রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানিয়ে তারা আরও এক সপ্তাহ শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিলেতের আয়না ডেক্স :- রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানিয়ে তারা আরও এক সপ্তাহ শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃটেনের রাজপরিবার এক সপ্তাহের শোক প্রকাশ এবং অনেক অজানা তথ্য। অজানা শোকগ্রস্ত বৃটিশ রাজপরিবার। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানিয়ে তারা আরও এক সপ্তাহ শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি এই এক সপ্তাহ কোনো সরকারি দায়িত্ব পালন করবে না রাজপরিবার। সেইন্ট জর্জেস চ্যাপেলে প্রাইভেট পারিবারিক অনুষ্ঠানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে ১৯শে সেপ্টেম্বর সমাহিত করেছেন রাজপরিবারের সদস্যরা। এদিনটি ছিল বৃটেন এবং কমনওয়েলথভুক্ত, তথা সারা পৃথিবীর কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। রাষ্ট্রীয় বিরল সম্মান জানানোর পর রানীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় উইন্ডসর ক্যাসেলে। এরই মধ্যে সেইন্ট জর্জেস চ্যাপেল। এর আগে সেখানে সমাহিত করা হয়েছে রানীর স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, নিজের পিতা, মাতা ও বোন প্রিন্সেস মার্গারিটাকে। তাদের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে এলিজাবেথকে। তার আগে কফিনের ওপর থেকে সরিয়ে নেয়া হয় রাজমুকুট, গোলকবিশেষ এবং রাজদণ্ড। ওদিকে সোমবার দিবাগত রাতে বাকিংহাম রাজপ্রাসাদ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে রানী এলিজাবেথের বিরল দুটি ছবি। এ ছবি দুটি এর আগে প্রকাশ করা হয়নি। এতে স্বামী, পিতা, মা, বোনের সঙ্গে রানীকে দেখা যায় হাস্যোজ্বল। কমপক্ষে ৭০ বছর সিংহাসনে আসীন থাকা অবস্থায় মারা যান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাকে শেষ বিদায় জানাতে সোমবার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে উপস্থিত হন পরিবারের সদস্যরা, বিশ্বনেতারা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষ। সেখানে নজরকাড়া বিদায় জানানোর পর রানীর শব বহনকারী যান ছুটে চলে উইন্ডসর ক্যাসেলের উদ্দেশে। সেখানে কবরের ভিতরে ব্যক্তিগতভাবে নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস তার মা ও রানীর মৃতদেহ শায়িত করেন। একজন রাজা ও নিজের সন্তানের হাত দিয়ে সমাহিত হলেন রানী। এ সময় রাজপরিবারের কিছু সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন। চিরদিনের জন্য রানীকে সমাহিত করে ফিরে আসতে হয় তাদের। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের বিস্তারিত গোপন রাখা হয়েছে। বাইরের দুনিয়ার কেউই জানেন না সেখানে কি দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। কারণ, ওই সমাহিতকরণ অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা শুধু রাজ পরিবারের সিনিয়ররা। এমনকি জানা যায়নি সেখানে কি শুধু রাজা চার্লস এবং তার ভাইবোনই উপস্থিত ছিলেন, নাকি এ অনুষ্ঠানে রানীর নাতি প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্স হ্যারি ও অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন। রানীকে সমাহিত করে রাজপরিবার থেকে তার সম্মানে একটি বিবৃতি দেয়। যার শিরোনাম- ‘ইন লাভিং মেমোরি অব হার ম্যাজেস্টি দ্য কুইন’। একই সঙ্গে প্রকাশ করা হয় রানীর প্রিয় স্কটল্যান্ডে ধারণ করা একটি ছবি। আরেকটি ছবি প্রকাশ করা হয় বাকিংহাম প্যালেসে ধারণ করা। এতে পিতামাতা, বোন ও স্বামী ফিলিপের সঙ্গে রানীকে হাস্যোজ্বল দেখা যায়। রয়েল ফ্যামিলির সামাজিক যোগাযোগ বিষয়ক একাউন্টে হৃদয় নিঙড়ানো পোস্ট দেয়া হয়। এতে যোগ করা হয়েছে রাজা হিসেবে তৃতীয় চার্লসের জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণ। এতে রাজা উদ্ধৃত করেছেন অমর সাহিত্যিক শেক্সপিয়রের অমর নাটক হ্যামলেট থেকে- ‘মে ফ্লাইটস অব অ্যাঞ্জেলস সিং দি টু দাই রেস্ট’। ওদিকে রানী এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর ৯ই সেপ্টেম্বর রাজা চার্লস ঘোষণা দিয়েছিলেন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সাতদিন পর্যন্ত শোক জানানো হবে। তা শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার। এর অর্থ হলো, এর আগে কোনো রকম সরকারি দায়িত্ব পালন করবে না রাজপরিবার। তারপরই নিজেদের সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হতে যতটা দ্রুত সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে যাওয়ার কথা প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান মার্কেলের। সোমবার রানীকে বিদায়ের অনুষ্ঠান বিশ্বজুড়ে দেখেছেন প্রায় ৪১০ কোটি মানুষ। আর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে ঐতিহাসিক স্টেট ফিউনারেল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন রাজা, রানী, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা। ছিলেন সাধারণ জনতা। সেখান থেকে উইন্ডসর ক্যাসেলে কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দু’পাশে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকা জনতা মাথা নুয়ে, ফুল ছিটিয়ে শ্রদ্ধা জানান রানীকে। অনেককে দেখা যায় হাউমাউ করে কাঁদছেন। আর রাজপরিবার! তারা নিজেদের কান্না কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, সে এক বিস্ময়। অনেককে দেখা গেছে মুখে কথা নেই। মুখ বন্ধ। মুখ খুলতে গেলেই ভিতরের কান্না বেরিয়ে আসবে বাইরে। এত ভালবাসা নিয়ে এখন চিরশান্তির ঘুমের দেশে রানী। রেখে গেছেন এক বিস্ময়কর লিগ্যাসি। মানুষের অন্তরে তার স্থান।