বিলেতের আয়না ডেক্স :- গাজীপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বই উৎসব সারা দেশে এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে’।
নতুন বছরের প্রথম দিন সারা দেশে একযোগে বই উৎসব পালিত হয়েছে। এটা সারা পৃথিবীতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যেখানে দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থী বই উৎসবে যোগ দিয়ে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এই বই উৎসব সম্ভব হয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কারণেই, আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে কৃতজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এমপি।
গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কেন্দ্রীয় বই উৎসবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা ৪৩৪ কোটি ৪৫ লক্ষ ৮০ হাজার ২১১ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এটা পৃথিবীর যে কোন দেশের জন্য অচিন্তনীয় ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বই উৎসবের কাজটি সফলতার সাথে করে চলেছি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার যেমন আমরা রোধ করতে পেরেছি তেমনি বাবা মায়েদের উপরও বই কেনার ভার আর থাকছে না। নতুন বই একেবারে প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়ে যখন বাড়ি ফিরে যায় এটা দেখে আমাদেরও ইর্ষা হয়, কেননা আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন বছরের অর্ধেক চলে গেলেও বই পেতাম না। এখন শিক্ষার্থীদের আনন্দের সাথে আমরাও আনন্দ উপভোগ করি।
মন্ত্রী আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পেরেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হবে স্মার্ট নাগরিক, সরকার হবে স্মার্ট সরকার, অর্থনীতি হবে স্মার্ট অর্থনীতি, সমাজ হবে স্মার্ট সমাজ, এগুলো গড়তে যা দরকার তা হলো স্মার্ট শিক্ষা সেটিও আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যার নির্দেশনায় নতুন শিক্ষাক্রম তৈরির মাধ্যমে এগিয়ে চলেছি। আজকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর যে বইগুলো বিতরণ করা হয়েছে সেগুলো নতুন শিক্ষাক্রমের। নতুন শিক্ষাক্রম আমরা আলোর পথে তৈরি করেছি। সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ সকলের পরামর্শ নিয়ে সকলের অংশগ্রহণে আমরা এমন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছি যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দময়, শিক্ষায় কোনো পরীক্ষা ভীতিতে শিক্ষার্থীরা সারাদিন ভীত থাকবে না। তবে পরীক্ষা থাকবে যা ধারাবাহিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে একটি অংশ হবে। করে করে শিখবে, কোন মুখস্থ বিদ্যার বালাই থাকবে না। সক্রিয় শিক্ষণ হবে, অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষণ হবে, এর মধ্যে জীবনব্যাপী শিক্ষার যে পথ আজ সারা বিশ্ব খুলে দিতে চায় প্রতিটি মানুষদের জন্য তা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরও খুলে যাবে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানমনস্ক হবে জাতীর পিতা যেমনটি চেয়েছিলেন শুধু প্রযুক্তি বান্ধব নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবক হতে হবে। মানবিক মানুষ এবং সৃজনশীল মানুষ হতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে বই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান প্রমুখ।
সকাল থেকে বই উৎসবে যোগ দেয় কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের হাজারো শিক্ষার্থী। সঙ্গে ছিলেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক। বেলা সাড়ে ১০টায় স্কুল মাঠে শিক্ষামন্ত্রী সবাইকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।
বই উৎসবে যোগ দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মঞ্চে বক্তব্য রাখেন- কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. ইলমা। ইলমা বলেন- বই ছাড়া শ্রেণিকক্ষ, আত্মা ছাড়া দেহ একই। আজ বছরের প্রথম দিন হাতে বই পাওয়ার আনন্দ আমাদের আন্দোলিত করছে। আমরা শিক্ষার্থীরা সবাই আনন্দিত।
উল্লেখ্য, গাজীপুর জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৬ লাখ ১২ হাজার তিনশ ৫১ জন শিক্ষার্থীর হাতে ২৫ লক্ষ ৪০ হাজার ২শ ৩৪ টি পাঠ্যপুস্তক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছয় লাখ ৯২ হাজার সাতশ ৩০ জন শিক্ষার্থীদের হাতে মোট ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ছয়শ ৮৯টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।