৫০ বছর পূর্ণ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- ৫০ বছর পূর্ণ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি :- গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯৩৫-এর অধীনে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ২৫০ জন সদস্যের সমন্বয়ে ‘বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি’ গঠিত হয় এবং এর প্রথম অধিবেশন শুরু হয় কলকাতায় ১৯৩৭ সালের ৭ এপ্রিল। বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির স্পিকার ছিলেন খান বাহাদুর এম আজিজুল হক এবং ডেপুটি স্পিকার ছিলেন এম আশরাফ আলী। বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে এবং ১৯৪৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। নুরুল আমিন স্পিকার ও তোফাজ্জল আলী অ্যাডভোকেট ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।

ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি: ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির নির্বাচনে পূর্ববঙ্গ থেকে এবং আসাম লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সিলেট জেলা থেকে নির্বাচিত মোট ১৭১ জন সদস্যের সমন্বয়ে এই ‘ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি’ গঠিত হয়। ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশন ঢাকার জগন্নাথ হলে ১৯৪৮ সালের ২৯ মার্চ শুরু হয়। ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন যথাক্রমে আব্দুল করিম এবং নাজমুল হক।
ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালের ৩ মার্চ। মোট আসন সংখ্যা ৩০৯। ঢাকার রমনাস্থ অ্যাসেম্বলি হাউজে ৫ আগস্ট ১৯৫৫ প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। আব্দুল হাকিম স্পিকার এবং সাহেদ আলি ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে ইস্ট পাকিস্তান লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশন ৯ জুন ১৯৬২ শুরু হয়। আব্দুল হামিদ চৌধুরী স্পিকার নির্বাচিত হন। গমির উদ্দিন প্রধান ডেপুটি স্পিকার (সিনিয়র) এবং মো. মশিহুল আজম খান ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু যেভাবে: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রক্তক্ষয়ী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯ জন সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের ৩০০ জন সদস্য অর্থাৎ মোট ৪৬৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অনুযায়ী গঠিত গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকার তেজগাঁওস্থ সংসদ ভবনে শুরু হয়। গণপরিষদের প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হন শাহ আব্দুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পিকার হন মুহম্মদুল্লাহ। স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদ মৃত্যুবরণ করায় ডেপুটি স্পিকার মুহম্মদুল্লাহ পরবর্তীকালে স্পিকার এবং মো. বায়তুল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
৭ মার্চ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল মোট ১৫টি। অর্থাৎ প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১৫ জন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ঢাকা তেজগাঁওস্থ জাতীয় সংসদ ভবনে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। প্রথম জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন মুহম্মদুল্লাহ এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন বায়তুল্লাহ। পরবর্তীকালে মুহম্মদুল্লাহ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে আবদুল মালেক উকিল স্পিকার নির্বাচিত হন।
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের ২য় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২য় জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ১৫টি থেকে ৩০টি-তে উন্নীত করা হয়। এতে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩০ জনে। ২ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে ২য় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ২য় জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন মির্জা গোলাম হাফিজ এবং ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার সুলতান আহম্মেদ চৌধুরী। ২য় জাতীয় সংসদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ আসন থেকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত প্রথম মহিলা সদস্য ছিলেন সৈয়েদা রাজিয়া ফয়েজ।
৭ মে ১৯৮৬ সালে ৩য় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনসহ সংসদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৩০ জন। প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১০ জুলাই ১৯৮৬ সালে। স্পিকার নির্বাচিত হন সামসুল হুদা চৌধুরী এবং এম কোরবান আলী ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
৪র্থ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩ মার্চ ১৯৮৮ সালে। ২৫ এপ্রিল ১৯৮৮ সালে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৩০ জন। সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনসংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ৪র্থ জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল না। ৪র্থ জাতীয় সংসদে সামসুল হুদা চৌধুরী স্পিকার এবং রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ৫ এপ্রিল ১৯৯১ সালে সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ৫ম জাতীয় সংসদে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৩০ জন। কারণ মহিলাদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসন সংক্রান্ত আইন প্রণীত হওয়ায় ৫ম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পুনরায় ৩০ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ম জাতীয় সংসদের প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান বিশ্বাস এবং ডেপুটি স্পিকার হন শেখ রাজ্জাক আলী। পরে আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় শেখ রাজ্জাক আলী স্পিকার ও হুমায়ুন খান পন্নী ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯ মার্চ ১৯৯৬। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩৩০টি। শেখ রাজ্জাক আলী ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং এল কে সিদ্দীকি ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
৭ম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ জুন ১৯৯৬ সালে। ৭ম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ জুন ১৯৯৬ সালে। ৭ম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৪ জুলাই ১৯৯৬ সালে। মোট সদস্যসংখ্যা ছিল ৩৩০ জন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্পিকার এবং আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করায় পরবর্তীকালে আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট স্পিকার এবং অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
৮ম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। ৮ম জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশন শুরু হয় ২৮ অক্টোবর। এই সংসদের মোট সদস্য ছিলেন ৩০০ জন। কারণ সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনসংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সংসদে কোনো সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল না। ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার ৮ম জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং আখতার হামিদ সিদ্দিকী ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
৮ম সংসদ সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী বিল, ২০০৪ পাশ করে। এই আইন দ্বারা সংরক্ষিত মহিলা আসনসংখ্যা ৩০টি থেকে ৪৫টি-তে উন্নীত করা হয়। এতে সংসদেও মোট সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪৫ জন। এই আইন প্রবর্তনকালে ৮ম সংসদের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এবং ৮ম সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের ১ম বৈঠকের তারিখ থেকে শুরু করে ১০ বছর কাল অতিবাহিত হওয়ায় অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ৪৫টি আসন কেবল মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
জাতীয় সংসদ ভবন। ছবি: সংগৃহীত
৯ম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ৯ম জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশন শুরু হয় ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। নবম সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়। এই সংশোধনীতে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়। বর্তমানে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ৩৫০ জন। আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট ৯ম জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং শওকত আলী ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার নির্বাচিত হন।
দশম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। এই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় একই বছরের ২৯ জানুয়ারি। দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আর ডেপুটি স্পিকার হন মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। একাদশ জাতীয় সংসদের ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তৃতীয় বারের মতো স্পিকার এবং মো. ফজলে রাব্বী মিয়া দ্বিতীয় বারের মতো ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া মৃত্যুবরণ করলে ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট মো. শামসুল হক টুকু ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। ৫০টি সংরক্ষিত আসনসহ একাদশ সংসদের মোট আসনসংখ্যা ৩৫০টি

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বমানের স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলা হবে : প্রধানমন্ত্রী

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top