বিলাতের আয়না ডেক্স :- মায়েদের বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মায়েদের বুকের দুধে সন্ধান মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এর ফলে নবজাতক শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শিশু জন্ম দেয়ার পর সুস্থ ৩৪ জন মায়ের কাছ থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। তা নিয়ে গবেষণায় তারা মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পান। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন ওইসব মায়ের চারভাগের তিন ভাগের বুকের দুধেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব আছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল।
এতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর সারাবিশ্বে উৎপাদন হয় কমপক্ষে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ টন প্লাস্টিক। এসব প্লাস্টিক যখন ভেঙে ফেলা হয় বা রিসাইকেল করা হয়, তখন বড় ঝুঁকির কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, আমরা যে বাতাসে নিশ্বাস নিই, তাতে এই প্লাস্টিক পার্টিক্যাল বা কণার সন্ধান মিলেছে। সমুদ্রে প্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছে।
এমনকি মাছের পেটেও প্লাস্টিকের বোতল পাওয়া গেছে। নতুন করে গবেষকরা এ নিয়ে গবেষণা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাতে ক্রমবর্ধমান হারে প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে আমাদের শরীরের ভিতরে। অথচ এই প্লাস্টিক নামের বস্তুটি আবিষ্কার হয়েছে সবেমাত্র বিংশ শতাব্দীতে।
মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় নবজাতকের শরীরে, মানুষের ব্রেনে আর সর্বশেষ মায়েদের বুকের দুধে সন্ধান মিলল এই প্লাস্টিকের। তা সত্ত্বেও এখনও বিজ্ঞানীরা বলছেন, নবজাতকের জন্য সবচেয়ে সেরা খাবার মায়ের বুকের দুধ। এসব শিশুকে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে গুঁড়ো দুধ বা অন্য যেকোনো ‘ফমুলা দুধ’ পান করানোর মাধ্যমে তার শরীরে উচ্চ মাত্রায় প্লাস্টিকের মজুদ গড়ে তুলতে পারে। প্লাস্টিকের কারণে নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে প্লাস্টিককে নরম করতে ব্যবহার করা হয় পথালটেস নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ। এই পদার্থটি মানুষের যৌন হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বছরের পর বছর ধরে প্লাস্টিকের কণা জমা হচ্ছে বলে মনে করা হয়। গবেষকরা বড় থেকে বড় পরিসরে প্রমাণ দিচ্ছেন ল্যাবরেটরিতে মানুষের কোষ এবং পশুর ওপর কিভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে এসব প্লাস্টিক। সর্বশেষ পরীক্ষায় অংশ নেয়া মায়েরা সন্তান জন্ম দেয়ার এক সপ্তাহ পরে তাদের কাছ থেকে এক গ্রাম দুধ সংগ্রহ করা হয়। এই দুধে যাতে অন্য কোনো কিছুর সংক্রমণ না ঘটে সে জন্য মায়েদের কাছ থেকে প্লাস্টিকের তৈরি নয় এমন কন্টেইনারে সংগ্রহ করা হয় ওই দুধ। ‘ব্রেস্ট পাম্পিং’ সিস্টেমে নয়, হাতের চাপে সংগ্রহ করা হয় এই দুধ। এসব নমুনায় এক থেকে ৫টি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। পলিমার নামের জার্নালে এ নিয়ে গবেষকরা লিখেছেন, মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
এসব প্লাস্টিক পার্টিক্যাল এসেছে পিভিসি, পলিইথিলিন, পলিপ্রোপাইলিন সহ সব রকম প্লাস্টিক পণ্য থেকে। এর মধ্যে আছে প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেজিং, সিনথেটিক লেদার, ফ্লোর টাইলস এবং ফার্নিচারের কভার থেকে। এই গবেষণা করেছেন ইতালিয়ান একটি গবেষক দল। তারা প্রথমে নবজাতকের প্লাসেন্টায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পান ২০২০ সালে। এই গবেষক দলে আছেন, আনকোনায় অবস্থিত ইউনিভারসিটা পালিটেকনিকা ডেলে মার্চের ড. ভ্যালেন্টিনা নোটারস্টেফানো। তিনি বলেছেন, মায়েদের বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এর ফলে নবজাতকরা চরম বিপন্ন অবস্থায় পড়বে। ফলে নারী যখন অন্তঃসত্ত্বা থাকেন এবং শিশুকে বুকের দুধ পান করান তখন তার শরীরে যাতে প্লাস্টিকের উপস্থিতি না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, আমাদের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে মায়ের বুকের দুধ শিশুকে পান করানো কমিয়ে দেয়া উচিত হবে না। কিন্তু রাজনীতিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা দূষণ কমিয়ে আনার জন্য আইন করেন।