আওয়ামী যুবলীগের মহাসমাবেশে নেতাদের হুশিয়ারি।

বিলেতের আয়না ডেক্স :-  আওয়ামী যুবলীগের মহাসমাবেশে নেতাদের হুশিয়ারি ।
সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে ।
যেসব বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বিকালে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব সমাবেশে তারা এ হুশিয়ারি বার্তা দেন।
তারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করে, এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে মনে করেন তারা।
যুব সমাবেশে বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে। বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। বিএনপি যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসে সব খাবে। গণতন্ত্র বিলোপ হবে।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নৌকা আবারও ক্ষমতায় আসবে। মহাসমাবেশে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, যারা সমাবেশে লোকের উপস্থিতি দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে গেছেন, মনে করেছেন এতেই ক্ষমতায় চলে আসছেন। তারা আজ দেখেন, আপনাদের বক্তব্য আর দুই-একটা কর্মসূচির ফলে সরকার পড়ে যাবে না। ফুঁ দিলেই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন উড়ে যাবে না।
তিনি বলেন, আপনারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করেছেন। অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। শত শত নারীর সম্ভ্রম আপনারা নষ্ট করেছেন। এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই যুবসমাজ ঐক্যবদ্ধ।
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, পাগলে কি না কয়, ছাগলে কি না খায়? ওরা পাগল, ওরা খুনি। তারেক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, খালেদা জিয়াও তো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তারা আবার ভয় দেখায়। বলে, আওয়ামী লীগ পালাবার পথ পাবে না। আওয়ামী লীগ পালানোর দল না।
সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ক্লিন হার্ট অপারেশনের নামে শত শত যুবলীগ নেতাকর্মী হত্যা করেছেন। আজ তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়াতে চান। তাদের যথাযথ জবাব দিতে প্রস্তুত এই যুবসমাজ।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, ‘বিএনপি কোনোদিনই সত্যের রাজনীতি করেনি। বিএনপি ১ কোটি ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন সবার জন্য উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনার উন্নয়ন সবার জন্য। বিশ্বমন্দা থেকে একমাত্র শেখ হাসিনা মুক্ত করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিগত সময়গুলোতে যেভাবে সবাই ভালো ছিলেন সামনের ১৪ মাস সব ভুলে মাঠে থাকতে হবে। নৌকাকে জেতাতে হলে এর বিকল্প নেই।’
এদিকে, শুক্রবার দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার উপস্থিতিতে আনন্দে সেøাগানে সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশস্থল।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসমাবেশ উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতিকে সভামঞ্চে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তারা ক্রেস্ট তুলে দেন।
এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ওই সমাবেশ। প্রথমে মঞ্চে ওঠেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ এমপি। তার গানে মাতে পুরো সমাবেশস্থল। গানে গানে আর পতাকা দোলানোর তালে তালে দৃশ্যটি ছিল উপভোগ্য। বিশেষ করে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে ‘তুমি ফিরে এসেছিলে…’ এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে আরেক গান- ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা’ গান বেশ উপভোগ করেছেন যুবরা। এ সময় সবাই মমতাজের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও এ সময় উচ্ছ্বসিত দেখা যায়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই যুবলীগের প্রতিষ্ঠা থেকে বর্তমানের ক্রমধারা বর্ণনা ও তার সঙ্গে নৃত্যানুষ্ঠান ছিল অসাধারণ।
এশিয়ার বৃহৎ এ যুব সংগঠনের উৎসবমুখর এই আয়োজনে এরই মধ্যে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ যুবক মিলিত হয়েছেন। কেউ লাল-সবুজ এবং কেউ হলুদ রঙের টিশার্ট ও ক্যাপ পরে সেজে এসেছেন। মিছিলে মিছিলে ঢাকঢোল পিটিয়ে সোওহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিলিত হয়েছেন তারা। যুবসমাজের আনন্দঘন এই আয়োজনে আনন্দের অংশীদার হতে যোগ দিয়েছেন হালের জনপ্রিয় চিত্রনায়কদের অন্যতম রিয়াজ ও ফেরদৌস।
১১ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী। ১৯৭২ সালের এই দিনে দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রথিতযশা সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ দেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন:  মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামী দলকে বিচারের জন্য সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রী পরিষদে - আইন মন্ত্রী আনিসুল হক।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top