মহাকাব্যের চরিত্র সিরাজুল আলম খান। আ স ম আব্দুর রব।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- মহাকাব্যের চরিত্র সিরাজুল আলম খান। আ স ম আব্দুর রব।
বাঙালি জাতির মহাকাব্যের অন্যতম চরিত্র সিরাজুল আলম খান দাদাকে নিয়ে আমার আত্মায় বহন করা, অগণিত উপলব্ধি এবং জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কিছু মহৎ কীর্তি নিয়ে কয়েকটা কথা বলব ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু দাদা না ফেরার দেশে যাওয়ার পর আমার বলা বা লেখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হয়তো বা এই জীবনে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা আর হবে না। আমার কোনো জীবনী প্রকাশিত হয়নি বা কোনো জীবনী লিখেও যাইনি।
ফলে দাদার সঙ্গে প্রায় ছয় দশকের সম্পর্কের অনেক ঘটনাই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তবু কিছু বক্তব্য প্রকাশের তাগিদ অনুভব করছি। সিরাজুল আলম খান কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন, তাঁর বাবার মৃত্যুতে। আমি তখন নোয়াখালী ছাত্রলীগের কর্মী।
ছাত্রলীগ নেতা খালেদ মোহাম্মদ আলী ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন, সিরাজুল আলম খানের কাছে। ‘ও হচ্ছে রব, যার কথা আপনাকে আমি আগেই বলেছিলাম’। খালেদ মোহাম্মদ আলীর কথায় দাদা আমার দিকে তাকালেন। দাদাকে এই প্রথম দেখা।

বুদ্ধিমান, দৃঢ়চেতা, তেজী স্বভাবের মর্যাদাসম্পন্ন একজন যুবক দেখলাম। অদ্ভুত মমত্ববোধ করলাম। কিছু কথা হলো, তারপর মাটি স্পর্শ করে শপথ নিলাম। সেই শুরু। ক্রমাগত নেতা, নির্দেশদাতা, রাজনৈতিক-দার্শনিক শিক্ষক এবং নৈতিক কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক।
সশস্ত্র মুক্তি-সংগ্রামের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ সৃষ্টি হলে দাদার ওপর আমাদের আস্থা এবং বিশ্বাসকে কেউ ভাঙতে পারেনি। ফলে ক্ষমতার মোহ আমাদের আবদ্ধ করতে পারেনি। দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে জীবনবিপন্ন বিপদে নাম তালিকাভুক্ত করেছিলাম। সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা, শুধু আদর্শিক স্বপ্নের সংঘাতে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বিপরীতে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছিলাম।
প্রচণ্ড রাজনৈতিক বিরোধ হয়েছে, অনেক সিদ্ধান্তে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছি, বিতর্কিত হয়েছি কিন্তু কোনো মতপার্থক্য, বিরোধ, ভুল বোঝাবুঝির অজুহাতে একদিনের জন্যও সিরাজুল আলম খানকে ছেড়ে যাইনি। কারণ, আমি বিশ্বাস করতাম-সমাজ বিশ্লেষণ, আন্দোলন ও সংগ্রামের কৌশলের প্রশ্নে সিরাজুল আলম খান অদ্বিতীয়, অসাধারণ এবং অনন্য।
ভুল হতে পারে কিন্তু উদ্দেশ্য মহৎ। কোনো ব্যক্তিগত লাভালাভ দিয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। সব সময় বিশ্বাস করেছি পরিস্থিতি অনুযায়ী এটাই হয়তো সবচেয়ে ন্যায়সংগত ও বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন।
সিরাজুল আলম খান স্কুল এবং কলেজজীবনে মুক্তি-সংগ্রামের নেতা মহাত্মা গান্ধী, টিটো, নাসের, লুবুম্বা এবং নক্রুমার ইতিহাস পড়েন, অসম সাহসিকতা ও অকুতোভয় নেতৃবৃন্দের জীবনী পড়েন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুসহ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহানায়কদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হতে থাকেন। অন্যদিকে আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ’ বক্তৃতা, মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এসব অবিস্মরণীয় ভাষণ থেকে নিজের চেতনা শানিত করেন। লেনিন, ফিদেল কাস্ত্রো ও চে গুয়েভারার মতো গণমানুষের ত্রাণকর্তা এবং ইতিহাসের অতুলনীয়, অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হতে থাকলেন। ভাষা আন্দোলন, হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং ঐতিহাসিক ২১ দফা, আইয়ুববিরোধী গণবিক্ষোভ সবকিছু তাঁর চেতনায় দাগ কেটে গেল। ভূগোল ও ইতিহাসে বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ওপর গভীর মনোযোগী হলেন। মাত্র ২১ বছর বয়স। খ্যাতি, অর্থ বা পদমর্যাদা কোনোটাই তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগায়নি। তাঁর মনে উদিত হয়েছে জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার্থে স্বাধীনতা ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও কণ্টকাকীর্ণ বিপ্লবের পথ। ‘নিউক্লিয়াস’ বা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ গঠিত হয়েছিল সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমদের সমন্বয়ে। ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা, এগারো দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, বিএলএফ ও জয়-বাংলা বাহিনী গঠনসহ সব ছাত্র আন্দোলন গণবিক্ষোভ, গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, পতাকা উত্তোলন, ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ বিশেষ-বিশেষ ঘটনা এখন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হচ্ছে। নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম এখন ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারিগরদের একজন-কাজী আরেফ আহমদ তাঁর ‘বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র’ গ্রন্থে বলেছেন- ’৬৮, ’৬৯ ও ’৭০-এ অনুষ্ঠিত আন্দোলন এবং এর খুঁটিনাটি পর্যায়, কৌশল প্রণয়ন ও গ্রহণ- সবকিছুই এককভাবে নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে সিরাজ ভাই ঠিক করতেন। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি, বিভিন্ন স্তর ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর দক্ষতা ও নিপুণতা, পরবর্তী সময়ে সত্তরের নির্বাচন এবং অবাঙালি প্রশাসন ভেঙে পড়লে সমান্তরাল প্রশাসনিক কর্মকৌশল ও তাঁর জ্ঞানের পরিধি- সবার কাছে জাতীয় পর্যায়ের এক অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে পরিচিত করে। বিভিন্ন আন্দোলনকে গণমুখী করার কৌশল অবলম্বনের কৃতিত্ব এককভাবে ‘নিউক্লিয়াস’-এর। সিরাজুল আলম খান ‘নিউক্লিয়াস’র প্রাণ।
অতি সহজে এবং স্বল্প সময়ে সশস্ত্র যুদ্ধের পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সংগঠিত সংগঠনসমূহের ভূমিকা ভারতীয় সমর বিশেষজ্ঞদেরও অবাক করে দিয়েছিল। সিরাজুল আলম খানের এ ধরনের তৎপরতা এবং নিউক্লিয়াসের কার্যক্রম- কিউবা ও আলজেরিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের সময়কার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
নোয়াখালী থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমি নিউক্লিয়াসের ব্যাপক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়ি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া, সরাসরি ছাত্রদের ভোটে ডাকসুর ভিপি হওয়া, স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন, পতাকা উত্তোলনসহ সব পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ করেছেন সিরাজুল আলম খান। সংগঠনের অভ্যন্তরে ‘কূটনীতি’, ‘গ্রুপিং’ বা ‘লবিং’ কোনোটাই আমার জানা ছিল না। কিন্তু আমার পদ-পদবি, ঐতিহাসিক দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণে দাদাই ছিলেন আমার একমাত্র পথপ্রদর্শক। তিনি আমার আশীর্বাদ। আজকের বাস্তবতায় কল্পনাও করা যায় না, তখনকার সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে কী সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্ম পরিচালনা করতে হয়েছে।
দাদা ছিলেন স্বাধীনতা অন্তঃপ্রাণ, স্বাধীনতা উদ্দীপ্ত অভিযাত্রী, কোনো সংকটই তাকে নিভৃত করতে পারেনি। কোনো বাধা-বিঘ্ন তাঁকে নিরুৎসাহিত করতে পারেনি। না খেয়ে থাকা, পকেট খালি থাকা, আত্মগোপনে থাকা, গ্রেফতার হওয়া, অপঘাতে মৃত্যু- সবকিছুর জন্যই তিনি নৈতিকভাবে প্রস্তুত থাকতেন। সব বিপদ-আপদ অগ্রাহ্য করে, নিজের কাঁধে দায় তুলে নিয়ে, পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করে আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতেন- এটাই সিরাজুল আলম খান।
স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ও সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা, অবদান, পারস্পরিক আস্থা, তৎকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে বিচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির যে লৌহকঠিন ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা হাজার বছরে আর কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি বা হবেও না।
অন্যদিকে আন্দোলন-সংগ্রামকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ধাবিত করার প্রাণপুরুষ ছিলেন সিরাজুল আলম খান। বঙ্গবন্ধু ও সিরাজুল আলম খান দুজনই জাতিরাষ্ট্রের জন্য অনিবার্য। তাঁদের একজনের অনুপস্থিতিতে বাঙালির জাতিরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ কঠিন হয়ে পড়ত।
ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন সিরাজুল আল খানের নির্ভরশীল ও আপসহীন নেতা। সুতরাং বঙ্গবন্ধু কাল্ট সৃষ্টিতে দাদা সর্বকৌশল প্রয়োগ করেছেন। ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায়- রেজাউল হক চৌধুরী মোস্তাক কর্তৃক ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি এবং তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে বিশাল জনসভায় তা ঘোষণা করানোর পরিকল্পনা- সবই ছিল সিরাজুল আলম খানের। ইশতেহারে সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করেন।
