বিলেতের আয়না ডেক্স :- বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়া কে আবার জেলে পাঠানো হবে -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের চিন্তা হচ্ছে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভার শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। খবর বাসসের। জেলহত্যা দিবসের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে হত্যা করে খুনিরা থেমে যায়নি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতাকে হত্যা করেছে তারা। খুনি মোশতাক-জিয়াই তাদের হত্যা করে। তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর চার নেতাকে হত্যার পর মানুষ বুঝে ফেলেছিল এটা বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র। জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে হত্যাকারীদের লিবিয়ায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারপ্রধান বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্ত্র নিয়ে ঢোকা যায় না। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। গণভবন থেকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই যেন ঢুকতে দেওয়া হয়। জেলার তাদের ঢুকতে না দিলে তাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, মিটিংয়ের কথা বলে তারা ঢুকতে চায়। কিন্তু তাদের সঙ্গে অস্ত্র ছিল। জিয়া এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলেই মোশতাক যখন রাষ্ট্রপতি হলো, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েই জিয়াউর রহমানকে বানাল সেনাপ্রধান। কাজেই মোশতাকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে জিয়ার হাতে সব ক্ষমতা চলে এলো। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের বিএনপির হামলার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০টি সরকারি অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে। ছয়টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে। যখন ভূমি অফিস জ্বালাল, আমি নির্দেশ দিলাম, যেখানে অফিস জ্বালিয়েছে, সেখানে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে তাদের ভূমির পর্চা না দেওয়ার জন্য। ওই ভূমি সব সরকারি খাতে চলে যাবে। তারপর তারা থেমেছে। যেমন কুকুর, তেমন মুগুর না হলে সোজা হয় না। বিএনপির আমলের অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরার জন্য বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিএনপির সাম্প্রতিক আন্দোলনকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, মানবিক কারণে সাজা স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে তারা যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে তাকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ। তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছে, আবেদন করেছে। আমরা তার সাজা স্থগিত করে বাড়ি থাকার সুযোগটা দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি। কিন্তু বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দেব। কোনো চিন্তা করবেন না। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছরের জেলের বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দিন আহমেদ ও সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ বিএনপির প্রিয় লোক ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দেওয়া মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছিল। বিএনপি-জোট সরকারের আমলের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা তো এর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা আইনগতভাবে অপরাধীদের বিচার করেছি। আজ তাদের কী অবস্থা? আজ দেখি গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। যে দলের জন্ম সেনা শাসকের পকেট থেকে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা যাদের জন্ম, তারা আবার গণতন্ত্র উদ্ধার কী করবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। বিএনপির গণতন্ত্রের কথা শুনে কিছু লোক তাদের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় থাকে? তারা কি বাস্তবটা বুঝতে পারে না? আর নেতৃত্ব কোথায়? বিএনপি লাফালাফি করছে, তাদের নেতা কই? বিএনপি সরকারের আমলে বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে তার চিত্র তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, হাওয়া ভবনে হাওয়া না দিলে কেউ কাজ করতে পারবে না। এক দফা হাওয়া ভবনে দিতে হবে। আরেক দফা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার কাছে। আবার তার নিজস্ব একজন আলু-ফালু ছিল। তারেক জিয়ার ছিল মামুন, কোকো, আরো কারা ছিল। এক/এগারোর সময়ে তারেক জিয়া রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে চলে যায় বলে উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সেই যে বিদেশে গেছে, বিদেশেই। স্মরণ সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জি. মোশারফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন মায়া বীর বিক্রম, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।