টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়।
গতকাল বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় বিশ্ব ইজতেমার মাঠে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু হয়। জুমার নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. যোবায়ের। ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিনে মুসল্লির উদ্দেশ্যে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিরা পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান করেন। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে প্রথম পর্ব শেষ হবে।
ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নেন ঢাকা, সাভার, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১০টার দিকে ইজতেমা মাঠ মুসল্লিদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়ক মহাসড়কে মুসল্লিরা অবস্থান করেন। ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটে আসেন জুমার নামাজ আদায়ের জন্য।
মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে জায়গা পেয়েছেন সেখানে পত্রিকা, চটের বস্তা, হোগলা পাটি বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন। এতে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লিদের টঙ্গীমুখী স্রোত অব্যাহত রয়েছে। বহুল কাঙ্ক্ষিত আখেরী মোনাজাত পর্যন্ত এ স্রোত অব্যাহত থাকবে। তুরাগ তীরের বিশাল প্রান্তরে নির্মিত পাটের চট ও লাইলন কাপড়ের প্যান্ডেল ইতিমধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের রাস্তায় অস্থান নেন মুসল্লিরা। জুমার নামাজের পর সড়ক মহসড়কে ধুলায় ধূসরিত গোটা ইজতেমা এলাকায় চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদিকে রাস্তায় নামাজ আদায়ের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকে। জুমার নামাজে শরিক হন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ এডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এ বছর দেশের তাবলীগ ভক্তদের পাশাপাশি ৪১টি দেশের প্রায় ৬ হাজার বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা বাস্তবায়ন কমিটি।
বয়ান: শুক্রবার ফজরের পর বয়ান করেছেন পাকিস্তানের  মাওলানা আহম্মেদ বাটলা। জুমার আগের বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। জুমার পর বয়ান করেন, জিয়াউল হক রায়বেন্ড। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা যোবায়ের ও বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করেন। শুক্রবার সকালে জিএমপি কমিশনার মাহবুব আলম জানান, ইজতেমার নিরাপত্তায় সকল কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ৬ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছে। আশা করি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। সকলে যেন নিরাপদে জুমার নামাজ আদায় করতে পারে সে বিষয়ে আমরা সোচ্চার আছি। বিদেশি মেহমানরা মাঠে অবস্থান করছেন। এখানে লাখ লাখ মানুষ এসেছেন। আমাদের কাজ হলো যেকোনো মূল্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইজতেমা কেন্দ্র করে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, জুমার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার লাখো মুসল্লি এখানে এসেছেন। জুমার নামাজ উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যানজটমুক্তভাবে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কমিশনার বলেন, রোববার প্রথম পর্বের মোনাজাত হবে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি এখানে আসবেন। এর জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
শনিবার মধ্যরাত থেকে টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরের বাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। ইজতেমা শেষে মুসল্লিরা বাড়ি ফেরার সময় একই ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে আশা করবো তারা যেন সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখেন। রাস্তায় যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
৫ মুসল্লির মৃত্যু
বুধবার ময়দানে আসার পথে একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গতকাল ময়দানে আরো ৫ জন মারা যান। এ নিয়ে এবারের ইজতেমায় এ পর্যন্ত ৬ মুসল্লির মৃত্যু হলো। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার ধামাউরা গ্রামের মো. ইউনুস মিয়া (৬৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার চোহদ্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মো. জামাল উদ্দিন (৪০), নেত্রকোনা জেলার কুনিয়া, কুমির বাজার গ্রামের আব্দুস সাত্তার (৭০), জামালপুর জেলার সদর থানার পাকুল্লা গ্রামের মতিউর রহমান (৫৫), ভোলা জেলার সদর থানার গোলি গ্রামের সাহা আলম (৬০) ও নেত্রকোনা জেলা সদরের স্বল্প দুগিয়া গ্রামের এখলাস মিয়া (৭০)। ইজতেমা মাঠে জানাজা শেষ তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্থান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন:  অভিষেক টেস্টে জাকিরের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, বিপদ কাটেনি বাংলাদেশের

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top