দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নেযুদ্ধ।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নেযুদ্ধ।
নির্বাচনের মূল যুদ্ধ শেষ। এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নযুদ্ধ শুরু হচ্ছে। ‘এমপি’ নামক সোনার হরিণ পেতে এ যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন প্রত্যাশীরা। শুধু দলীয় নয়, এবার স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদ্বিরে নেমেছেন সদ্য বিদায়ী সংরক্ষিত আসনের এমপিরা ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, একঝাঁক সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী, উদ্যোক্তা, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকরাও।
নৌকার মনোনয়ন পেয়েও দ্বাদশ নির্বাচনে পরাজিত নারী নেত্রীরাও চাইছেন সংরক্ষিত কোটায় এমপি হতে। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনী তফসিল চলতি মাসেই ঘোষণা করা হবে। এর পরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়নযুদ্ধ। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম দ্বাদশ জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০টি সংরক্ষিত নারী আসন পেতে যাচ্ছেন। তাই দলীয় ও স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
এ ক্ষেত্রে সদ্য সমাপ্ত সংসদের নারী এমপিদের অনেককে বাদ দিয়ে আনা হতে পারে নতুন মুখ। বর্তমান নারী এমপিদের আমলনামা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের ৭১ জন সংসদ সদস্যকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষেত্রেও সেই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নারী নেত্রীরা গণভবনে যাওয়া-আসা বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে বিজয়ী হওয়ায় তারা দুটি সংরক্ষিত নারী আসন পাবে। আর এ দুটিতে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া দলের দুই কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের ও সালমা ইসলামের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে দলটিতে গুঞ্জন রয়েছে।
স্বতন্ত্রদের জোট ১০টি সংরক্ষিত আসন ভাগে পাওয়ার কথা থাকলেও তারা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার হাতেই সেই ভার ন্যস্ত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ৪৮টি আসনে দলের মনোনয়ন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। তাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পাশাপাশি অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় আছেন। সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নেও বেশ কিছু চমক আসছে বলেই আভাস পাওয়া গেছে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। সংসদের সাধারণ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের ভোটার হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, কল্যাণ পার্টি একটি এবং স্বতন্ত্ররা ৬২টি আসন লাভ করেছে। আনুপাতিক পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৩৮টি (নৌকা প্রতীকে জয়ী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দু’জনসহ), জাতীয় পার্টি দুটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে।
তবে সরাসরি নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পাওয়ায় সংরক্ষিত আসন না পেলেও স্বতন্ত্ররা কোথাও যোগ দিলে তখন হিসাব পাল্টাবে। এ নির্বাচনে ভোটের জন্য একটি দিন রাখা হলেও ফল জানা যাবে তার আগেই। ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপরীতে দল ও জোটগতভাবে সমান সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয় বলে প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাঁদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনী তফসিল চলতি মাসেই ঘোষণা করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের তফসিলের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটার তালিকা তৈরিসহ প্রাথমিক কাজ গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হলে তফসিল ঘোষণা করা হবে। চলতি সপ্তাহে কিংবা আগামী সপ্তাহে তফসিল হলে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের তারিখ রাখা হতে পারে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, সংসদ সচিবালয় থেকে সংসদ সদস্যদের তালিকা, যারা ভোটার হবেন তাদের তালিকা আমরা পেয়েছি। ভোটার তালিকা যেভাবে প্রকাশিত হয় সেভাবে খসড়া তালিকা প্রকাশ হবে। প্রকাশ হওয়ার পর যদি কোনো আপত্তি না থাকে, এটাই ভোটার তালিকা হবে। পরবর্তীতে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তার পর নির্বাচনের প্রয়োজন  হলে হবে, আর না হলে হবে না। আগামী সপ্তাহে আমরা এটি (প্রস্তাবনা) কমিশনে তুলব। কমিশন অনুমোদন দিলে তফসিল ঘোষণা হবে। আগামী সপ্তাহে তফসিল হলে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন প্রত্যাশীরা। শুধু দলীয় নয়, এবার স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদ্বিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, উদ্যোক্তা, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারা। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী এমপিরাও পদ ধরে রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০। নির্দিষ্ট দলের জন্য সংরক্ষিত নারী আসনে ওই দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শুধু ওই দলের নির্বাচিত এমপিরা ভোট দিয়ে সংরক্ষিত আসনের সদস্য নির্বাচিত করবেন। যদিও গত এগারোটি সংসদের কোনোটিতেই সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও যারাই ক্ষমতাসীন দল কিংবা স্বতন্ত্র জোটের জন্য নির্ধারিত আসনে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন, তারাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হবেন।
জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোও ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। আইন অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গত ৯ জানুয়ারি বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত আসনের ভোট করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইসি তফসিল ঘোষণা করতে পারে বলে জানা গেছে।
আইন অনুযায়ী নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা শপথ গ্রহণ করেছেন, তাদের তথ্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ সচিবালয় নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে। আর নির্বাচিতদের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে দল বা জোটগুলো বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। আর গেজেট হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারী পৃথক পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে।
আসন বণ্টন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের জন্য কোনো নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা নেই। তারা কেবল দলীয় বা জোটের সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। এক্ষেত্রে দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে নারী আসন বণ্টিত হবে।
ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭১ জন এমপিকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষেত্রেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। টানা চতুর্থবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন মন্ত্রিসভায় দলীয় নেতাদের যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন, সেভাবে সংরক্ষিত নারী আসনেও পরিবর্তন আনতে পারেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের দপ্তর সেল সূত্রে জানা গেছে, সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগ কবে থেকে দলের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দলীয় মনোয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা হবে। দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও যাঁরা বিজয়ী হতে পারেননি, তাঁদের অনেককেই সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এবার নৌকার মনোনয়ন পেলেও জিততে পারেননি গত দু’বারের এমপি দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২), সানজিদা খানম (ঢাকা-৪), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর-৫) ও সেলিমা আহমাদ (কুমিল্লা-২)। ফেনী-১ আসন থেকে এবার মনোনয়ন পাননি জাসদের সাধারণ সম্পাদিকা শিরীন আখতার।
সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাঁদের দু-একজনকে বিবেচনায় আনা হতে পারে। এ ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল থেকেও দু-একজনকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এবার সংরক্ষিত নারী আসনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার একঝাঁক তারকা মনোনয়ন পেতে পারেন।
একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের দায়িত্ব পালন করে আসা জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা, নাহিদ ইজহার খান, ওয়াশিকা আয়শা খান, বাসন্তী চাকমা, অ্যারোমা দত্ত, অপরাজিতা হক, ফজিলাতুন নেসা, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, আদিবা আনজুম মিতা, পারভীন হক সিকদার পুনরায় দ্বাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন।
বাকি সাবেক এমপিরাও নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পুনর্বার এমপি হতে। তবে সবকিছু দলের প্রধান শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করছে। কারণ নারী নেত্রীদের সকল আমলনামা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতির হাতে। সবকিছু বিবেচনা করেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংরক্ষিত নারী আসনের সহযোদ্ধাদের বেছে নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন:  অধ্যাপক স্বপ্নীল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলের স্ট্র্যাটেজিক ও টেকনিক্যাল এডভাইজারী গ্রুপের সদস্য নির্বাচিত।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top