সশস্ত্র মুক্তি-সংগ্রামের পর বিএলএফের অস্ত্র জমা প্রদান অনুষ্ঠানে মাইকের সামনে সিরাজুল আলম খান নিজেই ‘মুজিববাদ’ স্লোগান উত্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু-বিহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন সিরাজুল আলম খানের কোনো দিন ছিল না। তাই স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষায় রাষ্ট্রীয় রাজনীতির আলোকে শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের দাবিতে বঙ্গবন্ধুর কাছে সিরাজুল আলম খান ১৫ দফা সুপারিশমালা উত্থাপন করেছিলেন। এই ১৫ দফার ৩ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘বঙ্গবন্ধুর মর্যাদার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু থাকবেন সব দলের ঊর্ধ্বে। প্রয়োজন বোধে তিনি রাজনীতির বাইরে অবস্থান করবেন। তাঁকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির চেতনা বিকাশের ধারা প্রবাহিত হবে। এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণের কোনো পরিকল্পনা সিরাজুল আলম খানের ছিল না। এমনকি ১৫ দফা সুপারিশমালার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর কারণে বঙ্গবন্ধুর গণবিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো ঐতিহাসিক কারণ থাকত না এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মতো পরিকল্পনা করার কারও সাহস হতো না। দেশ ও জাতি গঠনে বাঙালির বৈশিষ্ট্য, স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যতা অক্ষুণ্ন রেখে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে শোষণের অবসানের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ উপযোগী গণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনে সিরাজুল আলম খান ‘মুজিববাদ’ প্রতিষ্ঠা করার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে দলের ঊর্ধ্বে রেখে বাঙালি জাতির চেতনা বিকাশের ধারা প্রবাহিত করার উচ্চতর রণনীতি ও রণকৌশল নির্ধারণ করেছিলেন সিরাজুল আলম খান। তিনি চিরাচরিত প্রথার সেনাবাহিনী গঠন না করে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় জাতীয় পর্যায়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ‘রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী’ গঠন করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সিরাজুল আলম খানের ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা, জাতির প্রতি অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি সবকিছুকে উপেক্ষা করে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা এবং ঔপনিবেশিক মডেলের সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত করে বরং বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সংকটকে মোকাবিলা না করে, জরুরি অবস্থা জারি, সংবাদপত্র বন্ধ, একদলীয় শাসনব্যবস্থা, সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকশাল গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে সিরাজুল আলম খান পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত- যারা চরম ব্যর্থ হয়েছিল পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ তাদের কাউকে কাউকে মন্ত্রী-এমপি করেছে। ক্যু পাল্টা ক্যুর বিশ্বে বাকশাল সরকার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি, কেন বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ ঘণ্টা সিঁড়িতে পড়ে থাকল, বঙ্গবন্ধুর লাশ সিঁড়িতে রেখে কারা শপথ করল এসব সত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো পর্যালোচনা নেই, কোনো মূল্যায়ন নেই। উপরন্তু কথায় কথায় সিরাজুল আলম খানকে ক্রুশবিদ্ধ করে নিজেদের ইতিহাসে ঠাঁই দিতে ব্যর্থ চেষ্টা করে।
বঙ্গবন্ধু এবং সিরাজুল আলম খানের গভীর সম্পর্ক কোনো দিন শেষ হয়নি। আমিসহ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের অনেক নেতাই যখন বছরের পর বছর কারাগারে, তখনো সিরাজুল আলম খানকে একদিনের জন্যও গ্রেফতার করা হয়নি।
তাঁদের দুজনের সম্পর্কের গভীরতা, উচ্চতা বুঝতেও আওয়ামী লীগ ব্যর্থ। সিরাজুল আলম খানকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যে চরম অসম্মান প্রদর্শিত হয়, সে বিবেচনা বোধও আওয়ামী লীগের অনেকের নেই।
সিরাজুল আলম খান-বঙ্গবন্ধু কাল্ট সৃষ্টি করেছেন কিন্তু নিজের নামকে প্রাধান্য দেননি। এখানেই তিনি অনন্য। স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ও সিরাজুল আলম খান অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য। পানি অপসারিত করলে সাগরও যে অপসারিত হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে তা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ বা বৈরীভাব প্রকাশ করা কোনোক্রমেই ন্যায্যতা নিশ্চিত করে না।
সিরাজুল আলম খান চিরতরে বিদায় নিয়েছেন কিন্তু বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের অস্তিত্বে তিনি সর্বদা বিরাজমান থাকবেন।
লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ ও ডাকসু ভিপি

আরও পড়ুন:  বঙ্গভবন স্বল্প পরিসরে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top