বিলেতের আয়না ডেক্স :- ২০২৩ সালে যাদেরকে হারিয়েছি।
‘যেতে নাহি দিব। হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’ কবিগুরুর লেখা এই পঙক্তির মতোই প্রকৃতির অমোঘ সত্যকে মেনে নিয়ে সবাইকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়। তবে অনেকের চলে যাওয়া যেমন বেদনার তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের শূন্যস্থান অপূরণীয়। প্রতি বছরের মতো ২০২৩ সালেও এদেশের বহু কালজয়ী আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের স্মরণেই আজকের এ আয়োজন।
এ বছরের শুরুতে গত ২ জানুয়ারি রাতে পরপারে পাড়ি জমান স্থপতি, ক্রীড়া সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগে তিনি রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি এসোকনসাল্ট লিমিটেডের প্রধান স্থপতি। কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অফ আর্কিটেক্টস এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল, এশিয়ার (আর্কেশিয়া) প্রেসিডেন্টও ছিলেন বরেণ্য এই স্থপতি। নাগরিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন।
স্থপতি হিসেবে মোবাশ্বের হোসেনের নির্মাণকাজের মধ্যে প্রশিকা ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক ভবন ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন উল্লেখযোগ্য। পেশাজীবন ছাড়িয়ে আরও একটি বড় পরিচয় রয়েছে তাঁর। ১৯৭১ সালে সরাসরি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছিলেন ক্র্যাক প্লাটুনের সক্রিয় সদস্য।
এম খালেকুজ্জামান
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা এম খালেকুজ্জামান ২১ মার্চ নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। খালেকুজ্জামানের জন্ম শান্তাহারে। বাবা ডা. শামসুজ্জামান ছিলেন ব্রিটিশ রেলওয়ের মেডিকেল অফিসার। মা শায়েস্তা আক্তার জামান ছিলেন গৃহিনী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য ও চারুকলা বিভাগের প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রীধারীদের একজন এই গুণী অভিনেতা। দেশ স্বাধীনের পর খালেকুজ্জামান ১৯৭৫ সালে বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। স্কুল-কলেজ জীবনে অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
বিটিভিতে প্রথম নওয়াজেশ আলী খানের প্রযোজনায় ‘সর্পভ্রমে রজ্জু’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। এরপর ধারাবাহিক নাটক ‘তমা’, ‘বড় বাড়ি’, ‘সময় অসময়’, ‘সুবর্ণ সময়’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন খালেকুজ্জামান।
নায়করাজ রাজ্জাক ও কবরীর সঙ্গে ‘অনিবার্ণ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন বিরতির পর মুরাদ পারভেজ’র ‘বৃহন্নলা’য় অভিনয় করেন। এরপর শিহাব শাহীনের ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই অভিনেতা। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা অনম বিশ্বাসের ‘দেবী’।
শামীম সিকদার
স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ অনেক ভাস্কর্যের শিল্পী শামীম সিকদারও এ বছর না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন। ২২ মার্চ রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
শামীম শিকদার গত শতকের আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা শুরু করেন। অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ৮ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যটি তৈরি করেন শামীম সিকদার। জগন্নাথ হলের সামনে স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাস্কর্যটিও তারই করা। ২০০০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এ ভাস্কর।
নূরে আলম সিদ্দিকী
২০২৩-এ পরপারে পাড়ি জমানো দেশের গুণীজনদের তালিকায় অন্যতম নাম নূরে আলম সিদ্দিকী। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গত ২৯ মার্চ রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নূরে আলম সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৪০ সালের ২৬ মে ঝিনাইদহে। সত্তরের দশকের তুখোড় এ ছাত্রনেতা ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছয় দফা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন যশোর-২ (বর্তমানে ঝিনাইদহ-২) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
২০২৩ সালে হারানোর তালিকায় অন্যতম নাম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১১ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরী এদেশের নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সোচ্চার কণ্ঠস্বর ছিলেন। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বহির্বিশ্বে তাঁর পরিচয় বিকল্প ধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন বাম রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৬৪ সালে এমবিবিএস পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি সাধারণ সার্জারি ও ভাস্কুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন।
১৯৭১ সালের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গঠনে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। গত ২৩ এপ্রিল রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খ্যাতিমান এ বাম রাজনীতিক। তাঁর জন্ম ১৯৩৯ সালের আগস্ট মাসে। বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী পঙ্কজ ভট্টাচার্য ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী, একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিনি কারারুদ্ধ হন।
মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। পরে সম্মিলিত ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামে দেশের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।
আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)
চলচ্চিত্র অঙ্গনেও এ বছর হারিয়েছি অনেক গুণীজনকে। তাদেরই একজন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাইখ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক। তিনি গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে প্রায় দুই বছর চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন।
এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড়পর্দায় আসেন নায়ক ফারুক। অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে ভূষিত হয়েছেন আজীবন সম্মাননায়। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে সারেং বৌ, লাঠিয়াল, সুজন সখী, নয়নমনি, মিয়া ভাই, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, দিন যায় কথা থাকে ইত্যাদি।
সিরাজুল আলম খান
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) গত ৯ জুন ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। “রাজনীতির রহস্যপুরুষ”খ্যাত সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তাঁর বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। সিরাজুল আলম খান ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হয় তাঁর উদ্যোগেই।
