সম্মিলিত প্রয়াসে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

বিলেতের আয়না ডেক্স :- শ‌হিদুল ইসলাম, প্রিতি‌নি‌ধি

সম্মিলিত প্রয়াসে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্ধ শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হয়নি। এ স্বীকৃতি অর্জনে কাজ করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর উদ্যোগে ২০১৭ সাল থেকে জাতীয়ভাবে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’ দেশব্যাপী গণহত্যা বিষয়ক জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে গণহত্যার প্রমাণক ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ৩৪টি জেলায় সাড়ে চার হাজার বধ্যভূমিসহ ১৭ হাজার ২৮৬টি গণহত্যা, গণকবর চিহ্নিত হয়েছে। এতে ধারণা করা যায় যে,একাত্তরের গণহত্যার প্রকৃত সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে এবং এর মাধ্যমে গণহত্যার সংখ্যাতাত্ত্বিক বিতর্কের অবসান ঘটবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগসহ সবার সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রয়াসে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে। জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এসব কথা বলেন।

‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এর আহবায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা সাবেক সচিব মুসা সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

আরও পড়ুন:  রাউজান খলিফার ঘোনায় আওলাদে রাসুল (স:) সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারীর শুভাগমন

আলোচকরা উল্লেখ করেন, ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তে যে বিষয়গুলোর উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে একাত্তরের বর্বরতা অবশ্যই গণহত্যার স্বীকৃতির দাবী রাখে। বাংলাদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে গণহত্যার চিহ্ন নেই। পাকিস্তানী নেতাদের লেখাতেই প্রমাণিত যে তারা তিন মিলিয়ন বাঙালিকে হত্যা করবে। প্রবাসী বাঙালি, সংগঠন, মানবতাবাদী, বিশ্বসংগঠনগুলোর আরো জোরদার কর্মসূচি নিতে হবে। বক্তারা বলেন, আমরা ৫৩ বছর ধরে স্বীকৃতির দাবি করে আসছি। প্রয়োজনে আরো ৫৩ বছর এই দাবি করেই যাব। গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের। এই দাবীতে ভেদাভেদ ভুলে দল-মত নির্বিশেষে সবার ঐক্যমত প্রয়োজন।
আরোচকরা উল্লেখ করেন, রাজাকার, আলবদর, আশ শামস এখনো বাংলাদেশে সক্রিয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, বসনিয়া, রুয়ান্ডা, মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ কয়েকটি পরাশক্তি দেশের পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান করার কারণে একাত্তরের (তখন) গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেনি। তবে আমরা আশা করছি, দ্রুতই একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলবে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে যেসব বই ও প্রকাশনা বের হয়েছে সেগুলোকে বাংলা একাডেমির মাধ্যমে ইংরেজিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বসনিয়া, আর্মেনিয়া, রুয়ান্ডা, মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে এসব গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বক্তারা অনুরূপভাবে একাত্তরের গণহত্যার দ্রুত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানান।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top