বিলেতের আয়না ডেক্স :- দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন করছেন না সরকার দলীয় এমপি হাফিজ মজুমদার।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পাওয়ার লড়াইয়ে রাজনীতির বাইরে থেকে শামিল হয়েছেন নানা অঙ্গনের আলোচিত ব্যক্তিরাও। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী একজন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার। তিনি এবার বর্তমান সংসদ সদস্য হওয়ার পরও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন দ্বাদশ নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ না নেওয়ার।
এ বিষয়ে হাফিজ মজুমদার দেশ বলেন, আমার বয়স প্রায় ৯০ বছর। এর মধ্যে আমি ৪ বার সিলেট থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছি। চেষ্টা করেছি মানুষের জন্য কাজ করার, মানুষের পাশে থাকার। কতটুকু পেরেছি তা মানুষ বলবে। এখন সময় হয়েছে বিরতি নেওয়ার, তরুণদের রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দেওয়ার। তিনি বলেন, আমরা যদি আসন ধরে বসে থাকি তাহলে নতুনরা কীভাবে সুযোগ পাবে। তা ছাড়া প্রতিটি মানুষের উচিত একটা গন্তব্যে গিয়ে থেমে যাওয়া। আমার সেই সময় হয়েছে। এখন তারুণ্য-যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি। মানুষের সাথে আগের মতো মিশতে পারি না, রাজনীতিতে সময় দিতে পারি না। তাই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ দেশে মানুষ ক্ষমতা কখনো ছেড়ে দিতে চায় না, আপনি কেনো ছেড়ে দিচ্ছেন এমন প্রশ্নে হাফিজ মজুমদার বলেন, এখন রাজনীতিতে আসবে ‘তোমার’ মতো তরুণরা, যাদের অদম্য প্রাণশক্তি, তোমাদের ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ। আমি ছেড়ে দিচ্ছি কিংবা আর নির্বাচন করব না এটার মধ্যে বাহাদুরীর কিছুই নেই। আমার মানুষকে কিছু দেওয়ার মতো সময় শেষ হয়ে গিয়েছে তাই নির্বাচনে লড়ছি না।
হাফিজ মজুমদার সিলেটবাসীর কাছে এক অহংকারের নাম। ব্যক্তিজীবন থেকে রাজনৈতিক জীবন সব জায়গায় তিনি সৎ, পরিচ্ছন্ন ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। সিলেটের শিক্ষা বিস্তারে তিনি পথপদর্শক, আলোকিত মানুষ গড়তে তিনি নিজ উদ্যোগে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করেছেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষা বিস্তারে ও এলাকার মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে যতদিন বাঁচবেন কাজ করে যাবেন।
হাফিজ মজুমদারের এমন সাহসী সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাচ্ছেন তার দীর্ঘ রাজনীতি জীবনের সহকর্মীসহ সিলেটের সর্বস্থরের মানুষ।
তার বিষয়ে সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ১৯৯১ থেকে আমি ও হাফিজ মজুমদার একসাথে নির্বাচনে অংশ নেই। প্রথম নির্বাচনে আমরা দুজন ই হেরে যাই, এরপর ৯৬ এ সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রথমবার জয় লাভ করি। আমরা যারা রাজনীতি করি, হাফিজ ভাই ছিলেন আমাদের বন্ধু, বড় ভাই পরামর্শক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো নেতিবাচক শিরোনাম হননি। রাজনীতির মাঠে তাকে আওয়ামী লীগের সবাই মিস করবে।
এ ব্যাপারে সমাজ অনুশীলন, সিলেটের সদস্য সচিব মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা বলেন, হাফিজ মজুমদার সাহেব একটি অনন্য নজির স্থাপন করলেন। আগের বারও তিনি মনোনয়ন নিতে আগ্রহী ছিলেন না। দলীয় সভাপতির নির্দেশে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। তার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এতে নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথ সুগম হল।
হাফিজ মজুমদার সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) থেকে ১৯৯১, ২০০১ সালে নৌকা নিয়ে পরাজিত হন। ১৯৯৬, ২০০৮, ও ১৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। মাঝে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে তিনি নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে সরে দাঁড়ান। কিন্ত ২০১৮ এর নির্বাচনে তাকে আবার দল থেকে ডেকে নিয়ে নির্বাচনে দাঁড় করানো হয় এবং তিনি জয়লাভ করেন।
হাফিজ আহমদ মজুমদার ১৯৩৩ সালের ২৯ মার্চ সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার নওজিসনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করে মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন। তিনি শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগীতার লক্ষ্যে হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। যেখান থেকে সিলেট জেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। তিনি ডেল্টা হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টারেরও উদ্যোক্তা পরিচালক। সমাজসেবা ও শিক্ষায় অবদানের জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তাকে ‘২০১১ সালের খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ স্বর্ণপদক’ দিয়েছে।