মহিউদ্দিন আহমদ তার প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ গ্রন্থে সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ষাটের দশকে সিরাজুল আলম খানের উত্থান ছাত্রনেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের হাত ধরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়াতলে। এ সময় আরও কয়েকজন ছাত্রনেতা মাঠ কাঁপিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের ফারাক এক জায়গায়—তিনি ধারাবাহিকভাবে লেগে ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন, শেখ মুজিবের ছয় দফা তাঁর বুকের মধ্যে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল। উনসত্তরে মুজিব যখন জেল থেকে ছাড়া পান, দেখলেন তাঁর জন্য জমি তৈরি হয়ে আছে, যার ওপর ভরসা করে বীজ বোনা যায়। জমি তৈরির এই কাজটি করেছেন সিরাজুল আলম খান। শেখ মুজিবকে নেতা মেনেই তিনি এটা করেছেন।’
কাজী শাহেদ আহমেদ
অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদ মারা যান গত ২৮ আগস্ট। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও পরিচিতি ছিল কাজী শাহেদ আহমেদের। তার জন্ম ১৯৪০ সালের ৭ নভেম্বর, যশোরে। প্রকৌশলে লেখাপড়ার পর তিনি ১৪ বছর সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন প্লাটুন কমান্ডারদের একজন ছিলেন তিনি।
১৯৭৯ সালে জেমকন গ্রুপ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক জীবন শুরু হয়। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা তিনি। নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশনও করেছেন তিনি।
কাজী শাহেদ আহমেদ লেখালেখিও করেছেন। ভৈরব, দাঁতে কাটা পেনসিল, অপেক্ষাসহ বেশ কয়েকটি উপন্যাস রয়েছে তাঁর। জীবনের শিলালিপি নামে একটি আত্মজীবনী রয়েছে কাজী শাহেদ আহমেদের।
সোহানুর রহমান সোহান
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ খ্যাত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানও ২০২৩ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শিবলী সাদিকের সহকারী হিসেবে সোহানুর রহমান সোহান তার চলচ্চিত্র কর্মজীবন শুরু করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ (১৯৮৮)। এ নির্মাতার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ, মৌসুমী, পপি ও ইরিন জামান। শাকিব খানের মুক্তি পাওয়া প্রথম ছবির পরিচালকও তিনি। এ পরিচালকের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘স্বজন’ (১৯৯৬), ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালবাসা’ (১৯৯৯)।
কবি আসাদ চৌধুরী
২০২৩ সালে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো দেশের সাহিত্য জগতেও আমরা অনেক নক্ষত্রকে হারিয়েছি। তাদেরই একজনবাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ চৌধুরী। ৪ অক্টোবর কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কবি আসাদ চৌধুরী। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
কবি তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী, টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। এছাড়া তিনি তার ভরাট কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেও মানুষের মন জয় করেছেন। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অনুবাদকর্মে তার অবদান প্রণিধানযোগ্য। ১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ “সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু।”
জাতীয় অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক
চিকিৎসায় উপমহাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও দেশের প্রথিতযশা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক মারা যান গত ৫ ডিসেম্বর। নিজ হাতে গড়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুল মালিকের বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
১৯২৯ সালের ১ডিসেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল মালিক। সিলেট থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ১৯৪৯ সালে। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে এমবিবিএস শেষ করেন।
হৃদরোগের চিকিৎসায় ১৯৭৮ সালে রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল মালিক। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৪ সালে আবদুল মালিককে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। এর দুই বছর বাদে ২০০৬ সালে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা পান তিনি।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন
ইত্তেফাকের এক সময়ের সম্পাদক ও সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ৯ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে নামা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ নেশনের সম্পাদক ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার বড় ছেলে। প্রবীণ আইনজীবী মইনুল ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও লন্ডনের ‘মিডল টেম্পল ইন’ থেকে ব্যারিস্টার-ইন-ল ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথম জাতীয় সংসদে বরিশালের ভান্ডারিয়া-কাউখালী আসন থেকে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের প্রতিবাদে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১/১১’র সময়ে ফখরুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন মইনুল হোসেন। তিনি তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কয়েক দফায় সংবাদপত্র পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
ফজলুর রহমান
দেশের শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান গত ২৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ৪২ টাকা পুঁজিতে মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করা ফজলুর রহমানের হাতে গড়ে ওঠে সিটি গ্রুপ। ভোজ্যতেল ও চিনি পরিশোধন, চাল-ডাল, আটা-ময়দা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পোলট্রি খাদ্য, জাহাজনির্মাণ, চা–বাগান, ব্যাংক, বিমা, হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে সিটি গ্রুপের ব্যবসা রয়েছে।
সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমান।
সিটি গ্রুপের বর্তমানে ৪০টি প্রতিষ্ঠান আছে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, সিটি গ্রুপের বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। কর্মসংস্থান ১৫ হাজারের বেশি। বার্ষিক বেচাকেনা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে। ফজলুর রহমান একাধিকার সেরা প্রবীণ করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরেও তিনি সেরা প্রবীণ করদাতা নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি এশিয়া ওয়ান ‘গ্রেটেস্ট লিডার ২০২০-২১’ সম্মানে ভূষিত হন।
এ বছর চলে যাওয়া গুণীজনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকজন হলেন-শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান এবং সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁঞা, লেখক, শিক্ষক ও সমাজসেবক সুফিয়া খাতুন, কবি আবু বকর সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক আইজিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল আনোয়ার, আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান।
২০২৩ সালে যাদেরকে হারিয়েছি।
Share:
Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
পপুলার
আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে, নিতে নয়।
এপ্রিল ১১, ২০২৪
ঈদের দিন হামাস নেতার ছেলে ও নাতি নিহত ।
এপ্রিল ১১, ২০২৪
জিম্মি জাহাজে আব্দুল্লাহর মধ্যে ঈদের নামাজ আদায় করলেন নাবিকরা।
এপ্রিল ১১, ২০২৪