দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ভাষন দিয়েছেন।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ভাষন দিয়েছেন।

গণতন্ত্র আরও সুদৃঢ় জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতি সাধন করতে না পারে, সেদিকেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সব গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করে জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হবে।  স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরুতে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন।
এক্ষেত্রে তিনি সরকারকেও সংযত আচরণ করার উপদেশ দিয়ে বলেন, উন্নয়নের এ চলমান গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতি দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে জোর তাগিদ দেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সফলভাবে নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক শক্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই, জনগণের রায় মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সংবিধান অনুযায়ী নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে  মো. সাহাবুদ্দিনের এটি ছিল জাতীয় সংসদে দেওয়া প্রথম ভাষণ। মো. সাহাবুদ্দিন গত বছর ২৪ এপ্রিল দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর ১৪৩ পৃষ্ঠার ভাষণের সংক্ষিপ্তসার সংসদে পাঠ করে শোনান। তাঁর পূর্ণাঙ্গ ভাষণটি জাতীয় সংসদে পঠিত হিসেবে গণ্য হবে বলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উল্লেখ করেন।
নির্বাচন বর্জনকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের শান্ত-স্নিগ্ধ যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের গণতন্ত্রবিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখলেও গণতন্ত্রের শাণিত চেতনা ভোটারদের ভোটদান  থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সকল পদক্ষেপ সার্থক হয়েছে। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। সরকারও এ ক্ষেত্রে সংযত আচরণ করবে-এটাই সকলের প্রত্যাশা। দেশের উন্নয়নের এ গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। আমাদের পরম কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে এই দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করা। যে জাতি গণতন্ত্রের জন্য রাজপথ রঞ্জিত করে, অসীম ধৈর্যে অতিক্রম করে বন্ধুর পথ, সেই অমিত সম্ভাবনাময় জাতি নিশ্চয়ই পারবে সকল বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। আমি আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা গড়ে তুলতে পারব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,  ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী দেশে যে নৃশংস সহিংসতা হয়েছিল তা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এর মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনসহ পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সুস্পষ্ট ও কঠোর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সহিংসতার পুনরাবৃত্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নিষ্কণ্টক পথচলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো উদার ও গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে বিভিন্ন ধরনের দেশি ও বিদেশী ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী এবং গণমাধ্যমকে এ বিরাট কর্মযজ্ঞে সহায়তা দেওয়ার জন্য জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সকল ভোটার, বিশেষত নবীন ও মহিলা ভোটারদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন।
দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য দেশবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন,  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে গত দেড় দশকে আর্থসামাজিক খাতসহ সকল খাতে অভূতপূর্ব এ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এর জন্য সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ হতে আমি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে, উন্নয়নের মূল ভিত্তি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা। গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। গত দেড় দশকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বজায় থাকার কারণে দেশের এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
উন্নয়ন স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত, তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। উন্নয়নের এ গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনা বাংলা গড়তে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। ভবিষ্যতে হয়তো অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
একইসঙ্গে, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সকল গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে  বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে এর প্রভাব আমাদের ওপরও পড়বে। এ জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কৃষি খাতের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে, উচ্চ-মূল্য ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানি নিশ্চিত করার জন্য উন্নত  কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্যসমূহ রপ্তানি বাজারে যাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় সে লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ   তৈরির পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান করতে হবে যাতে দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি সম্ভব হয়। আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, মত-পথের ভিন্নতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে কোনো মতদ্বৈততা জনগণ প্রত্যাশা করে না। তাই সংসদকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে সকলের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানাই।
নবীন-প্রবীণ সংসদ সদস্যেদের উদ্দেশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঐতিহাসিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের আজ উদ্বোধনী দিন। জাতীয় সংসদ আমাদের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূলভিত্তি। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত মহান এ প্রতিষ্ঠানটি জনগণের সকল প্রত্যাশার ধারক ও বাহক।
তাদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের কল্যাণে জাতীয় সংসদ যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। সংসদ-সদস্যগণ সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জনগণ অনেক আশা নিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে যাতে তাদের চাওয়া-পাওয়া আপনারা সংসদে তুলে ধরেন। এটাই সংসদ-সদস্য হিসেবে আপনাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য।
নবীন এমপিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে অনেক সংসদ-সদস্য প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে বয়সে নবীন। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি এবং সংশ্লিষ্ট রীতি-নীতি আয়ত্ত করে তারা দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবেন এটি তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের অভিজ্ঞ সংসদ-সদস্যগণ তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে নবীন সংসদ-সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, গত দেড় দশকের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার ফলে দেশ উন্নতি ও অগ্রগতির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনকল্যাণে গৃহীত সরকারি নীতিসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে উন্নয়নের এ ধারাকে এগিয়ে নেওয়া। গত দেড় দশকে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য আরো উন্নয়ন প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে আমাদের তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেধা ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত স্বল্পমেয়াদি (২০২৫ সাল), মধ্যমেয়াদি (২০৩১ সাল) এবং দীর্ঘমেয়াদি (২০৪১ সাল) কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন নবগঠিত মন্ত্রিসভাকে নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজের সকল নাগরিকের আশা-আকাক্সক্ষা, বিভিন্ন গোষ্ঠী, দল ও সংগঠনের চাওয়া-পাওয়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমন্বয়সাধন করতে হয় জাতীয় সংসদকে। আমাদের সংসদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ- আইন প্রণয়ণ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিসমূহে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার জন্য আমি সংসদ-সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা অতিমারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশসমূহ এবং রাশিয়ার মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন ধরনের অবরোধ আরোপের ফলে খাদ্য, জ্বালানিসহ বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আমাদের দেশেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে যার প্রভাব জনজীবনে পড়েছে। সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতকরণের চেষ্টা করেছে।
এ কার্যক্রমসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে  এক কোটি স্বল্প আয়ের পরিবারকে ভর্তুকিমূল্যে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চাল বিক্রয়। পাশাপাশি ওএমএস কর্মসূচিতে দরিদ্র ও নিম্নআয়ভুক্ত মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল ও  আটা বিক্রয় করা হচ্ছে।  নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য নিয়মিত বাজার পরিবীক্ষণ করা হচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত দেড় দশকে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর ভাষণে বলেন, গত দেড় দশকে যোগাযোগ খাতে  বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আইকনিক পদ্মা সেতু, পায়রা সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা, দ্বিতীয় গোমতী প্রভৃতি অসংখ্য সেতসহ সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পাকা মহাসড়কের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি করে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়কের পরিমাণ ৭৬ গুণ বৃদ্ধি করে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে জনগণের চলাচল সহজ ও নিরাপদ করতে এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হয়েছে এবং কমলাপুর অংশের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং করেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন কৃষিবান্ধব নীতির কারণে উৎপাদনশীলতা ৃৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশে বর্তমান বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪ শত ৯২ লক্ষ মেট্রিক টন। এর ফলে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ ধান, সবজি, ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং ইলিশ আহরণে প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য মর্যাদাপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের অধিকাংশ স্থাপনার নির্মাণকাজ এবং পরমাণু জ্বালানি হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, এ বছর এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
তবে গত দেড় দশকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ প্রায় ২৫টির অধিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি আমরা। পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তপূর্বক বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮ক অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।
দেশের পরিবেশ দূষণ ও সংরক্ষণে নানাবিধ আইন, নীতি, বিধিমালা ও নির্দেশিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্লান- ২০২২-২০৪১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের তিপ্পান্ন বছরের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন। এর সুফল ভোগ করছে দেশের ১৭ কোটি জনগণ। বর্তমানে দেশের মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় উনিশ দশমিক শূন্য আট কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় তের দশমিক এক চার কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
দেশের টেলিডেনসিটি প্রায় ১০৮ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি প্রায় ৭৫ শতাংশ। বর্তমানে আইসিটি রপ্তানির পরিমাণ এক দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে এসেছে। যা পূর্বে ২৭ হাজার টাকা ছিল, বর্তমানে ২৫০ টাকারও নিচে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, প্রশাসন, উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, আইসিটি শিল্পসহ প্রায় সব খাতে সমানভাবে উন্নতি হয়েছে। বিগত বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাফল্যের স্বীকৃতস্বরূপ বাংলাদেশ ভূষিত হয়েছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে।

আরও পড়ুন:  দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন মনোনয়নপ্রত্যাশী সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৬২৪জন। সর্বনিম্ন সিলেটে ১৫০ জন।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top