বিলেতের আয়না ডেক্স :- সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা সাংঘর্ষিক : আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর আমাদের সংবিধান দিয়ে গেছেন। তার সংবিধানের মূলনীতি আজকে সেভাবে নেই। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা পরস্পর সাংঘর্ষিক। অন্যান্য সব জায়গায় সংবিধান আগের জায়গায় ফেরত এসেছে, এই একটি জায়গায় আসেনি। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বঙ্গবন্ধুর সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করুন’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ৫১তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই সভাটি আয়োজন করে। মন্ত্রী বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সাম্প্রদায়িক প্রায় ৩০ বছর শক্তি দেশ শাসন করেছে। এরফলে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলামের রাজনীতিকরণ হয়েছে। শুধু সংবিধান পরিবর্তন করলেই হবে না, আমাদের চিন্তা চেতনাও কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের সংবিধান আধুনিক ও যুগোপযোগী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া ও তার সহযোগীরা সংবিধানকে পাকিস্তানিকরণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর আমানত দুই জেনারেল খেয়ানত করেছে। এখন সময় এসেছে মূল সংবিধানে ফেরত যাওয়ার। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, জিয়াউর রহমান থেকে খালেদা জিয়া পর্যন্ত যত কাজ হয়েছে সব সংবিধানবিরোধী। এর মধ্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ একটি। এরশাদের আমলে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে সংবিধানের পুরো চরিত্রই বদলে দেওয়া হয়েছে। সংবিধান প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিন্তু আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তিনি সংবিধান সম্পর্কে মানুষকে জানানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এর একটি সহজপাঠ দরকার। মানুষ অন্তত তার মৌলিক অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবে। এ সময় তিনি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, আমরা বিবৃতি দিয়ে বলেছি এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সাংবিধানিক প্রক্রিয়াতে বন্ধ করা উচিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিবৃত দেয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের মূল বিষয় হচ্ছে দুর্দিনে যারা সঙ্গে থাকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে তাদের সঙ্গে নেয় না। সঙ্গে নেয় তাদেরকে যারা দুর্দিনে পাশে থাকে না। শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, সংবিধানে সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্ক আছে। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা চারু ও কারুকলা পড়তে চায় না। বলে গুনাহ হবে। ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা সমাজে ঢুকে গেছে। আমরা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি কিন্তু মনের দিক থেকে অনেক অনেক নিচে চলে যাচ্ছি। সমাজকর্মী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে হবে। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আমরা সকলে চাই এখানে সাম্প্রদায়িকতার বীজ যেন না আসে। আলোচনাসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও মানবাধিকারকর্মী কাজী রিয়াজুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. মোখলেসুর রহমান বাদল। সভাটি পরিচালনা করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর।