বিলেতের আয়না বিশেষ রির্পোটঃ-পাবলিক ডিপ্লোমেসি-অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
নয়া দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরে প্রবেশ করার পথে পরে চানাক্যপুরীসহ বেশ কিছু অভিজাত এলাকা। বিশাল চওড়া রাস্তাঘাট, গ্রীন বেল্ট, সুরম্যসব দুতাবাস ভবন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সরকারী ভবন আর উর্দ্বতন সরকারী কর্মকর্তাদের বাসভবনের মন মাতানো সমারোহের ভীড়েও আলাদা করে দৃষ্টি কারে ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয়একটি থিংক ট্যাংকের কার্যালয়টি।
বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই থিংক ট্যাংকটির প্রধান ভারতের উপরাষ্ট্রপতি স্বয়ং। তবে এর চেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এই থিংক ট্যাংটির বয়স স্বাধীন ভারতের বয়সের চেয়েও বেশি। ভারত স্বাধীন হওয়ার ঢের আগের। ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্ব ভারত স্বাধীন হওয়ার আগেই বুঝেছিলেন যে দেশটি একদিন দারিদ্রের তকমা ঝেড়ে ফেলে আবারো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। আর সেই ভারতের বিশ্ব ব্যাপি যে যোগাযোগ, সেই জায়গাটায় সরকারী ডিপ্লোমেসির পাশাপাশি পাবলিক ডিপ্লেমেসিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যে কারনে দুরদর্শী সেই নেতৃত্ব এই থিংক ট্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বলাই বাহুল্য তাদের সেই প্রজ্ঞা আজ শতভাগ সঠিক বলে প্রমানিত হয়েছে।
সম্প্রতি কোলকাতায় বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালী সম্মেলনে যোগদিয়ে সদ্যই দেশে ফিরেছি। বিশ্বের শতাধিক মেট্রোপলিসে বসবাসরত বিশ্বের নানা দেশের নানা রঙের পাসপোর্টধারী খাস বাংলা ভাষাভাষী বাঙালীদের মধ্যেনেটওয়ার্কিং আর বাঙালীদের ভেতর ‘প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে’ টাইপ সহযোগীতার মেলবন্ধন তৈরী করাই এই বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রধান লক্ষ্য। বলাই বাহুল্য বাঙালীদের প্রধান দুটি বাসভ‚মি, বাংলাদেশ আর ভারত বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এজেন্ডার শীর্ষে রয়েছে। একথা অস্বীকার করার একদমই জো নেই যে বাংলাদেশ এবং ভারতের সরকার দুটিও এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। বাংলাদেশের মত ছোট একটি দেশে যেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভারতের দুতাবাসের পাশাপাশি একাধিক উপ ও সহকারী হাই কমিশন, তেমনি ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনের যতগুলো শাখা-প্রশাখা রয়েছে, আমার জানা মতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় আর কোন দেশে এতগুলো পেখম মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা আর ত্রিপুরার আগরতলায় রয়েছে আমাদের হাই কমিশনের এমনি দুটি শাখা। তারপরও এ কথা কেউ অস্বীকার করবেন না যে দু’দেশের বাঙালীদের মধ্যে আরো ঘনিষ্ট যোগাযোগ আর সহযোগীতা গড়ে তোলা আর পাশাপাশি তাদের মধ্যকার নানান সমস্যার সমাধান আর মিথস্ক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে সামাল দেয়ার জন্য দুদেশের সরকারের দক্ষতম ডিপ্লোমেটদের এই উপস্থিতিও যথেস্ট নয়। আর এই জায়গাটাতেই দারুন সফল পাবলিক ডিপ্লোমেসি যদি তা ঠিকঠাকমত কাজে লাগানো যায়।
বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এই দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালী সম্মেলনের কথাই ধরা যাক। সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মুখে বাংলাদেশের সংবিধান প্রনয়নের গল্প কিংবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর কাছে একাত্তরের যুদ্ধগাথা, পশ্চিমবঙ্গের আর সাথে বিশে^র নানান প্রান্তের বাঙালীরা যেভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিল তারা বোধহয় তাদের নিজেদের সংবিধান রচনার অজানা তথ্যগুলো জানছেন আর শিহরিত হচ্ছেন তাদের নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামে গেরিলাদের বীরত্বের কথা জানতে পেরে। আর যখন আইন বিষয়ক গোলটেবিলে আমাদের সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোটের মাননীয় বিচারপতিররা বাংলাদেশের সংবিধান আর আইনের ব্যাখ্যাগুলো তুলে ধরছিলেন তখন তা মন দিয়ে শুনছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হাইকোটের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে ওখানকার শীর্ষ আইনজীবিরা। বাংলদেশে ব্রিটিশ জমানারসেকেলে আইনগুলো ঝেড়ে-মুছে এত যে আজকের উপযোগী করে তোলা হয়েছে, এখানে যে এতটাই সুরক্ষিত নারী কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সাংবিধানিক অধিকারগুলো, সেসব অজানা তথ্যে সমৃদ্ধতর যখন পশ্চিমবঙ্গের আইনজগতের আইকনরা, তখন নিশ্চিত থাকতে পারেন এক লক্ষ পশ্চিমবঙ্গবাসীর সামনে বক্তৃতা করে কিংবা দু’দেশের দক্ষতম ডিপ্লোমেটদের নিয়মিত যোগাযোগেও এই অর্জনটুকু ঘরে তোলা সম্ভব ছিল না। একইভাবে আমি যখন ফ্যাটি লিভার নিয়েকথা বলে মঞ্চ থেকে নামছি তখন আমাকে ঘিরে ধরে পশ্চিবঙ্গের যে উৎসুক সুশীলদের ভীড়, তারা যতটানা আরো বেশি জানতে চায় লিভারের চর্বি নিয়ে, তার চেয়েও তাদের ঢেড় বেশি আগ্রহ বাংলাদেশের রোগীরা কেন সেদেশের ডাক্তার ফেলে তাদের ডাক্তারখানাগুলোয় ভীড় বাড়ায়।
আবার এর উল্টোটাও সত্যি। রিসার্চের সাথে সংশ্লিষ্টতা আর জাপানের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন অধ্যাপনার সুযোগে পৃথিবীর বেশকিছু আধুনিক ডায়াগনোস্টিক ল্যাবরোটরী আর রিসার্চ ফ্যাসিলিটি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা আমার ঝুলিতে জমা আছে। সেই জায়গায় দাড়িয়েই আমি হলফ করে বলতে পারি যে এই কনফারেন্সে এসে যদি আমার সাথে সোমনাথ দার পরিচয়টা না ঘটতো আর তার আমন্ত্রনে আমি যদি তার সুরক্ষা ডায়াগনষ্টিক ল্যাব ভেতরে-বাইরে ঘুরে দেখার সুযোগটুকু না পেতাম তাহলে আমার এ বিষয়ে জ্ঞান স্রেফ অর্ধেকই রয়ে যেত। সুরম্য আধুনিক ভবনে সোমথান দার সুরক্ষার বিশাল আয়োজন। একটা মেশিন আছে যার দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার। রোগীর রক্তের স্যাম্পল বোঝাই, বার কোডেড টেস্ট টিউবগুলো সেই মেশিনের একপ্রান্তে ঢেলে দেয়া হচ্ছে আর এ,আই আর রোবটের জাদুকরি ছোয়ায় অন্য প্রান্তে বেড়িয়ে আসছে হেমাটোলজি, ইমিউনোলজি, বায়োকেমিষ্ট্রি ইত্যকার যত রিপোর্ট। লিখলে শুধুমাত্র এই সম্মেলনটি নিয়েই ভরা যাবে পাতার পর পাতা। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি এই সম্মেলনে এপারের আর ওপারের আর সাথে সাত সমুদ্দুর, তের নদী পারের যে সমস্ত বিশিষ্ট বাঙালীযোগ দিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকেই এমনি সব দারুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েই যার যার ঘরে ফিরেছেন। এটাই পাবলিক ডিপ্লোমেসির শক্তি।
