই গ্রামে একদল মুক্তিযোদ্ধার সাথে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর রাজাকার বাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। উক্ত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জেরে রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণদিতে হয় একই গ্রামের ২০ জন অধিবাসী সহ মোট ২৩ জনকে। উক্ত ২৩ শহীদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এই গ্রামে নির্মাণ করা হয় ২৩ শহীদ স্মৃতিসৌধ। ▪শিলঘাট আকন্দ বাড়ি : সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের গুগল জরিপ মতে ৩০০ একর আয়তনের এই বাড়িটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাড়ি হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানাযায় হযরত শাহজালাল রহ: সিলেট বিজয়ের পর যখন বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তখন প্রয়োজন পড়ে ইসলামী শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের। সময়ের সেই সন্ধিক্ষনে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব আব্দুল লতিফ আকন্দ সুদূর পারস্য থেকে সিলেটে এসে আমুড়া ইউনিয়নের শিলঘাট গ্রামে বসতি স্হাপন করেন। উল্লেখ্য যে আকন্দ হচ্ছে ফারসি শব্দ যার অর্থ হলো শিক্ষক বা কর্মকর্তা।তৎকালীন সময়ে ইসলামী শিক্ষায় সর্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিদেরকে আকন্দ উপাধি দেওয়া হতো। তাঁর সেই আকন্দ উপাধি থেকে আকন্দ বাড়ির নামকরণ করা হয়েছিল। আকন্দ বাড়িতে বতর্মানে উনার ১১তম প্রজন্ম চলছে। আকন্দ বাড়ির পারিবারিক গোরস্হানে তাঁর মাজার অবস্থিত। বছরের বিভিন্ন সময়ে অনেক লোক তাঁর মাজার জিয়ারত ও বাড়ির প্রাকৃতিক সুন্দর্য অবলোকন করতে আসেন। ▪কদম রাসুল উঁচা বাড়ি : কথিত আছে এখানে রাসুল (সা:) এর কদম মোবারকের ছাপ সম্বলিত একটি পাথর আছে। হযরত শাহজালাল (রহ:) এর অন্যতম সহযোগী হযরত সৈয়দ আব্দুল মালেক (রহ:) এই বাড়িতে অবস্থান করেন। ধারণা করা হয় তিঁনি যখন মক্কা থেকে হযরত শাহজালাল (রহ:) এর সফর সঙ্গী হন তখন তিঁনি উক্ত পাথরটি সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এই পাথরের সম্মানে গ্রামের নাম রাখা হয়েছিল কদম রাসুল। ▪শিলঘাট সাব বাড়ি : শিলঘাট গ্রামের খানবাহাদুর শরাফত আলী চৌধুরীর বাড়িটি সাব বাড়ি নামে পরিচিত। তিঁনি চাকরি জীবনে সততা ও নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করে সর্বশেষ ০১/০১/১৯২০ ইংরেজিতে ডিপুটি সুপারেনটেনডেন্ট পুলিশের পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে অনেক গুলি কৃতিত্ত্বের মধ্যে একটি ছিলো ১৮৯৭ ইংরেজিতে আসামের তেজপুর কারাগারের অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন। তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি প্রথমে খান সাহেব, খান বাহাদুর এবং কিংস পুলিশ মেডেল সহ অনেক গুলি পুরস্কার লাভ করেন। অবসর জীবনে তিঁনি তার শিলঘাটের সাব বাড়িতে বাকি সময় অতিবাহিত করেন। মাঝারী ধরনের উঁচু টিলার উপরে তাঁর ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, পুকুর ঘাট এবং বাড়ির সামনে প্রাচীন ঈদগাহ সবার নজর কাড়ে। উল্লেখ্য যে, তাঁর সহধর্মিনী নুরজাহান বেগমের নামে গোলাপ গঞ্জ উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নে নুরজাহানপুর নামে একটি গ্রাম আছে। খান বাহাদুর শরাফত আলীর মেয়ে জোবেদা খানম চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের অগ্রসেনানীদের একজন। তিঁনি বাংলাদেশের প্রথম মুসলিম নারী যিনি অবরোধের দেওয়াল ডিঙিয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন। একই সাথে তিঁনি ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক নেত্রী। সুতরাং নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি দেখতে পর্যটন প্রেমিরা ছুটে আসেন। ▪হযরত জাহান শাহ মৌলার মাজার : সুন্দিশাইল গ্রামের মুকাম টিলায় অবস্থিত হযরত জাহান শাহ মৌলার মাজার। মাজারটি প্রায় ২০০ ফুট উঁচু স্হানে অবস্হিত। মাজারে পাশে প্রাচীনতম জামে মসজিদটি ১৭৭০ ইংরেজিতে প্রতিষ্টিত হয় যা বতর্মানে সুন্দিশাইল মোকাম মসজিদ নামে নামকরণ করা হয়েছে। মাজার জিয়ারতের জন্য প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে লোকজন এখানে আসেন। ◆নির্বাচিত জন প্রতিনিধি বৃন্দ:- ▪এম.