বিলেতের আয়না :- মাহমুদুর রহমান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা শেষ।
সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের জমজমাট নির্বাচনী প্রচার শেষ হচ্ছে আজ। আর মাত্র একদিন পরই বহুল কাঙ্ক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, যে নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের ছিল অনিশ্চয়তা ও সংশয়। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকি দিলেও সকল আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশন, সরকারের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাত্মক চেষ্টায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল না আসায় এবার নির্বাচন জমজমাট হবে না বলে বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা থাকলেও তা উড়িয়ে দিয়ে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায়ই নির্বাচন জমে ওঠে। প্রার্থীরা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। পাড়া-মহল্লা বাসা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাসিমুখে ভোট প্রার্থনা করছেন। মা-বোনসহ মুরব্বিদের দোয়া নিয়েছেন। কে কার চেয়ে প্রচারে এগিয়ে থেকে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন সেজন্য চলেছে তীব্র প্রতিযোগিতা। তবে প্রকাশ্যে এ প্রতিযোগিতা আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয় ওঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কটি দল এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৪৪টি
দলের মধ্যে ২৮টি দল অংশ নেয়। এ ছাড়া অংশ নেন অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী। আগে থেকেই নীরব গণসংযোগ করলেও ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি ভোটের মাঠে সরব হয়ে পড়েন প্রার্থীরা। সেই সঙ্গে তাদের দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও স্বজনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই প্রকাশ্যে মাঠে সক্রিয় হন। অনেক প্রার্থী দিনরাত বিরামহীন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক সঙ্গে নিয়ে শোডাউন করে পাড়া-মহল্লায় প্রতিদিন গণসংযোগ করেন। এর ফলে সরগরম হয়ে ওঠে প্রতিটি সংসদীয় এলাকা।
প্রার্থীদের ছবি ও প্রতীক সংবলিত পোস্টরে পোস্টারে ছেয়ে যায় অলি-গলি ও রাজপথ। বাড়ি-বাড়ি ও ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, সভা-সমাবেশ ও মিছিলের পাশাপাশি মাইকিং করেও চলে ভোট প্রার্থনা। তাই সারাদেশে নির্বাচন উৎসবমুখর হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু করে সারারাত বিরামহীন ভোট প্রার্থনার পর আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিক ভোটের প্রচার শেষ হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুসারে শুক্রবারে সকাল ৮টার পর আর নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না। তারপরও বিভিন্ন কৌশলে নীরব প্রচার চলবে ৭ জানুয়ারি ভোট শুরুর আগ পর্যন্ত।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করেই গণসংযোগ, মিছিল, মিটিং ও মাইকিং, পোস্টারিংসহ বিভিন্নভাবে ভোটের প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। প্রভাবশালী প্রার্থীদের পক্ষে এলাকার গণ্যমান্য লোকজনও বিভিন্নভাবে নির্বাচনের প্রচারে কাজ করছেন।
এছাড়া চলন্ত রিক্সা, সিএনজি, পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে মাইক লাগিয়ে কর্মী-সমর্থকরা বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের পক্ষে তাদের স্বজনরা শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্নভাবে শীতার্ত মানুষদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।
এদিকে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও অর্ধশতাধিক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ গ্রহণ করেছেন। তৃণমূল বিএনপি, সোনালী আশ, জাতীয় পাটি লাঙ্গল, আওয়ামী লীগ নৌকা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ মশাল ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।ওর্য়াকার্স পাটি নৌকা ও কাস্তে প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে।১৪ দলীয় ঐক্যজোটের কেউ কেউ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন অংশ গ্রহণ করেছেন।ইসলামী ঐক্য জোট, সাংস্কৃতিক ইসলামিক আন্দোলন তরিকত ফেডারেশন, জমিয়ত ইসলাম মিনার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।সর্বমোট ২৮ টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন। ঈগল ট্রাক ও মশাল,কাস্তে , নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সহ শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তাই ভোটের প্রচারের শুরুর দিন থেকে দিনরাত দৌড়ঝাঁপ করেও তাদের যেন স্বস্তি নেই। নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীর সমর্থন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যে যে দলের সমর্থক সে দলের একাংশের সমর্থন পাওয়ার পাশাপাশি যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি সেসব দলের নীরব সমর্থন পায়। এ কারণে অনেক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নৌকা লাঙ্গলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী প্রায় ২০ জন তাঁরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন।তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি ও পদপ্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি নির্বাচন থেকে সরে দাড়িছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন দিয়ে। স্বাধীনতা জামায়াত বিএনপি চক্র কোন অবস্থায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় না আসতে পারে।
বিভিন্ন এলাকায় ভোটের প্রচার চালাতে গিয়ে হেভিওয়েট প্রার্থীরা প্রতিদিনই শোডাউন করেছেন। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে একেক সময় একেক এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করেছেন। পথসভা ও মতবিনিময় করে যাচ্ছেন।বিভিন্ন মিটিং এ অংশ গ্রহণ করে যাচ্ছেন । এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে হাত মেলানোর পাশাপাশি কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। চেয়েছেন ভোটসহ সার্বিক সহযোহিতা। এ সময় ভোটাররা প্রার্থীদের কাছে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। প্রার্থীরাও ভোটে নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর সঙ্গে থেকে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে তাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