আমরা লিভার বিষেশজ্ঞরাও এমনি ধরনের ‘লিভার ডিপ্লোমেসির’ সাথে যুক্ত আছি। আমরা গত চার বছর ধরে ‘পদ্মা গঙ্গা গোমতী লিভার সম্মেলন’ নামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে আসছি। পদ্মা-গঙ্গা বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের ঐক্যতান আর গোমতিতে বহমান বাংলাদেশ আর ত্রিপুরার বাঙালীর বাঙালীয়ানা। আমরা তেমনটা বিশ্বাস করি বলেই বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরার বাঙালী লিভার বিশেষজ্ঞদের এই সম্মেলনটিকে আমরা এ নামে ডাকি। হালে আমরা শুরু করেছি আরেকটি নতুন লিভার সম্মেলন – ‘বালিকা’ অথ্যাৎ কিনা বাংলা লিভার ককাস। এর সভ্য বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরার সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের তাবৎ দেশের, তাবৎ পাসপোর্টধারী, তাবৎ বাঙালী লিভার বিশেষজ্ঞ। বাঙালীর পাসপোর্ট আজ কাটাতারের বেড়ার জালে কারো সবুজ তো কারো নীল আর কারো বা অন্য কোন রঙের, কিন্তু তাতে বাঙালীর লিভার রোগের থোরাই যায় আসে। ভেতো বাঙালীর লিভারের চর্বি জমে ঢাকায়, কোলকাতায় আর ওয়াশিংটন কিংবা লন্ডনে। আবার বাঙালী লিভার বিশেষজ্ঞরা, তা তার পাসপোর্টটা যে রং-এরই হোক না কেন, তারা যখন এক সাথে হন তখন হোক চিকিৎসা, হোক গবেষনা কিংবা নিখাদ আড্ডা, তার আমেজটাই থাকে অন্য রকম। সেখানে যে আন্তরিকতা আর প্রানের অনুরনন, সে আর অন্য কোথায়? পদ্মা গঙ্গা গোমতি লিভার সম্মেলনে আর বালিকায় যেসব ভীন দেশি বাঙালী লিভার বিশেষজ্ঞ ঢাকায় পা দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন ৩২-এ বঙ্গবন্ধুকে। কাউকেই বলতে হয়নি। এটি ছিল তাদের প্রত্যেকের ঢাকায় কার্যতালিকায় একেবারে শীর্ষে। আমার জাতির পিতার প্রতি তারা যেভাবে শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছেন তার চাক্ষুষ স্বাক্ষী আমি নিজে আর তার স্বাক্ষ্য লিপিবদ্ধ আছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের ভিজিটর বুকেও। বঙ্গবন্ধু শুধু হাজার বছরেরই নন, তিনি যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠবাঙালী, সেই বোধটুকু আমার বারবার জাগ্রত হয়েছেআমি যতবারই আমার এই ভীনদেশি বাঙালী লিভার কলিগদের সাথে নিয়ে ৩২-এ গিয়েছি। বালিকার আয়োজনটা ছিল একেবারেই পদ্মার ধারে। কাচের জানালার পেছনে পদ্মা সেতু আর সামনে বাঙালী লিভার বিশেষজ্ঞের বাংলায় লেকচার তার বাঙালী সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে-এ এক এমন অনুভূতি যা ভাষায় ফুটিয়ে তোলার ভাষা আমার ভান্ডারে অনুপস্থিত। শুধু মনে হচ্ছিল এতো বাঙালীর একের পর এক বাংলায় লিভার চর্চা নয়, এটা বাঙালীর লাগাতার বিজয় উদযাপন।
ক’দিন আগে এদেশ থেকে ঘুরেগেলেন পশ্চিমবঙ্গের ত্রিশ-পয়ত্রিশ জন শীর্ষ সাংবাদিক। ওদেশের জাতীয় এবং রিজিওনাল প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক আর সোশ্যাল মিডিয়ার দিকপাল একেকজন। তাদের কয়েকজনই আমার বন্ধু কিংবা দাদা স্থানীয়। ঢাকায় এসে তারা প্রচন্ড ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। গিয়েছেন চট্টগ্রাম আর কক্সবাজারেও। আর তাদের ঢাকায় অবস্থানের প্রথম দিকটায় আমি আবার ছিলাম কোলকাতায়। কাজেই এ যাত্রায় দেখা হওয়ার আশা যখন প্রায় ছেড়েই বসেছি, তখন সেল ফোনে ‘দাদা, চলে আসুন’ আমন্ত্রনটা পেয়ে আর দেরি করিনি। নাকে মুখে চেম্বার শেষ করে দে ছুট, আর আড্ডা শেষে যখন ঘরে ফিরছি মহল্লায় মহল্লায় মুসল্লিরা তখন ফজরের নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদমুখী। কখনো রাজনীতি তো কখনো তিস্তা, কখনো স্রেফ হাল্কা রসিকতা তো কখনো রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আর কোভিডের সর্বশেষ, কোন ফাকে যে রাতটা কাবার টেরও পেলাম না। তবে মনটা ভরে গেল আনন্দবাজারে অনা মিত্র দার “আরও স্মার্ট হতে চায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশ” লেখাটা পরে। আজকের বাংলাদেশ আর বাঙালীর শেখ হাসিনাকে কি দারুন দক্ষতায়ই না ফুটিয়ে তুলেছেন অভিজ্ঞ এই কলমযোদ্ধা তার লেখনীর জাদুকরীতে। জয়তু পাবলিক ডিপ্লোমেসি!
