বিলেতের আয়না ডেক্স :- জোটের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে মুখে এক কথা , কাজের বেলায় কোন মিল খোঁজে পাওয়া যায় না — রাশেদ খান মেনন। ১৪ দল নিয়ে মেনন
ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নিয়ে আক্ষেপ করেছেন শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, জোটের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে মুখে একধরনের কথা হয়, কিন্তু কাজে সেটির মিল পাওয়া যায় না।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা ১৪ দলের শরিক। আমাদের অনুরোধ ও আবেদন, দয়া করে আক্রমণের মুখে পেছাবেন না। আমাদের অর্জনগুলোকে সামনে নিয়ে আসবেন। এর জন্য দরকার অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য, দরকার আমাদের মিত্রদের পরস্পরের বাঁধনকে আরও শক্ত করা। কিন্তু আমরা লক্ষ করি যে সেই বাঁধন ক্রমাগত শিথিল থেকে শিথিলতর করার ব্যবস্থা হয়৷ মুখে কথা হয় এক, কাজে সেটা মেলে না।’
সামনে জাতীয় নির্বাচনে শুধু নিজেদের জন্য নয়, ১৪ দল ও অসাম্প্রদায়িক সব গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য ভোট চাইতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানান রাশেদ খান মেনন। এই ঐক্যের প্রশ্নটি মীমাংসা হওয়া অতি জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বক্তব্যে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন রাশেদ খান মেনন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যাদের বন্ধু, তাদের শত্রুর কোনো প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাশেদ খান মেনন বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে বিস্তৃত করার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। আজ আমাদের দেশকেও ওই যুদ্ধ-চক্রান্তে জড়ানোর জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় তারা কোয়াড নামে যে জোট গঠন করার চেষ্টা করছে, সেখানে বাংলাদেশকেও যুক্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা আনন্দিত যে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশ সেই চক্রান্তে পা দেয়নি। সেই কারণেই তারা আজ আমাদের নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং আমাদের দেশের সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একের পর এক হুমকি দিচ্ছে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেখানে হাত দেয়, সেই দেশ পুড়ে যায়—মন্তব্য করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘সেই মার্কিনিদের আমার দেশে নিয়ে আসার তৎপরতা চলছে৷ এর বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান, আমার দেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে কারও হস্তক্ষেপ যেন গ্রহণ করা না হয়, কোনো পিছুটান যেন এখানে না আসে, আমরা যেন আত্মসমর্পণ না করি।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সমালোচনা করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজ তারা (বিএনপি) বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে তাদের হাতে দিতে বলছে। দেশে নাকি অরাজক পরিস্থিতি ও ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হয়েছে! ১০ দফা ও ২৭ দফা দিয়ে তারা বলছে, তারা নাকি রাষ্ট্রের মেরামত ও সংস্কার করবে! আজ মানুষ জীবনসংকট নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে সংগঠিত হচ্ছে, তখন তাদের কাছে এসবের কোনো মূল্য নেই৷ কারণ, তারা আবারও বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো একটি জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।’
সম্প্রতি পাঠ্যবই নিয়ে চলা বিতর্ক নিয়েও কথা বলেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে আমরা আমাদের শিক্ষানীতিকে ধ্বংস করতে দেব না। নতুন পাঠ্যবই এসেছে। সেই বই নিয়ে চারদিকে রা-রা শুরু হয়ে গেছে৷ কারণ, সেখানে বিজ্ঞান, প্রগতি ও অগ্রগতির কথা আছে। আজ তারা বলছে যে এসব কিছুই রাখা যাবে না এবং আমাদের শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেছেন যে ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে, তদন্ত কমিটি করে শুধরে নেব। এই যে আত্মসমর্পণ ও পিছু হটা, এটা গ্রহণ করা যায় না। ওই বইয়ের প্রশ্ন নিয়ে শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল ও হাসিনা খানের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে কী নোংরা আক্রমণ চলছে! বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে দাঁড়িয়ে বিষোদ্গার করছে। এগুলো আমরা গ্রহণ করতে পারি না। কারণ, অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ওই শিক্ষানীতি আমাদের ঐতিহ্য ও অধিকার।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এ সময় অন্যদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা নূর আহমেদ, কিশোর রায়, হিমাংশু সাহা প্রমুখ বক্তব্য দেন। কর্মসূচিতে দলটির ঢাকাসহ ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার কয়েক শ নেতা-কর্মী অংশ নেন।