বিলেতের আয়না ডেক্স :- সিলেট শহর একদিনের ব্যবধানে বদলে গেল নগর, রাস্তা-ফুটপাত দখল,তীব্র যানজট।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনের কারণে দীর্ঘদিন পর দখল মুক্ত ফুটপাত এবং যানজট মুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী হয়েছিল সিলেট। ক্লিন সিটি সিলেটকে দেখেছিলেন নগরবাসী। তবে তা মাত্র ১ দিনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আবার সেই জঞ্জালে ফিরে গেলো নগর। দখল হলো রাস্তা-ফুটপাত, ফিরলো যানজটের চিরচেনা দৃশ্য।
বুধবার নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন সিলেটে। আর তার সফর উপলক্ষে এসেছিল এই পরিবর্তন। যা প্রশংসা কুড়িয়েছিল সবার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সমাবেশ করে চলে যাওয়া মাত্রই আবার বদলে গেল নগরী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিলেট আবারও রূপ নিলো যানজট, ফুটপাত দখল, রাস্তা দখল আর বিশৃঙ্খল নগরে। ফুটপাত আর রাস্তা দখলের উৎসব দেখে মনে হয়েছে যেন গুহা থেকে ছাড়া পেয়েছে পঙ্গপালের দল!
সরেজমিন দেখা যায়, মাত্র দুইদিন আগ থেকে নগরীর আম্বরখানা থেকে বন্দরবাজার, বন্দরবাজার থেকে ডিসি অফিস, তালতলা হয়ে শেখঘাট পয়েন্ট, শেখঘাট পয়েন্ট থেকে রিকাবীবাজার, আম্বরখানা-শাহপরান সড়কগুলো ছিল ছিমছাম, পরিপাটি, সুন্দর পরিচ্ছন্ন। কোথাও কোথাও ফুলের সমাহারও ছিলো। কিন্তু একদিন পরই দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। যা নিয়ে হাতাশা ঝরলো পথাচরী, দোকানী থেকে শুরু করে নগরবাসীর।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই ফুটপাত দখল করেই শেষ হয়নি, দখল হয়ে গেছে রাস্তার অর্ধেক। এতে পথচারী চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটেছে। রাস্তা দখল থাকায় যানবাহন ঠিকমতো চলাচল করতে পারেনি। এতে পুরো দিন নগরজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। বিশ মিনিটের রাস্তা যে সময় ব্যয় হয়েছে কারো দুইঘণ্টার মতো।
নগরীর বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট থেকে মদীনা মার্কেট যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশায় ওঠা এক যাত্রী জানান, সাড়ে বারোটায় রওয়ানা দিয়ে দুপুর আড়াইটায় তিনি গন্তব্যে পৌঁছান। শুধু যানবাহনে নয়, যারা পায়ে হেঁটেও গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন মানুষের চাপে তাদের পাঁচ সাত মিনিটের রাস্তায় আধাঘণ্টা লেগেছে। নগরীর দাড়িয়াপাড়া থেকে কোর্ট পয়েন্ট আসার জন্য হেঁটে রওয়ানা দেওয়া এক পথচারী বলেন অন্যদিন সাত থেকে দশ মিনিট লাগে এই পথ পায়ে হেঁটে আসতে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পৌনে চারটায় রওয়ানা দিয়ে কোর্ট পয়েন্ট সিটি কর্পোরেশনের সামনে আসতে সাড়ে চারটা বেজে যায়। তিনি জানান জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ছিল না হেঁটে আসার কোনো উপায়। দাঁড়িয়ে ছিলেন বাস ট্রেনের লম্বা লাইনের মতো মানুষের চাপে ধাক্কা খেতে খেতে এগিয়েছেন। ফুটপাতের দুইদিকেই হকাররা দখল করে রেখেছে। মাঝখানে পুলসিরাতের মতো অল্প একটু জায়গা দিয়ে পথচারীদের হাঁটতে হয়েছে।
অন্যসময় ফুটপাত দখলে থাকলে রাস্তা দিয়ে নেমে যাওয়া যায়, কিন্তু এবার সেই সুযোগ ছিল না। কারণ ফুটপাত দখল করে রাস্তারও অর্ধেক দখল করে নিয়েছিল হকাররা। বাকি অংশে আটকে ছিল রিকশা সিএনজি, গাড়ি। এসময় জিন্দাবাজার গামী অনেক যাত্রীকে সবুজবিপনীর সামনে রিকশা থেকে নেমে হেঁটে রওয়ানা দিতে দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ যানজটে অপেক্ষা করে অনেক রিকশাওয়ালাকে যাত্রী নামিয়ে দিতেও দেখা যায়। নারী এবং যারা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বের হয়েছিলেন তাদের বেশি যন্ত্রণা পোহাতে দেখা গেছে। অনেকেই এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে, নগর কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা থাকলে এমন বিশৃঙ্খলা সম্ভব হতো না। অনেকে প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার মাত্র একদিনের ব্যবধানে এই পরিবর্তন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রীর বুধবারের সিলেট সফরকে সামনে রেখে পুরো সিলেট নগরী নতুন সাজে সাজানো হয়। নতুন রং করে ধুয়ে মুছে ঝকঝকে তকতকে করা হয় রাস্তার ডিভাইডার। রাস্তাঘাট সুন্দর করে সংস্কার করা হয়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে হকার, ব্যানার-ফ্যাস্টুন আর আবর্জনায় যে সড়কগুলো ছিল নোংরা সেই সড়কগুলোই পেয়েছিল নান্দনিক রূপ। অনেকেই তখন এর প্রশংসা করে বলেছিলেন অন্তত প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে হলেও আন্তরিক উদ্যোগ থাকলে যে সিলেটকে সুন্দর নগরে পরিণত করা যায় তা সিসিক দেখিয়ে দিয়েছে। তারা নব নির্বাচিত মেয়রের এই ধারা প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পরও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পরের দিন নগরের চিত্র তাদের সেই আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিলো।