এস আলম গ্রুপ: এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই নিয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা!

বিলেতের আয়না ডেক্স :- এস আলম গ্রুপ: এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই নিয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা!
নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ তুলে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। যদিও বিধি অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকের পর্ষদে নিজেদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এস আলম বিভিন্ন অনৈতিক উপায়ে এসব ঋণ তুলে নিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসে এসেছে।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো থেকে এস আলম গ্রুপ ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো প্রায় এক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ সরানো হয়েছে ইসলামী ব্যাংক থেকে, যা এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নজিরবিহীন হারে ঋণ তুলে নেওয়া হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে নিয়ন্ত্রকরাই বেআইনি ঋণ প্রদানের পথ করে দিয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে সীমার বাইরে ঋণ বিতরণের বিষয়টি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন। তার মালিকানাধীন গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেশের অনেকগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
একটি ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষক দল ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাগাদ ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় এস আলম গ্রুপের দেনা ৬ হাজার কোটি টাকা শ্রেণিভিক্ত বা ক্লাসিফায়েড ঋণ হিসেবে প্রদর্শনের পরামর্শ দেন। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ওইসব ঋণকে নন-ক্লাসিফায়েড হিসেবে দেখানো হয়।
সরকার ইসলামী ব্যাংক থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সরানোর উদ্যোগ নিলে ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। দেশের আরও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে রয়েছে- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নিজেদের কর্মকর্তাদের এসব ব্যাংকে স্বাধীনভাবে পরিদর্শন কাজ চালানোর সুযোগ দেয়নি। ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শনের প্রতিবেদনও অনুমোদন করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে নিজেদের ছয়টি কোম্পানির নামে ১২ হাজার ১২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে এস আলম রিফাইনড সুগার ৪ হাজার কোটি টাকা, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল ২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, সোনালী ট্রেডিং লিমিটেড ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলস ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ও সেঞ্চুরি ফ্লাওয়ার মিল ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
এর বাইরে এস আলম গ্রুপের অপর সাতটি কোম্পানি আরামিট লিমিটেড, ইউনিটেক্স কম্পোজিট স্পিনিং, ইউনিটেক্স এলপিজি, এইচআইপি, সানমুন এন্টারপ্রাইজ ও আদিল এন্টারপ্রাইজকে যথাযথ সিকিউরিটি ও ডকুমেন্টেশন ছাড়াই ২ ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেনে বলা হয়, খাতুনগঞ্জ শাখার বাইরে অন্যত্র নেওয়া ঋণের তথ্য গোপন করে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদ ও পরিচালনা পর্ষদ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এসব ঋণসীমা অনুমোদন করেছে। এছাড়া নির্বাহী ও পরিচালনা পর্ষদের আনুষ্ঠানিক ছাড়াই সীমার বাইরে উপরোক্ত সাত কোম্পানির নামে অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, একটি সংঘবদ্ধ টিমের মাধ্যমে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে খাতুনগঞ্জ শাখার প্রধান রয়েছেন। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি উইং (আইসিটিডব্লিউ) এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, যেসব কোম্পানির নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগটাই এস আলম গ্রুপ ব্যবহার করেনি। কেননা এত ছোট আকারের কোম্পানিতে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ সিকিউরিটি ও দলিলপত্র ছাড়াই একটিমাত্র পক্ষকে এত বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়ে ইসলামী ব্যাংক নিজেকে এবং দেশের পুরো ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম দেখভালের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে অনিয়ত খতিয়ে দেখা হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:  যশোরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারও ভোট চাইলেন।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top