জাতীয়

টাংগাইল মধুপুরে খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী নারীর

বিলেতের আয়না ডেক্স :- জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল টাংগাইল মধুপুরে খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী নারীর টাঙ্গাইলের মধুপুরে অর্ধশত হতদরিদ্র নারী সংসারের কাজের পাশাপাশি খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর, মালির বাজার, ভুটিয়া, ভবানীটেকী, গ্রামের অনেক বাড়িতেই নারীরা খরগোশ পালন করছেন। খরগোশ পালনে লাভের মুখ দেখছেন বেশির ভাগ নারী। এতে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন উদ্যমী প্রান্তিক নারীরা। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে ব্যাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উল্লেখিত গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আনারস, পেঁপে, আদা, হলুদ, কচু, সরিষা, ধান, পাট, আলু, কলা, সবজি এই গ্রামের মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল। এক সময় এই গ্রামের নারীরা হাঁস-মুরগি এবং গরু-ছাগল পালন করতেন। এখন এসবের পাশাপাশি খরগোশ পালনে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। পিরোজপুর গ্রামের প্রায় নারীরাই রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫-২০টি করে খরগোশ।খরগোশ চাষি নারীরা জানান, প্রতিটি মা খরগোশ ৪-৮টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। বাড়িতে পাইকাররা এসে নগদ দামে কিনে নেন। নারীরা সকালে নিজেদের বাড়ির কাজ শেষে মাঠে গিয়ে ঘাস কেটে এনে খরগোশদের খাবার দেন। খরগোশ পালনের জন্য আলাদা ঘর প্রয়োজন। এ জন্য কাঠের ফালি দিয়ে বাক্স বানিয়ে তিনদিকে কাঠের বেড়া দিতে হয়। সামনের দিকে জালের নেট দিয়ে দরজা বানিয়ে খরগোশ পালন করা হয়। এতে সামনের দিক দিয়ে আলো-বাতাস ঢুকে ও ময়লা পরিষ্কার করতে সহজ হয়। দিনে তিনবার খাবার দিতে হয়। রাতের বেলায় খাবার না দিলেও চলে। এই খরগোশ থাকার ঘর বা টং পরিষ্কার করতে হয় প্রতিদিন। খরগোসের খাবারের মধ্যে ঘাস অন্যতম। ঘাসের পাশাপাশি ভাত ও ধানের কুড়া মিশিয়ে খাবার দিতে হয়। ছোট বাচ্চাগুলোকে আলাদা রাখতে হয়। যাতে বড় খরগোশের চাপে বা আঘাতে না মারা যায়।প্রথমদিকে বাচ্চাদের প্রতিদিন ৪-৫ বার দুধ খাওয়াতে হয়। বাচ্চা দেখতে অনেকটাই ইঁদুরের মতো। ২০-২৫ দিনের মধ্যে বাচ্চা বিক্রি করা যায়। প্রতিটি বাচ্চা পাইকারী ৮০ -১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। শীতকালে দাম কিছুটা কম থাকে।খরগোশ পালনকারী কয়েকজন নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পিরোজপুর গ্রামের আজিরন বেগম বর্তমানে ১৫টি বড় খরগোশ পালন করছেন। প্রতি মাসে তিনি ১৫-২০টি করে বাচ্চা বিক্রি করেন। এতে তার প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়। আর এই আয় দিয়ে তিনি তার কাপড়, নাতি-নাতিনদের পড়াশোনার খরচ চালান। এখন তার আর বাড়তি অর্থের জন্য চিন্তা করতে হয় না। মালির বাজারের নুরজাহান বেগমের (৫৫) রয়েছে ১৬টি বড় মা খরগোশ। প্রতি মাসে খরগোশ বিক্রি করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আসে তার। নিজের খরচ মিটানোর পাশাপাশি সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় না। ফরিদা বেগম (৪০) খরগোশ পালন করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। বাড়িতে থাকার ঘর দিয়েছেন। স্বামীকে প্রতি মাসে ৩-৪ হাজার টাকা করে সাহায্য করেন। এভাবে শুধু আজিরন, নাজমা, নুরজাহান , ফরিদাই নন, ঐসব গ্রামের অর্ধশত নারী এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে পাইকার কম থাকার কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা অথবা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরও এগিয়ে যেতে পারবেন- এমনটাই জানালেন ঐসকল গ্রামের নারীরা।