মেট্রোরেলের লোগো তৈরির কারীগর নিশান।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- মেট্রোরেলের লোগো তৈরির কারীগর নিশান।
বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ইতিহাসের বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। স্বপ্নের এই মেট্রোরেলের উদ্বোধন হয়েছে আজ বুধবার। স্বপ্নের এই মেট্রোরেলের লোগো বানিয়ে ইতিহাসের অংশ হলেন নওগাঁর সন্তান আলী আহসান নিশান।
মেট্রোরেলের লোগো ছাড়াও মেট্রোরেলের স্টেশনে যে সাইনগুলো থাকবে সেগুলোও তার করা। নিশানের জন্মস্থান নওগাঁ শহরের ধামকুড়ি এলাকায়। বাবা মৃত আব্দুস কুদ্দুস। তিনি ছিলেন একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। সৈয়দপুরে রেলের লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপের (ইঞ্জিন হল্ড কারখানার) তত্ত্বাধায়ক হিসেবে কাজ করতেন নিশানের বাবা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগ থেকে সদ্য পাস করা আলী আহসান নিশান নিজের বানানো লোগো সম্পর্কে জানান, এই লোগের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে পুরো বাংলাদেশকে। একটা লাল সূর্য উঠছে। নিচে বাংলার চিরচেনা সবুজের মাখামাখি। দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ। মেট্রোর ‘এম’ অক্ষরটাও এমনভাবে বসানো, মনে হবে যেন প্ল্যাটফর্ম। রেলটির দিকে কিছুক্ষণ তাকালেই মনে হবে, ওটা স্থির নয়, ছুটে চলেছে। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করছে ছুটে চলা।

লোগো তৈরির গল্প
নিশান বলেন, ‘সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়েছি। কোনো কাজ নেই। চলতি বছরের শুরুর দিকে এক দিন বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে যাই। তিনি আমাকে বললেন, মেট্রোরেলের লোগো নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। তুমি প্রতিযোগিতায় অংশ নাও। স্যারের আহ্বানে আমি তিনটি লোগো বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে জমা দিলাম। আর অনেকেই লোগো বানিয়ে জমা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তিনটি লোগোর মধ্যে আমার দুটো ও অন্যজনের একটি পাঠানো হয়। এরপর জাতীয়ভাবে জমা হওয়া লোগোগুলোর মধ্যে থেকেও শর্টলিস্ট হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী আমার লোগোটি চূড়ান্ত করেন।’
লোগোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়নের গতি, সেটা লোগোর দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যাবে। লোগোটি স্থির প্রকৃতির হয়। এর রঙের ব্যবহারেও এক ধরনের ভারসাম্য থাকে। যেন চোখটা আটকে থাকে। লোগোতে সেটা ইচ্ছে করেই রাখা হয়নি। এতে এক ধরনের গতি আছে।’
প্রতিযোগিতায় নিশানের বানানো লোগো নির্বাচিত হওয়ার পর সেই লোগো নিয়ে কয়েকবার কাজ হয়েছে বলে জানান নিশান। তিনি বলেন, এখন লোগোতে থাকা ‘এম’ অক্ষরটি লিখে যে প্ল্যাটফর্ম বোঝানো হয়েছে, প্রথমে তা ছিল না। বিশ্বের ৩৫টি দেশে মেট্রোরেলের লোগোতে ‘এম’ রয়েছে। ওটাকে যুক্ত করার সময় একটু নতুনত্ব আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন:  সময় থাকতে আওয়ামী লীগকে শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নেওয়ার আহ্বান- ভিপি নুরের

নিশান বলেন, ‘লোগো যখন বানানো শুরু করি, তখন মেট্রোরেল দেখতে কেমন সেটাও জানা ছিল না। তাই প্রথম যে রেলটা ব্যবহার করেছিলাম সেটি দেখতে বুলেট ট্রেনের মতো ছিল। পরে যখন মেট্রোরেলের ইঞ্জিন দেখলাম তখন কিছুটা পরিবর্তন করে দেওয়া হলো।
‘পুরো কাজ শেষ করতে ছয় মাসের মতো লেগেছে। চলতি বছরের মে মাসে যখন কাজটি হলো আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। অনেক প্রতিষ্ঠানে লোগো করেছি, কিন্তু এতটা ভালো লাগা কাজ করেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হওয়ার আনন্দ অবশ্যই অন্যরকম।’
মেট্রোরেলের স্টেশনের সাইনগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাইনের কাজ করতে গিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ যেন চিহ্নগুলে দেখেই বুঝতে পারেন কোনদিকে যেতে হবে, টয়লেট কোনদিকে, টিকিট কোথায় পাবেন, এসব ভাবতে হয়েছে।’

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top