বিলেতের আয়না ডেক্স :- রাজধানী ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মীদের মামলা ও গণগ্রেফতার ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেকটা একই ধরনের অভিযোগে রাজনৈতিক মামলায় প্রায় প্রতিদিনই শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট থেকে আসা বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, তাজুল আলম, সুমন আহমদ, আলী হোসেন রানা ও সফিক মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে। গত চার থেকে পাঁচ দিনে প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচশ’ নেতাকর্মী আটক হচ্ছেন। আটককৃতদের মুক্ত করার জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করা হচ্ছে বলে বিএনপির ল’ সেল থেকে জানানো হয়েছে। তবে প্রায় সব বিএনপি নেতাকর্মীকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে এবং তাদের অনেককে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ১৭৬টি গায়েবি বা রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ল’ সেল থেকে জানানো হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে দেয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আটককৃত অধিকাংশ বিএনপি নেতাকর্মীকে আগের মামলাতে অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই এবং এফআইআরেও নাম নেই। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলায় একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। তারা জানান, গতকাল মঙ্গলবার মিরপুর, পল্টন, মতিঝিল ও ডেমরা থেকে আটক প্রায় শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আইনজীবীরা তাদের জামিন আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠান। এ ছাড়া গত সোমবার ৪২৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আটক হওয়া শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। বিএনপির ল’ সেল থেকে নিযুক্ত প্রায় ২০ থেকে ২২ জন আইনজীবী তাদের মুক্ত করার জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করছেন। যুবদলের সাবেক সভাপতিসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা : রমনা থানায় একটি নাশকতার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরবসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গতকাল মামলার হাজিরার দিন ধার্য ছিল। এই দিন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ বেশ কয়েকজন আদালতে হাজিরা দেন। অন্য দিকে সাইফুল ইসলাম নীরবসহ বাকিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের আইনজীবীরা সময়ের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশেষ আদালতে রায় শুনানিতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় বিএনপির প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মী মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়ে ও ট্রাফিক বক্স ভাঙচুর করেন তারা। এতে কিছু পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ওই দিন রমনা থানার উপ-পরিদর্শক এস এম খায়রুল বাশার বাদি হয়ে ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ দিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের নামে গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক বক্সে হামলাসহ নাশকতার অভিযোগে রমনা থানায় করা মামলা হাইকোর্টে স্থগিত আছে মর্মে আদেশ দাখিল করেছেন তার আইনজীবী। তাই মৌখিকভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেয়া হলেও তা স্থগিত থাকছে। এর আগে রমনা থানায় একটি নাশকতার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ঢাকা বিভাগে প্রায় প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ’ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং গত চার বা পাঁচ দিনে ২ হাজারের মতো বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে হাজির করলে আমাদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করছেন। তবে সবারই জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। কাউকে কাউকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই এবং এফআইআরেও নাম নেই। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলায় একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে এ পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৭৬টি গায়েবি বা রাজনৈতিক মামলা করা হয়েছে। যেগুলোর আইনগত ভিত্তি নেই। হাইকোর্টে ৪৩৮ বিএনপি নেতাকর্মীর আগাম জামিন : ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, মেহেরপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, পাবনা, বরিশাল ও নেত্রকোনা জেলায় দায়েরকৃত পৃথক রাজনৈতিক মামলায় ৪৩৮ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো: বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলাম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিএনপি নেতাকর্মীরা হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত প্রত্যেককে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময়ের পর তাদেরকে নিজ নিজ দায়রা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মো: কামাল হোসেন, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, সগীর হোসেন লিওন, মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ। তাদেরকে সহায়তা করেন আইনজীবী সানজিদ সিদ্দিকী, সালমা সুলতানা, গোলাম আক্তার জাকির, মো: মাকসুদ উল্লাহ, সাগর হোসেন, সাইদুর রহমান মাইনুল, কে আর খান পাঠান, আকতার হোসেন, মো: আব্দুল কাইয়ুম, আনিসুর রহমান রায়হান, রুকনুজ্জামান সুজা, নুরে আলম সিদ্দিকী, শামসুল ইসলাম মুকুল, উজ্জ্বল হোসেন, কনক রাসেল প্রমুখ। এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা প্রত্যেকটা মামলা মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব মামলার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। আমরা আদালতে বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষে আগাম জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন দেন। বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ২৮৫ : এ দিকে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ২৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ থেকে গতকাল সন্ধ্যায় ২৮৫ জনকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া পুলিশের বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে ২৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত সোমবার ২৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যশোরে বিএনপি-জামায়াতের আরো ১২ নেতাকর্মী আটক যশোর অফিস জানায়, নাশকতা মামলায় যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আরো ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের মধ্যে রয়েছে কোতোয়ালি থানার মামলায় তিনজন, বাঘারপাড়ায় তিনজন, মণিরামপুর থানায় পাঁচজন ও অভয়নগরে একজন। আদালত সূত্র জানায়, কোতোয়ালি থানায় আটকরা হলেন- চাঁচড়া পূর্বপাড়ার শফিউর রহমানের ছেলে আসাদুজ্জামান আশা, ইছালী যোগীপাড়ার মৃত আফসারের ছেলে জসিম উদ্দীন ও ঘুরুলিয়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে আক্কাস আলী। বাঘারপাড়ায় আটকরা হলেন- ভদ্রডাঙ্গা গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে বোরহান উদ্দীন, করিমপুরের আব্বাস আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ও বরভাগ গ্রামের তফেল উদ্দিনের ছেলে শফি উদ্দিন। মণিরামপুর থানায় আটকরা হলেন- চান্দুয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম, মণিরামপুরের ঝাঁপা গ্রামের মাহাবুবুর রহমান, একই গ্রামের মশিয়ার রহমান ও দুর্গাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস ও অভয়নগর উপজেলার