পেশার পাশাপাশি আমি যে সব সিভিল সোসাইটি মুভমেন্টে সময় ব্যয় করি তার অন্যতম একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোয় শেখ হাসিনার পর যদি আর কারো অবদানের কথা শ্রদ্ধায় স্মরনে আনতে হয় তবে সেটা এই সংগঠনটির। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম থেকে শুরু করে আজকের শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী-শাহরিয়ার কবির-কাজী মুকুলের মত অনেক দেশপ্রেমিকের রক্ত-ঘাম-ত্যাগের বিনিময়ে নির্মূল কমিটির আজকের এইঅর্জন। তবে পাবলিক ডিপ্লোমেসিতে নির্মূল কমিটি যে কি অসাধারন অবদান তা বোধ করি অনেকেরই অজানা। এই ক’দিন আগেও ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গনহত্যা দিবসে ব্রাসেলসে ইউরোপের শতাধিক হিউম্যান রাইটস একটিভিষ্ট আর অনেকগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনেরউদ্যোগে একাত্তরের বাংলাদেশে আর আজকে মিয়ানমারের মানবতাবিরাধী অপরাধের শাস্তি আর বাংলাদেশে একাত্তরের গনহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে যে শীত কাপানো মানববন্ধন তা নির্মূল কমিটির সফল পাবলিক ডিপ্লোমেসির আরেকটি উদাহরন মাত্র। মনে রাখতে হবে বিএনপির মত কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটি বিবৃতি বা পদক কেনার মত কোন সহজ বিষয় এটি নয়। আমি নিজে ইংল্যান্ড আর সুইজারল্যান্ডে নিজের গাটের টাকা খরচ করে নির্মূল কমিটির প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে দেখেছি-শিখেছি পাবলিক ডিপ্লোমেসি কিভাবে করতে হয় আর তার সক্ষমতাও কত বেশি। এ কথা পরে হয়তো বেশিরভাগ পাঠকই অবাক হবেন যে খোদ পাকিস্তানেই নির্মূল কমিটির শাখা আছে আর সেদেশে এদেশকে তুলে ধরায় আর এদেশের আর এদেশের বঙ্গবন্ধু আর একাত্তরের কথা বলায় আমাদের ইসলামাবাদের দুতাবাসটি পাশাপাশি তাদের ভুমিকাও লক্ষ্যনীয়।
আজকের এই গ্লোবাল ভিলেজে গোটা পৃথিবী যখন একটা সুতায় গাথা তখন আলাদা করে তোমার আর আমার ভাবার সুযোগ খুবই কম। আজকের পৃথিবীতে এগুতে হবে এক সাথে আর জিততেও হবে ঐ এক সাথেই, সবাই মিলে। আর রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে এমনি ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি তৈরী করতে হলে শুধু রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে বোঝাপড়া ঠিক থাকলেই চলবে না, এর জন্য প্রয়োজন পরে মানুষে-মানুষে যোগাযোগও। জিততে হলে ছাড়তে হয় অনেক সময়ই। হারতেও হতে পারে কখনো-সখনো চুড়ান্ত বিজয়ের স্বার্থে। এই কাজটা খুবই সহজ যখন মানুষ মানুষকে চেনে। আর তারা যদি পরস্পরের কাছে অচেনা হয়ে যায় তখন পুরো জিনিষটাই অনেক বেশি ঘোলাটে হয়ে দাড়ায়। বিষয়টা বুঝতে হলে বেশি দুর যেতে হবে না। একাত্তরে কেন পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরার মানুষ এক কোটি বাংলাদেশের বাঙালীকে হাসতে হাসতে জায়গা ছেড়ে দিয়েছিল আর আজকের রোহিঙ্গারা কেন আমাদের জন্য এত বড় বোঝা তা বুঝতে বোধকরি পাবলিক ডিপ্লোমেসি বোঝার দরকার পরে না।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বদ্যালয়।
সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।