বিলেতের আয়না ডেক্স :- দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আ.রাভ খানকে দেশে আনার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দুবাই থেকে দেশে আনার জন্য তোড়জোর শুরু করেছে পুলিশ। তবে পাসপোর্ট জটিলতার কারণে তাকে দেশে আনা মোটেও সহজ নয়। রবিউল ইসলাম জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক হলেও নাম বদলে আরাভ খান নাম ধারণ করে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যান।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানায়, ইন্টারপোল আরাভ খানকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে না, কেননা, তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ভরতের পাসপোর্টে ভিসা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। দুবাইয়ে তার অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তিও নেই। তা ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন তিনি। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান। তাকে দেশে আনার বিষয়টি নির্ভর করছে দুদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভারত ও দুবাই পুলিশের সহযোগিতা ও সদিচ্ছার ওপর।
বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি দুবাইয়ে অবস্থানকারী রবিউল ইসলাম। ইন্সপেক্টর মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরে জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ডিএমপির বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন।গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইন্সপেক্টর মামুন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি ১০ জন। এদের মধ্যে দুজন কিশোরী। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। মামুন হত্যার ঘটনায় লাশ গোপন করতে সহায়তা করেছেন রবিউল। খুনে সরাসরি জড়িতরাও রবিউলের সহযোগী। রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। মামলায় জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়াও।
এ মামলার আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দীদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)। উচ্চ আদালত মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন। যদিও সে মামলা এখনো ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত এক বছরে দুবার দেশে এসেছিলেন আরাভ খান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে একবারও তিনি গ্রেপ্তার হননি। দেশে এসে ঘুরেফিরে আর ফেসবুকে লাইভ করে আবার নিরাপদে দুবাই ফিরে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া ইন্টারপোলের কাজ নয়। এক দেশের অপরাধী অন্য দেশে আশ্রয় নিলে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইলে তারা অবস্থান শনাক্ত করে দেয়। ফিরিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার ইন্টারপোলের নেই।
আরাভ খান ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দুবাইয়ে আছে। কিন্তু এই আরাভ খান যে বাংলাদেশের নাগরিক রবিউল তা দুবাইকে নিশ্চিত করতে হবে। ভারত যদি দুবাইকে জানায় যে আরাভ খানকে বাংলাদেশে পাঠালে তাদের কোনো অসুবিধে নেই, তবে সম্ভব। তাও অনেক প্রক্রিয়া আছে। এখন ভারতের সঙ্গে দুবাইয়ের চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) আছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। যদি থাকে তবে আবার ভারতও আরাভ খানকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে। কারণ, রবিউল তো আরাভ নামে সেখানেও ভুয়া পাসপোর্ট করে অপরাধ করেছেন। সেখানে আবার সে দেশীয় আইনি প্রক্রিয়া আছে। সব মিলিয়ে জটিল প্রক্রিয়া।
আরাভ খানের পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ আছে। আরাভ যখন বাংলাদেশে ছিলেন তখন তিনি অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার হয়েছেন, জামিনও পেয়েছেন। হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর তিনিআত্মগোপনে চলে যান।
রবিউল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে, সেখানে তার বিরুদ্ধে অন্তত ৯টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। মামলার সংখ্যা আরো বেশি।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা সহজ কোনো কাজ না। বাংলাদেশি রবিউল তথা ভারতীয় আরাভ খানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনাটা খুব সহজ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, তার নাগরিকত্ব বিভ্রাট ও নামে বিভ্রাট আছে। এসব তো তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষ বিষয়। সব সমস্যার সমাধান করেই আনতে হবে। এমনও হতে পারে আমিরাত তাকে ভারতে পাঠাবে যদি ভারত চায়। তখন তাকে ঢাকায় ফেরাতেভারতের সহযোগিতা লাগবে।তবে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আরাভকে ঢাকায় পাঠানোর সুযোগ খুবই কম। ভারতের সহযোগিতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এই জটিল প্রক্রিয়ায় খুবই সচেতনভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে।
আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা জটিল প্রক্রিয়া বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দুবাইয়ের সঙ্গে আমাদের যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে, সে অনুযায়ী তিনি যদি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হতেন, তাহলে বিষয়টা সহজ হতো, কিন্তু তিনি তো বন্দি নন। সে জন্য জটিলতা রয়েছে।’