ভোটের প্রচারের সময় প্রতিটি রাজনৈতিক দল দেশ ও জনগণের স্বার্থে এলাকার উন্নয়নের কথা বলার পাশাপাশি বিভিন্ন দর্শন তুলে ধরেছেন।কোন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।স্বতন্ত্র প্রার্থীতা ও তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নিজ নিজ সীমাবদ্ধতায় থেকে নির্বাচিত হলে কি কি করবেন তা তুলে ধরেছেন। প্রত্যেক প্রার্থীরা ভোটের প্রচারকালে এলাকাবাসীর কাছে লিফলেট বিতরণ করেছেন। এসব লিফলেটে প্রার্থীর যোগ্যতা ও এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
প্রার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সকল প্রার্থীর স্বজনরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পদপ্রার্থীরা ক্ষমতাশীন দলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেছেন। পদ্মা সেতু, এলিভেটেড রেল সেতু, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল, পায়রা বন্দর, ছয়লেন,রাস্তা, চারলেন রাস্তাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করেছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গেই দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। সেখানে জনসভায় বক্তব্যও রাখেন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় গিয়ে জনসভা করে দলের জন্য ভোট প্রার্থনা করেছেন শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালী বিভিন্ন জেলায় বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন। নিজের দলের পাশাপাশি ডামি প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার মতামত দিয়েছেন। দলের নেতৃবৃন্দরা যে কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে প্রচারে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করা হবে না। তিনি সর্বশেষ জনসভা করেছেন নারায়ণগঞ্জে।
সভা-সমাবেশ, মিছিল, স্লোগান ও মাইকিং এই উপমহাদেশের নির্বাচনের প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাই সকল প্রার্থীই তা অনুসরণ করেন। প্রতিদিন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা শোডাউন করে মিছিল, মিটিং ও স্লোগান নিয়ে সরব থাকায় সারাদেশে ব্যাপক নির্বাচনের আমেজ সৃষ্টি হয়। তবে প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রচারের সময় আচরণবিধি ভঙ্গ করার বিষয়টির দিকেও কঠোর দৃষ্টি রাখে নির্বাচন কশিমন।
প্রতিটি এলাকায় ইসির দায়িত্বরত ইসি কর্মকর্তা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে অধিকতর তৎপর থাকায় আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়টি এবার কোনো প্রার্থী এড়িয়ে যেতে পারেনি। তিন শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ নোটিস করে নির্বাচন কমিশন। হেভিওয়েট প্রার্থীরাও ইসি কার্যালয়ে গিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রেকর্ড সংখ্যক অর্থাৎ ২ হাজার ৭১৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়েছিলেন ৭৩১ জন। ৬৬০ জন প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছিলেন। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান বেশ কজন। ইসির আপিলে ব্যর্থ হয়ে উচ্চ আদালতেও আপিল করেন বেশ কজন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রার্থিতা ফিরে পান। সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা টিকে আছেন একহাজার ৯৭০ জন প্রার্থী।
এর মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করছেন একহাজার ৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। এর মধ্যে ২৮ জন বর্তমান এমপিসহ অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। তারা সবাই এলাকায় প্রভাবশালী। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থীদের সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুতে ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। ফলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে ২৯৯ আসনে।
ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্য কমিশনাররাও একেকদিন একেক জেলায় গিয়ে প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রশাসন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন। আর প্রার্থীসহ অন্যরাও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা চেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোও এ বিষয়ে ইসিকে আশ্বস্ত করেছে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন সে জন্য বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধিরও যথাযথ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বেশ কজন প্রভাবশালী প্রার্থীসহ তিন শতাধিক প্রার্থীকে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কারণ দর্শাও নোটিস দিয়ে তা প্রমাণ করেছে ইসি। এর মধ্যে বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে সাত লাখ পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মাঠে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশ একলাখ ৮৯ হাজার, বিজিবি ৩৫ হাজার, এপিবিএন ছয়হাজার এবং আনসার-ভিডিপির পাঁচলাখ ১৭ হাজার ১৬৭ জন, দুইহাজার ৩৫০ জন কোস্টগার্ড সদস্য রয়েছেন। তারা মাঠে নামে ২৮ ডিসেম্বর। আর ৩ জানুয়ারি থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। তারা সবাই ভোটের পরও ৩ দিন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে।
এবার ৬২টি জেলায় সেনাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫ উপজেলায় বিজিবি এককভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় সেনাবাহিনী বিজিবির সঙ্গে এবং উপকূলীয় ৪টি উপজেলায় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। ভোলা ও বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় ১৯টি উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারে করে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোট কেন্দ্রগুলোয় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে নির্বাচনের কাজে সহায়তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ইসির পক্ষ থেকে এবার ভোট কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা, ভোটগ্রহণের দায়িত্ব নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আচরণবিধি মানাতে ৮০২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে, তারা ২৮ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছেন।
এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০টি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থীদের অপরাধ তদন্ত করে আমলে নেওয়ার জন্য এসব কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত এ কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। এই কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন যুগ্ম জেলা জজ ও সিনিয়র সহকারী জজগণ।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন এমন প্রায় ১০ লাখ লোকের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এমন পদক্ষেপ দেখে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১৮৬ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসছেন।