আগামী দ্বাদশ  জাতীয় নির্বাচনে ভোটে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- আগামী দ্বাদশ  জাতীয় নির্বাচনে ভোটে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস।
আগামী ৭ ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
দেড় কোটি নতুন ভোটার, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহও বেশি ॥ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, জিনিসপত্রের দাম কমানো, তথ্যপ্রযুক্তিতে অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলার প্রত্যাশা।
আগামী ৭ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার নতুন ভোটার। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলো অংশ না নিলেও ভোটের উত্তাপ কমেনি। ভোটে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নজর এই নতুন ভোটারদের দিকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও তরুণদের চাওয়া অনুযায়ী দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের নতুন ভোটারদের অন্যতম চাহিদা দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক। সে সঙ্গে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমুক। আর দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকুক। তরুণরা চাচ্ছে বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশ তথ্য প্রযুক্তির  সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে যাক। নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার আগে স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের কথা শুনেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনা। ইশতেহারে তরুণদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে দ্বিতীয়বারের মতো তাদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৮ সালের লেটস টক অনুষ্ঠানে তরুণদের জিজ্ঞাসার জবাবে প্রধানমন্ত্রী নীতিনির্ধারণী বিষয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং তরুণদের কথাও শোনেন। লেটস টকের বিশেষ এই পর্ব বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচার হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। সিআরআই ও ইয়াং বাংলার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও এটি প্রকাশ করা হবে। এবারের লেটস টকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণ বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন ও মতামত জানান তরুণরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জীবন ও ভাবনা নিয়েও বেশ কিছু নতুন তথ্য মিলবে এবারের লেটস টক অনুষ্ঠানে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশ নি¤œ আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আর সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে দেশের তরুণ সমাজ। বাংলাদেশের সর্বশেষ জনশুমারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ এখন তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। তাদের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৪ লাখের বেশি।
জনশুমারি ও গৃহ গণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে বর্তমানে কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা প্রায় ৬২ শতাংশ। আর এই জনমিতিকে কাজে লাগাতে তরুণদের মতকে প্রাধান্য দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত এ কারণেই তরুণদের সঙ্গে দেশের নীতি নির্ধারণী বিষয়ে আলোচনা, তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো সরাসরি জানা এবং দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনার জন্য আরও একবার ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে আগামী নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসগুলোতে চায়ের আড্ডায় তরুণদের আলোচনায় বিষয়ে পরিণত হয়েছে আসন্ন নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ভোটারের মধ্যে এবার নতুন ভোটার ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার।
দেশে তরুণ ভোটারদের বড় একটি অংশই হচ্ছে শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কেউ হয়তো সদ্য কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন বা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব ভোটাররা নিজেদের চোখের সামনেই দেখেছেন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। উদহারণ হিসেবে বলা যাচ্ছে, পদ্মা সেতু কর্ণফুলী টানেল বা ক্যাম্পাসেও মেট্রোরেলের সুবিধা। দেশের অবকাঠামোর এই পাল্টে যাওয়াটা হয়েছে এই প্রজন্মের চোখের সামনে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামীর বাংলাদেশকেও আরও উন্নত দেখতে চান তারা।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম আকাশ নামে শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমবার ভোটার হয়েছি। এক ধরনের উচ্ছ্বাস তো কাজ করছেই। যিনি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে মনে করছি, তাকে ভোট দেব। আমরা চাই গুণগত উন্নয়ন। শুধু অবকাঠামোই নয়, দরকার দেশের সব প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নও। তবে তরুণ ভোটারদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আবাসিক হল থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভালো কোনো হোটেল রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গেলে পকেটে টান পড়ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়ছে। এখনো পর্যন্ত যারা চাকরিতে যোগ দেননি, এসব তরুণ কষ্টে রয়েছেন। এরপরেও  তারা উন্নয়নের সঙ্গেই থাকতে চান। অন্য একটি অংশ চাচ্ছে, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ুক। তবে সহিংসতামুক্ত একটি ভোটের পরিবেশও চাইছেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাব বলছে, বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। এ তালিকা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে হিসেবে পাঁচ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬ জন।
তরুণদের সঙ্গে কথা বলে  জানা গেছে, বাংলাদেশে কে কোন দলের সমর্থক হবে-সেটা অনেকটা নির্ধারিত হয় পারিবারিক সূত্রে। কিন্তু তরুণদের বড় একটা অংশ আবার পারিবারিক ঐতিহ্য ভেঙে ভিন্ন দল কিংবা নতুন রাজনীতি বেছে নিতে পিছপা হন না। তারা অনেকটাই স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক মত বেছে নিচ্ছেন। এর আগে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় বছরের মাথায় মুসলিম  লীগ পরিবারের সন্তানেরা সেই দলের রাজনীতিকে নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বর্তমানেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। তরুণরা রাজনীতির ক্ষেত্রে পারিবারিক বৃত্ত ভেঙে ফেলছেন। সেই কারণে এবারে তরুণ ভোটররা বেশি অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  ২ জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top