প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় জনতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় জনতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বিধৌত হযরত শাহমুখদুম (র.) এর পুণ্যভূমি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ ও তার চতুর্দিকের উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়নের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, নৌকার ওপর বিএনপির এত রাগ কেন? নৌকার কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে জিয়াউর রহমান মেজর থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। এরপর নৌকার ওপর তাদের (বিএনপি) এত রাগ কেন? ক্ষমতা গেলে আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না-বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির উদ্দেশে বলেন, পালায় কে? আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই-আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না। কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। পালায় আপনাদের নেতারাই। যেই নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, সেই দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত নেতা (তারেক) আজ বড় বড় কথা বলে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, বিদেশ থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল- আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম শুধু দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে। রবিবার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজশাহী সারাজীবন অবহেলার ছিল। আপনারা এখানে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীতে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে। সভামঞ্চে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই প্রায় এক হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ৩৭৬ কোটি ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রমুখ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সদর আসনের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দীন, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল প্রমুখ। এ ছাড়া সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, এমপি ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। বিএনপি নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতারা কে? বিএনপি না কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে! কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে। যে না কি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল, সেই কথা কি বিএনপি নেতাদের মনে নেই? তিনি বলেন, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া, তারেক, এমনকি খালেদা জিয়া, তারেক ও কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। ৪০ কোটি পাচারকৃত টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। তিনি বলেন, এই সংগঠন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে এক হাজার ৮০০ বাস, ৩৩টি সরকারি অফিস, লঞ্চসহ অসংখ্য মানুষকে আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সাধারণ মানুষসহ পুলিশকেও তারা নির্মমভাবে পিটিয়েছে। তারেক রহমান এতটা লুটপাট করেছে যে, বিদেশের মাটিতেও আয়েশি জীবনযাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, খালেদা জিয়া এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে নাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। দেশে আর বেকারত্ব থাকবে না। সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এ সময় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী আবারও নৌকায় ভোট চাইলে জনসমুদ্রে থাকা লাখ লাখ মানুষ দু’হাত তুলে উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় আমরা দুইবোন বেঁচে যাই। আমি জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র রুখে শুধুমাত্র দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসি। এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগ আজকে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। বিএনপি বলে ক্ষমতা গেলে পালানোর সুযোগ পাবেন না। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করেন। এ ছাড়া ত্রিশ লাখ শহীদকে স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার বাবা মানুষের জীবন সুন্দর করতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন। বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগস্টে আমার বাবাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে একাত্তরের ঘাতকরা। আমরা দুই বোনকে বিদেশে ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের যাদের বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তাদেরকে এনে ক্ষমতায় বসায় বিএনপি। এমন সময় আমি দেশে ফিরি শুধু দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। এই বিএনপি-জামায়াতের ভয়ে আমি পিছু হটিনি। আমি বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমার ছেলের বউয়ের বাচ্চা হবার সময় আমি বিদেশে ছিলাম। আমার নামে মার্ডার কেস দিয়েছিল। তবুও আমি দেশে ফিরেছি। তখন আমি বলেছিলাম, আমি দেশে ফিরে এই কেস মোকাবিলা করব। কিন্তু বিএনপি বলে আওয়ামী লীগ পালাবার পথ পাবে না। আওয়ামী লীগ কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। দুর্নীতি করে তারেক জিয়াই পালিয়েছিল। আওয়ামী লীগ পালায় না কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে জিয়া, এরশাদ বা খালেদা কেউই দেশের জন্য কাজ করেনি।