বিলেতের আয়না ডেক্স :- মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি
আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৪জলদস্যু আটক-র্যাবের হাতে
সম্প্রতি বরগুনার পাথরঘাটার গভীর বঙ্গোপসাগরের বয়া নামক এলাকায় দুর্ধর্ষ জলদস্যুদের আক্রমনে ৯জন জেলে নিখোঁজের ঘটনার সংশ্লিষ্টতায় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বোট জব্দপূর্বক ৪জন কুখ্যাত জলদস্যুকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাব।
২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত হতেই র্যাব-৭ ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার যৌথ আভিযানে বাশখালী উপজেলার গন্ডামারা, বড়ঘোনা,বাংলাবাজার, শৈলকুপা সহ তৎসংলগ্ন এলাকায় জলদস্যুতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আসামী ১। মোঃ কাইছার @কালু (২৫) ২। মোঃ জাহিদ (২৫)৩। মোঃ সেলিম (৪০) ০৪। মোঃ ইকবাল হোসেন (১৫), দের আটক করতে সক্ষম হয়।
র্যাব সূত্রে জানা যায়,(১৭ফেব্রুয়ারি) বরগুনা জেলা মৎস্যজীবীর ১৮ জন জেলে একটি ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার পথে ঐদিন দিবাগত রাতে পাথরঘাটা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ২৫-৩০ জনের একটি জলদস্যুবাহী দ্রুতগামী ট্রলার উক্ত ট্রলারের পিছনে ধাক্কা দেয় ও ফাঁকা গুলি করে। তখন ট্রলারে থাকা জেলেরা চিৎকার করলে জলদস্যুরা ট্রলারে উঠে ট্রলারের থাকা ১৮ জন জেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে ৯ জন জেলে গভীর সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হন। অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা জলদস্যুদের হামলায় আহত ৯ জন জেলেকে উদ্ধার করে শনিবার সন্ধ্যায় পাথরঘাটায় নিয়ে আসে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজন’কে শনিবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং বাকিদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ বরগুনার ৯ জন জেলের মধ্যে ৪ জনকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয় এবং দুপুরে তাদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একজনের মৃত্যূ হয়। অদ্যবধি ০৫ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। উল্লেখিত ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উপরে উল্লেখিত নির্মম ঘটনার সাথে জড়িত জলদস্যু ও ডাকাত দলকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব-৭, র্যাব-৮, র্যাব-১৫ এবং র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে একটি বিশেষ সংবাদের মাধ্যমে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বোটে দস্যুতার সাথে সম্পর্কিত একটি ডাকাত দল চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের আটক করা হয়।
আটককৃত আসামী মোঃ কাইছার @কালু এর কাছ থেকে বরগুনার বোট হতে ডাকাতিকৃত ১টি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। পরবর্তীতে উক্ত মোবাইল ফোনটি তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় উদ্ধারকৃত মোবাইলটি আব্দুল করিম নামক দস্যুতার কবলে পরা ভিকটিম জেলের। আটককৃত আসামীগণকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায় দস্যুতার সময় কালু এবং জাহিদ সরাসরি বোটে উপস্থিত থেকে দস্যুতায় অংশগ্রহণ করে এবং আটককৃত সেলিম @ডাকাত সেলিম যিনি ডাকাত দলের বোটের মালিক এবং তার বোট ব্যবহার করেই ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা আনুমানিক ১০ফেব্রুয়ারি বোট নিয়ে সমুদ্রে গমণ করে এবং কক্সবাজার কুতুবদিয়া চ্যানেল এলাকায় ০১ টি ডাকাতি সংঘটিত করে এবং পরবর্তীতে পুনরায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে বরগুনা- পটুয়াখালি চ্যানেলের দিকে গমন করে ২য় ডাকাতিটি সংঘটিত করে। আটককৃত আসামীগণকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জলদস্যুতার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে
এবং আসামীগণের নিজহাতে দেখিয়ে দেওয়া স্থান হতে ৪টি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ,২টি হাতুড়ি,৩টি দা, ১টি কিরিচ,২টি শাবল,জাল এবং দস্যুতাবৃত্তিতে ব্যবহৃত বোট ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দস্যুদের জিজ্ঞাসাবাদের চাঞ্চল্যকর ধারাবাহিক বিবরণে তথ্যাবলী পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ কাইছার @কালু (২৫) এর ভাষ্যমতে তারা গত এক মাসে দুটি ডাকাতি করেছে। এছাড়াও পূর্বের অনেক ডাকাতির সাথে তারা সম্পৃক্ত ছিল। ডাকাতি শেষে তারা কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া, খুরুশখালী ফিশারীঘাটে ডাকাতির সরঞ্জামাদি নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন আড়তদারদের নিকট বিক্রয় করত।
গ্রেফতারকৃত জলদস্যূদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পূর্বে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী,পেকুয়া, মগনামা, এবং কুতুবদিয়া এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি করত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক তৎপরতার কারনে তারা বর্তমানে এই এলাকা ছেড়ে বরিশাল,বরগুনা এবং খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থান করে ডাকাতি কার্যক্রম শুরু করেছে। আরো জানা যায় যে,তারা বরিশাল,বরগুনা এবং খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি করে উক্ত ডাকাতির মালামাল কক্সবাজার নিয়ে বিক্রয় করত বলে নিজ মুখে স্বীকার করে। এছাড়াও তাদেরকে উপরে উল্লেখিত ডাকাতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ১৮ জন জেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম, ৯ জন জেলে নিখোঁজ এবং প্রায় ২০ লাখ টাকার রসদ সামগ্রী লুটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো বলে অকপটে স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত ০১নং আসামী মোঃ কাইছার @কালু (২৫) এর নামে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় ০২টি চুরির মামলা রয়েছে যে মামলায় সে অভিযুক্ত। এছাড়া ধৃত আসামী মোঃ সেলিম (৪০) এর নামে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় ০৫টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ০১টি অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা এবং বাকি ০৪টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মামলা পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।