বান্দরবনের পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠনের আরও ৫ সদস্য গ্রেফতার করছে র‌্যাব।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- বান্দরবনের পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠনের আরও ৫ সদস্য গ্রেফতার করছে র‌্যাব।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি-রুমা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার প্রশিক্ষণরত আরও ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকার নিজামুদ্দিন হিরন ইউসুফ (৩০), কুমিল্লার আহমেদ সাইহা (২৭), মো. বাইজিদ ইসলাম মুয়াজ (২১), সিলেটের মো. সাদিকুর রহমান সুমন ফারকুন (৩০) ও এক কিশোর (১৭)। তারা বান্দরবানের পাহাড়ের গহীনে সশস্ত্র দল ‘কেএনএফ’ বা ‘বম পার্টি’র আস্তানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন।
বুধবার রাতে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৭ এর অভিযানে বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকা থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত পাঁচজন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাদের কাছ থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
বৃহস্পতিবার বান্দরবানের র‌্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের তত্ত্বাবধানে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে বান্দরবানের গহিনে জঙ্গি আস্তানায় আসে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার কিশোর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আটজনের মধ্যে একজন। সাদিকুর সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া চার তরুণের মধ্যে একজন। গ্রেপ্তার সবার নাম ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে’ নিখোঁজ হওয়া ৫৫ জনের তালিকায় রয়েছে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সেখানে প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ প্রশিক্ষণ শেষ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কাঠামো সম্পর্কে বলতে গিয়ে মঈন জানান, সংগঠনটির ছয়জন শুরা সদস্য রয়েছে। তার মধ্যে আব্দুলাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় প্রধান, মোশারফ হোসেন রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান। এছাড়া সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক করতেন এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে আছেন।
অপরদিকে ভাংচুংলিয়াম বম, লালজং মুই ও লালমুনঠিয়ালের তত্ত্বাবধানে কেএনএফ গহীন পাহাড়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
তিনি আরও জানান, কেএনএফ তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে এসব জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কেএনএফের তত্ত্বাবধানে পাহাড়ে ৫০ এর বেশি জঙ্গি সদস্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। গত ২০ অক্টোবর রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব এই জঙ্গি সংগঠনের সাতজন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী দল কেএনএফের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার হয়। এই অভিযানের ফলে জঙ্গি ও বিচ্ছিতাবাদী দলের সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দুর্গম পাহাড়ে পালিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর দিন-রাতের রুটিন টহল ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানের ফলে জঙ্গিরা আত্মগোপনে থেকে নিয়মিত স্থান পরিবর্তন করে।
কমান্ডার মঈন বলেন, ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ব্যাপারে ২৫ আগস্ট নিখোঁজদের পরিবার কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর র‌্যাব নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। অভিযানে ৮ তরুণদের মধ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া নিলয়কে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় এবং নিলয়কে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিলয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে গত বছরের ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া রিফাতসহ ৭ জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার’ কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য দেন বলে তিনি জানান।
মঈন আরও বলেন, এরপর র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত সেপ্টেম্বর থেকে বেশ কয়েকটি অভিযানে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের মধ্যে ৩ জন ও নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার ৩১ জনকে আটক করে। আর এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৪ নেতা ও সদস্যকেও গ্রেপ্তার করে।
তিনি জানান, বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া সংগঠনটির আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদ। উগ্রবাদী এই সংগঠনে ৬ জন শুরা সদস্য রয়েছেন। তারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। এদের মধ্যে শুরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার ২য় প্রধান, মোশারফ হোসেন রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান ও শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা, প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছেন।
নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দাবি করে মঈন বলেন, এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনটির প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম, মিডিয়া শাখার প্রধান লালজং মুই মাওয়াইয়া এবং লাল মুন ঠিয়াল চির চির ময়।
এসব তথ্য পাওয়ার পর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় র‌্যাব নব্য জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণরত ৫৫ জন জঙ্গি এবং তাঁদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৭ এর অভিযানে বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকা থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জন জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে ৫ জনকে আটক করে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বেচ্ছায় নিরুদেশ হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ৩১ জন ও সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশের গর্ব, আকাংঙার প্রতীক ও স্বপ্ন মেট্রোরেল -- প্রধানমন্ত্রী

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top