বিশ্বে জনসংখ্যা ৮০০ কোটি, অষ্টম বাংলাদেশ।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- বিশ্বে জনসংখ্যা ৮০০ কোটি, অষ্টম বাংলাদেশ। পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ছাড়িয়েছে। জনসংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় বেলা ২টার দিকে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ছাড়ায়। পরিসংখ্যাবিষয়ক ওয়েবসাইটটির তথ্য অনুযায়ী, বিকাল ৩টার দিকে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল ৮০০ কোটি ৮ হাজার জন। ১৬ কোটি ৮৬ লাখ ৬১ হাজার ৯২৩ জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টমে। তালিকায় শীর্ষে চীন। সেখানে মোট জনসংখ্যা ১৪৫ কোটি ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬০ জন। চীনের পর যথাক্রমে রয়েছে ভারত (১৪১ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ১২০), যুক্তরাষ্ট্র (৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৪ হাজার ৩৭১), ইন্দোনেশিয়া (২৮ কোটি ৫ লাখ ৩৭ হাজার ১৪৮), পাকিস্তান (২৩ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৪০০), নাইজেরিয়া (২১ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৭) ও ব্রাজিল (২১ কোটি ৬১ লাখ ৯১ হাজার ৭৭৪)। এ ছাড়াও নবম ও দশম অবস্থানে রাশিয়া (১৪ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার ৪২৬) ও মেক্সিকো (১৩ কোটি ২২ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৪)। বর্তমানে উচ্চ জন্ম ও মৃত্যুহার থেকে নিম্ন জন্ম ও মৃত্যুহারে ধাবিত হচ্ছে বিশ্ব। পরিবার পরিকল্পনা, ধারাবাহিকভাবে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্যের উন্নতি, পুষ্টি, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, ওষুধ, সচেতনতা, শিক্ষার হারসহ নানা ক্ষেত্র এমন পরিস্থিতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও কিছু কিছু দেশে উচ্চ ও একই ধরনের প্রজননহার এখনো বিদ্যমান। উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৮০৪ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১ বিলিয়ন। ১ বিলিয়ন থেকে ২ বিলিয়নে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১২৩ বছর। ১৯৫০ সালে ছিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন, যা দ্বিগুণে পৌঁছায় ১৯৮৭ সালে ৫ বিলিয়নে। তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার ছিল। ২০১০ সালের ৭ বিলিয়ন জনসংখ্যা ৮ বিলিয়নে সময় নিয়েছে মাত্র ১২ বছর। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াদি-সংক্রান্ত জনসংখ্যা বিভাগের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা ২০২২’ অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যা এখন থেকে ১৫ বছর পর ২০৩৭ সালে হবে ৯ বিলিয়ন, যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাসের প্রবণতা লক্ষ করা যাবে। বাংলাদেশের অবস্থান : বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হলেও ২০৫০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে দশম, বিশ্বের জনসংখ্যার বিচারে যা প্রায় ২ দশমিক ২ শতাংশ। জনসংখ্যার আকার মোটেও কম নয়। দেশের জনঘনত্বের বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাধিক জনঘনত্বের একটি দেশ। বর্তমানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ১ হাজার ৩১৫ জনেরও বেশি, যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটি ২০৫০ সালে হবে ১ হাজার ৫৬৬ জন। জনঘনত্বের সঙ্গে গুণগত জীবনের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে যেকোনো পরিকল্পনায় উচ্চ জনঘনত্বের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামের মতে, জনসংখ্যা ও উন্নয়নবিষয়ক যুগান্তকারী এ সম্মেলনের ২৫ বছর পূর্তিতে ২০১৯ সালের নভেম্বরে নাইরোবিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব প্রতিশ্রুতি ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনকালের মধ্যেই তিন শূন্য লক্ষ্যমাত্রা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে। এগুলো হলো : শূন্য মাতৃ মৃত্যুহার, পরিবার-পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপূর্ণ চাহিদা শূন্যতে আনা এবং যৌন ও জেন্ডারভিত্তিক নির্যাতন দূরীকরণ ও বাল্যবিবাহ শূন্যতে নিয়ে আসা। অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার উন্নয়নে রয়েছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। করোনা মহামারির আগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, অনূর্ধ্ব-৫ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুহার, মোট প্রজননহার হ্রাস, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বৃদ্ধি ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেলেও এসব অগ্রগতির পাশাপাশি মহামারি-উত্তর নতুন ও উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ কিংবা অসম উন্নয়নও লক্ষণীয়। সর্বাধিক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী নিয়ে প্রথম জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনের সুযোগের সময় অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। যুবগোষ্ঠী ও দ্রুত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। এখানে বেকারত্বের হারে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি, বরং বেড়েছে। দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরজীবনে উদ্ভূত হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। জলবায়ুর পরিবর্তন বা পরিবেশগত (প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন, বন্যাসহ) বিভিন্ন কারণে শহরে স্থানান্তরিত হচ্ছে মানুষ।