বিলেতের আয়না ডেক্স :- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধন করছেন। ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার নবনির্মিত রেললাইনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রেলের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে কক্সবাজারবাসীর। ঢাকা-কক্সবাজার সর্বনিম্ন ১৮৮ টাকা, সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭২৫ টাকা ভাড়ায় ঢেউয়ের শহরে ছুটবে নগরের ট্রেন।
আজ শনিবার সকালে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজার চান্দের পাড়ার রেলস্টেশনে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু রেলপথ ও আইকনিক রেললাইন স্টেশন নয়, এদিন সমাপ্ত হওয়া ১৩টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য ফলক তৈরি করা হয়েছে। উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় প্রায় ৫৩ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ঝিলংজায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে চোখ ধাঁধানো আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। পুরো স্টেশনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চারপাশে ব্যবহার করা হয়েছে কাচ। ছাদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক স্টিল ক্যানোফি। ফলে দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না স্টেশনে। আর অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই একে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সুবক্তগীন গণমাধ্যমকে বলেন, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালপত্র রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা সংবলিত স্টেশনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। যেখানে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, প্রার্থনার স্থানসহ নানা সুবিধা। স্টেশনে ফুড কোর্ট, হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের বিষয়টি বাইরের এজেন্সি দ্বারা পরিচালনা করা হবে। এ প্রক্রিয়া হবে টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে।
অবকাঠামোসহ আইকনিক স্টেশন ভবন পর্যটক বরণে পুরোপুরি প্রস্তুত। আজ ১২ নভেম্বর উদ্বোধন করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজারে রেল আসবে এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সে স্বপ্ন বাস্তাবে রূপ দিয়েছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নপূরণের দিন। এত উন্নয়ন অতীতে কোনো সরকার করতে পারেনি। শেখ হাসিনার বদান্যতায় উদ্বোধন হতে যাওয়া রেলপথ ও আইকনিক স্টেশন জেলাবাসীর শত বছরের স্বপ্ন পূরণ করছে। বাস্তবায়িত ও চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়নের কারণে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জেলাবাসী নৌকার জয় সুনিশ্চিত করবেন বলে আশাবাদী আমরা। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজারকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। রেল চালু হলে সমৃদ্ধ হবে পর্যটন শিল্প।
, রেল চালু হলে কক্সবাজারের অর্থনীতিতেও দারুণ প্রভাব ফেলবে। মানুষের সময় যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি আরামদায়ক যাত্রাও উপহার দেবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। আর পর্যটক বাড়লে হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন খাতে বেচাবিক্রিও বাড়বে। এতে দেশের রাজস্ব খাতে যোগ হবে প্রবৃদ্ধি।
নিরাপদ আরামদায়ক হিসেবে রেলকে গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ। কক্সবাজারে ট্রেনে করে আসার জন্য সারা দেশের মানুষ ভীষণ আগ্রহী হয়ে আছে। এ প্রকল্পের একটি বড় অংশ কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং। যেটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম। প্রকল্পের বিভিন্ন অবস্থান একাধিকবার পরিদর্শনও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন, পর্যটন শহর ছোঁবে রেল লাইন। এটি নির্মাণ হলে সমুদ্রসৈকতের পর্যটকরা পাবেন স্বস্তিদায়ক যাতায়াত। বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক। দৈনিক যাতায়াত করতে পারবে প্রায় ১ লাখ পর্যটক।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন , প্রায় ৭৬ কিলোমিটার রেল লাইন দৃশ্যমান, নয়টি স্টেশনের মধ্যে তিনটির কাজ শেষ, পাঁচটির সৌন্দর্যবর্ধন ও দুটির অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনটি ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার ও রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেলপথে হাতি চলাচলে একটি ৫০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশের ৪৫তম জেলায় যুক্ত হবে রেল।
জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এ কারণে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮৮ টাকা: ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার রেলযোগাযোগ চালু হলে সর্বনিম্ন ভাড়া থাকবে ১৮৮ টাকা। যাত্রী ও পর্যটকরা এ ভাড়ায় কক্সবাজার আসতে পারবেন, যা বাস ভাড়ার চেয়ে এক-তৃতীয়াংশেরও কম। রেল সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ১ ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার শুধু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। পাশাপাশি কমিউটার ও মেইল ট্রেনও চালু হবে।
সচিব বলেন, ভবিষ্যতে এ রুটে পর্যটক কোচ চালু করা হবে। শুধু ঢাকা নয়, উত্তর অঞ্চল ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও কক্সবাজারে রেলপথে আসা যাবে। এতে যোগাযোগের নতুন পথ উন্মোচন হবে। ১ তারিখ থেকে রেল চালু হলেও কক্সবাজারের আইকনিক ঝিনুক স্টেশনে সবরকম সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। পর্যায়ক্রমে এসব সুবিধা চালু করা হবে।
বাংলাদেশ রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ঢাকা থেকে যে ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছবে, সেটি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ছাড়বে ঢাকা থেকে। আর কক্সবাজার এসে পৌঁছাবে ৬টা ৩০ মিনিটে। পর্যায়ক্রমে এ রুটে আরও ট্রেন বাড়ানো হবে।
রেলওয়ের বাণিজ্যিক শাখা জানিয়েছে, চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কক্সবাজারের প্রকৃত দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে রেলওয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্য অতিরিক্ত ভাড়া ও দূরত্ব (পয়েন্ট চার্জ) নির্ধারণ করছে। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার রুটে সাতটি সেতুর জন্য বাড়তি ৫৪ কিলোমিটারের ভাড়া আরোপ করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এ পথে নন-এসি অর্থাৎ শোভন চেয়ারে ৫০০ টাকা ও এসি সিটে ৯৫০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। এসি সিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ১০০ টাকা। ভ্যাটসহ এসি কেবিনে ১ হাজার ২০০ ও এসি বার্থে ভাড়া পড়বে ১ হাজার ৭২৫ টাকা।
রেলসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, আশা করছি ১ ডিসেম্বর থেকেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। আর সেই ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া যেটি ধরা হয়েছে, সেটি হচ্ছে ১৮৮ টাকা। আর এটি নন-এসি মেইল ট্রেন। সর্বোচ্চ ভাড়া এসি বার্থে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। বর্তমানে রেলের যে ভাড়ার হার আছে, সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ রুটে দুটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব থাকলেও, ঢাকা থেকে প্রথমদিকে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে।
রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, দিনে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করবে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে ট্রেনটির।
ট্রেনটির ছয়টি নাম প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। এগুলো হলো ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’, ‘হিমছড়ি এক্সপ্রেস’, ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’, ‘ইনানী এক্সপ্রেস’, ‘লাবণী এক্সপ্রেস’ ও ‘সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেস’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাম চূড়ান্ত করবেন।
ট্রেনে দুটি খাবার বগি, একটি পাওয়ার কার, তিনটি এসি কেবিন, পাঁচটি এসি চেয়ার, ছয়টি শোভন চেয়ার এবং একটি নন-এসি ফার্স্ট সিট বগি থাকবে। ঢাকা থেকে যাত্রার সময় আসনসংখ্যা হবে ৭৯৭। ফিরতি পথে আসন হবে ৭৩৭।