বিলেতের আয়না ডেক্স :- মাহমুদুর রহমান শানুর।
মহান বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা।
– আজ ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। গত ২৪ বছরের পাকিস্তানী জান্তাদের শাসনের অবসান হয়েছিল।বাংলাদেশের মানুষের জীবনের আনন্দের দিন। সীমাহীন আনন্দ। মুক্তি সেনারা মুক্ত করে এনেছিল এই স্বাধীন দেশ। ৩০ লক্ষ শহীদ ও দু’লক্ষ মা বোনের আত্ম বলিদানের মধ্য দিয়ে আমাদের এই স্বাধীনতা।১৯৭১ সালের বিজয়ের এই দিনে বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় জয় বাংলা শ্লোগান বাংলার আপামর বাঙালি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। মুক্তি সেনারা দেশটা কে মুক্ত করে ছিনিয়ে এনেছিল। লাল সবুজের পতাকা। বিজয়ের পতাকা। দীর্ঘ ৯ মাস মরণপণ লড়াই শেষে এই দিনে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত বিজয়। বীর শহীদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। শোষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দিন। সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দিন। সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত,জংগীবাদ, রাজাকারমুক্ত, সাম্প্রদায়িক, বর্ণবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শিকল ভেঙে বিজয় উদযাপন করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যোকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। সূর্যের রক্ষাক্ত ছড়িয়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালির চোখে আনন্দ অশ্রু ও আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবল দিয়ে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে বাংলাদেশ।বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্বে মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যে সব বীর সন্তানদের প্রানের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র। বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকীতে দাড়িয়ে এই মূহুর্তে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেবে জাতি। ৫১তম বছরে নানা বিচূতি সত্বেও বাংলাদেশের রয়েছে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম থেকে বেরিয়ে এসে উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য ভুমিকা রেখে চলছে। মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তব রূপ লাভ। পায়রাবদ্ধ নির্মাণ করে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের রাস্তা ঘাট, রেললাইনের সংস্কার সহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নতুন নতুন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করে শিক্ষার সুযোগ সুবিধা করা হয়েছে। শতভাগ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ভুমিকা রেখে চলছে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার বিচার কার্যকর করা হয়েছে পাশাপাশি যুদ্ধোপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারের মাধ্যমে রায় কার্যকর করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে এগিয়ে যাওয়ার আদর্শিক লড়াইয়ে পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রগতি হয়েছে। সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পেরিয়ে এসে স্বীকার করতে হবে যে,দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও এখনো স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। দেশের নানামুখী উন্নয়নের পরে ও আমরা দেখি সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আজও অর্জিত হয়নি। আর হয়নি বলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বাঙালির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের দিন। দীর্ঘ ন’মাস বিভীষিকাময় সময়ের পরিসমাপ্তির দিন। লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তস্নাত, স্বামীহারা,সন্তানহারা, বাবাহারা, নারীর অশ্রুধারা, দেশের সর্ব শ্রেষ্ট বুদ্ধিজীবিদের হত্যা ও বীরঙনাদের সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এই মহান বিজয়। ৫১ বছর আগে এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বোভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছিল আত্ম পরিচয়ের ঠিকানা। বিজয়ের এই দিনে শপথ নেওয়া হবে দেশ থেকে মৌলবাদ জঙ্গিবাদ উগ্রবাদিতা ও সামপ্রদায়িক অপশক্তির ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার। শপথ নেওয়া হবে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও প্রগতির পথে বাধাদানকারীর সমূলে উত্পাটন করার। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আর আত্ম প্রত্যয়ী হবে নতুন প্রজন্ম। এই স্বপ্ন সত্যি করতে বাঙালি জাতি এক সাগর রক্ত ঢেলেছে।