বিলেতের আয়না ডেক্স :- বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন।
রোল মডেল বাংলাদেশের কারিগর শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আশাতীত সাফল্য অর্জন করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। যে দেশের অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন আর শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল বিশ্বের বুকে, সময়ের ব্যবধানে সেই পরাজিত পাকিস্তানের সংসদ সদস্য বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা তত্ত্ব অনুসরণ করার কথা বলেন। যে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন, সেই ব্যক্তি বা তার দেশ যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে যুথবদ্ধ হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা ঘুচিয়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিশ্বের অন্যতম একটি দেশে পরিণত হয়েছে।
এক্ষেত্রে অনন্য কারিগর হিসেবে অতুলনীয় ভূমিকা রাখা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। তিনি আজ বিশ্বের অদম্য সাহসী নেতা। প্রজ্ঞা-মেধা ও দূরদর্শিতায় তিনি নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। নিরলস বাংলাদেশের কল্যাণে নিবেদিত শেখ হাসিনা একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। সাহসের সঙ্গে অকপট সত্য কথা বলে তিনি হয়ে উঠেছেন অনুসরণীয়-অনুকরণীয়।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান। আপন আলোয় তিনি ভূখন্ডের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বনেতৃত্বের কাতারে ঠাঁই করে নিয়েছেন। রাষ্ট্র ও সংগঠন পরিচালনায় অনন্য জাদুকরী দক্ষতায় বিচ্ছুরণে তিনি চার মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং একইসঙ্গে চার দশক ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় ৪০ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় শেখ হাসিনাকে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কখনো শাসকদের রোষানলে পড়ে কারান্তরীণ, কখনো বা সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছেন। তবে লক্ষ্যচু্যত হননি। আপন অভীষ্টে এগিয়ে গেছেন সব প্রতিবন্ধকতাকে পায়ে দলে। বারবার মৃতু্যর মুখে দাঁড়িয়ে গেয়েছেন জীবনের জয়গান। সারাক্ষণ ভেবেছেন দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে। শক্তি-মর্যাদায় বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনেক উঁচুতে।
আজকের এই আনন্দমুখর দিনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে। তার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদু্যৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তার বিচক্ষণতা ও দক্ষতার কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। অদম্য সাহসিকতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করে বাংলাদেশকে বিশ্বায়নে এক অজেয় প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদু্যৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের ললাটে যুক্ত করেছে সক্ষমতার নতুন তিলক।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমন ও মোকাবিলায় বাংলাদেশ যেমন বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছে, তেমনি এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের করণীয় সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে প্রশংসিত শেখ হাসিনা বিশ্বাঙ্গনে হয়ে উঠেছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বা ‘মানবতার মা’।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী নেতা শেখ হাসিনার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেলসহ তারা পাঁচ ভাই-বোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন।
টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায় শিক্ষাজীবন শুরু করা শেখ হাসিনা রাজধানীর টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরের (শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ) ছাত্রী ছিলেন। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ডক্টর এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই গৃহবন্দি অবস্থায় শেখ হাসিনা প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যাসন্তান পুতুলের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপে ছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিজয় অর্জন করলে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্য অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা রচিত এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি পাঠক সমাদৃত হয়েছে।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ, কৃষক রক্ষা এবং সন্ত্রাস দমন। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করা নিয়ে দীর্ঘদিন অবিচারের গস্নানি বয়ে বেড়ানো বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কল্যাণে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে শাস্তি পায় যুদ্ধাপরাধীরা। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধাপরাধীদের মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন ও সন্ত্রাসবাদের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। তার দৃঢ় নেতৃত্বে আজ বিশ্বের বুকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে অন্যতম সফল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত স্থায়ী আদালতে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার পরিমাণ অঞ্চল জিতে নেয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সফলভাবে মিয়ানমারের সঙ্গেও বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার মামলা জয় করে। বিশ্বে বাংলাদেশ সেই অল্পসংখ্যক দেশের মধ্যে একটি, যারা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। আর এসবের নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্বসভায় বহুল প্রশংসিত আপন আলোয় উদ্ভাসিত শেখ হাসিনা।