পি: বিশিষ্ট শিল্পপতি, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ডক্টর সৈয়দ মকবুল হোসেন ১৯৪৬ ইংরেজিতে পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের সুন্দিশাইল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিঁনি সিলেট -৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানী বাজার) আসন থেকে ১৯৮৬ ইংরেজিতে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০১ ইংরেজিতে একই আসনে পূনরায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত চেয়ারম্যান বৃন্দ▪ # মো: আনোয়ার হোসেন : পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের আমুড়া গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ৩০-০৪-১৯৭৪ ইংরেজি থেকে ২৭-০২-১৯৭৭ ইংরেজি পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। # মো: আব্দুল বাছিত: তিনি ইউনিয়নের শিলঘাট গ্রামের ঐতিহ্যবাহী আকন্দ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ২১-০৩- ১৯৭৭ ইংরেজি থেকে ০১-০৩-১৯৮৪ ইংরেজি পর্যন্ত ৯ নং পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। উল্লেখ্য যে, তাঁর পিতা আব্দুল বারি সরপঞ্চ ১৬ নং সার্কেলের ( শিলঘাট, ধারাবহর, কদম রাসুল, আমনিয়া) ১৮ বছরব্যাপী সরপঞ্চ ছিলেন। #মুক্তার আহমদ চৌধুরী : তিনি ইউনিয়নের আমুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ০১-০৩-১৯৮৪ ইংরেজি থেকে ০৩-০৮-১৯৮৮ ইংরেজি পর্যন্ত পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নর নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। # মুহি উদ্দিন আহমদ: তিনি আমুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ০৩-০৮-১৯৮৮ ইংরেজি থেকে ১০-০৫-১৯৯২ ইংরেজি পর্যন্ত পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। # মঈন উদ্দিন আহমদ : পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের ধারাবহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১০-০৫-১৯৯২ ইংরেজি থেকে ০৩-০৩-১৯৯৮ ইংরেজি পর্যন্ত উক্ত ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। # মুহি উদ্দিন আহমদ : তিনি পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের ২য় বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনির পুনরায় মেয়াদ কাল হলো ০৩-০৩-১৯৯৮ ইংরেজি থেকে ২৪-১১-২০০১ ইংরেজি পর্যন্ত। # মো:বদরুল হক: তিনি পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের শিলঘাট গ্রামের আকন্দ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৪-০১-২০০২ ইংরেজি থেকে ১৮-০৩-২০০৩ ইংরেজি পর্যন্ত পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। # রাজু আহমদ তালুকদার : তিনি পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের আমনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজু আহমদ তালুকদার উক্ত ইউনিয়নে ১৮-০৩-২০০৩ ইংরেজি থেকে ০৩–০৮-২০১১ ইংরেজি পর্যন্ত নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। # আছদ্দর আলী জালালী : তিনি পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের আমুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ০৩-০৮-২০১১ ইংরেজি থেকে ০৮-০৯-২০১৬ ইংরেজি