চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে জনসভা।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে জনসভা।

বিএনপি’র রাজনীতি হচ্ছে আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করা,জ্বালাও পোড়া করা। দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন — প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসমুদ্রে ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।


চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, আপনারা কেমন আছেন, সবাই কি ভালো আছেন, আপনাদের জন্য আমার মন কাঁদে। প্রায় ৪০ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মাটিতে আবার যেন কোনো যুদ্ধপরাধী ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য আপনারা আমার কাছে ওয়াদা করুন। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করুন। আমরা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি করি আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশে বোমাবাজি-সন্ত্রাস করে, লুটপাট করে দেশকে ধ্বংস করে। বিএনপি-জামায়াত যাতে আবার ক্ষমতায় এসে দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে তার জন্য আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যারা ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর জন্য গেছেন তাদের কেউ টাকা না নিয়ে ফেরত আসেনি। বিএনপি গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, ওরা মিথ্যা বলে। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুজবে কান দেবেন না, আগে দেখুন বিষয়টা সত্যি কিনা।
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিশাল এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. হাসান মাহমুদ, আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলার নেতারা বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বছর পর আপনাদের এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ, আক্তারুজজ্জামান বাবু, মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ অনেক গুণী মানুষ আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন। তাদের প্রতি রইল অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। ১৯৮৮ সালে এ চট্টগ্রামে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি যখন মিছিল সহকারে লালদীঘি ময়দানে যাচ্ছিলাম তখন আমাকে হত্যা করার জন্য এরশাদ সরকারের খুনি রকিবুল হুদার নির্দেশে গুলি চালানো হয়। হত্যা করা হয় ৩০ জনকে। তখন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেছে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসে অনেক নিরীহ সেনা, বিমানবাহিনীর অফিসারকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে জিয়াউর রহমানের সময় প্রাণ হারিয়েছে। তাদের হাতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কেউ রেহাই পায়নি। জামায়াত-শিবির সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যায় এদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছে, মুছে ফেলা হয়েছে জয় বাংলা স্লোগানও। আমরা ক্ষমতায় এসে সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে এনেছি। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস এদেশের যুব সমাজ জানতেন না। ৭১ এর ১০ ডিসেম্বর যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিনসহ অনেকে। এ ১০ ডিসেম্বর তাদের অনেক পছন্দ। তাই আগামী ১০ ডিসেম্বরে তারা সমাবেশ ডেকেছে ঢাকায়। পাকিস্তানিদের পদলেহন করে বলে দলটি এই তারিখে আবারও কোনো হত্যা, লুটতরাজের পরিকল্পনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি দেশে হত্যা, সন্ত্রাসের রাজত্ব শুরু করে। তাদের সময় ৩ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে, ৫০০ মানুষ নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে। বিএনপির দুটি গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন। ৯৬ সালে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নিয়ে ক্ষমতা নিয়েছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করে দেয়। পরে আমরা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছি। করোনাকালে পৃথিবীর খারাপ অবস্থার মধ্যে দেশকে খারাপ হতে দেইনি। পৃথিবীর কোনো দেশ বিনা পয়সায় টিকা দেয়নি, আমরা দিয়েছি। কৃষক, ব্যবসায়ীসহ অনেককে প্রণোদনা দিয়েছি। করোনার সময় যেখানে ইউরোপের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে ছিল সে সময় আমাদের দেশের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। এখনো ইউরোপের অনেক দেশের মানুষ একবেলা খাবার খেয়ে চলেছে, সেখানে আমরা অনেক ভালো আছি। তিনি বলেন, আমাদের অনেক কিছু সাশ্রয় করতে হবে। বিদ্যুতের কষ্ট ছিল সামনে আর থাকবে না। জ্বালানি সাশ্রয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। দেশের মানুষকে খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে যা কিছুই উৎপাদন হোক তা করতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জায়গায়ও খালি রাখা যাবে না।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহাজোট সরকার চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন করেছে, সামনে আরো করবে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল হবে, বে টার্মিনাল হবে। ১৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ গেছে। ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন হচ্ছে। মাতারবাড়ী, বাঁশখালীতে পাওয়ার প্ল্যান্ট হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। সমুদ্র সীমানা উদ্ধার করেছি।
চট্টগ্রামবাসী উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যত দূরেই থাকি না কেন, আপনারাই আমার আপনজন। আপনারাই আমার পরিবার। আপনারাই আমার আশ্রয়। নৌকায় ভোট দিয়ে আবার আমাকে জয়যুক্ত করুন। জামায়াত-বিএনপি সরকার যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।
ভোর হতে পলোগ্রাউন্ড মাঠের উদ্দেশে নেতাকর্মীদের ঢল।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে ভোর হতে নেতাকর্মীরা মাঠের দিকে আসতে শুরু করে। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষের স্লোগানের মুখরিত হয়ে উঠে চট্টগ্রামের সড়ক। হাতে পোস্টার ও ব্যানার, মুখে স্লোগান দিয়ে সবার যাত্রাপথ একটাই পলোগ্রাউন্ড মাঠ। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যরা নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহণ করেছেন। বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেলযোগে বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন জনসভায় আসা শুরু করে। বেলা ১১টার মধ্যে নগরীর রাস্তাগুলো মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যায়। মাঠে প্রবেশ করতে না পেরে বেশিরভাগই আশপাশের রাস্তাগুলোতে অবস্থান নেয়। সকাল থেকে মহানগরীতে যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর প্রায় প্রতিটি রাস্তা হরেকরকম গেঞ্জি ও টুপি পরা নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়। পলোগ্রাউন্ড থেকে চারপাশের প্রায় দুই থেকে তিন মাইল দূর থেকে পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে লোকজন জড়ো হয়।
৩০০ মাইক ও বড় পর্দায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচার।
লাখ লাখ মানুষের ঢল মাঠে প্রবেশ করতে না পেরে আশপাশ থেকে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ শুনেছেন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ পলোগ্রাউন্ড মাঠের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো হয় ৩০০ মাইক। নগরীর টাইগার পাস, দেওয়ানহাট, সিআরবি, কদমতলী, চৌমুহনী, কাজীর দেউরি, ওয়াসা, লালখান বাজার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ শুনেছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ১৩টি বড় পর্দায় সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে।
এক আওয়ামী কর্মীর মৃত্যু :
চট্টগ্রামের জনসভায় যাওয়ার পথে চন্দনাইশ আওয়ামী লীগের এক আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যু ঘটে। চন্দনাইশ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে জহিরুল আলম বাচা নামের এ কর্মী পলোগ্রাউন্ডে আসছিলেন। আসার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। নিহত বাচা চন্দনাইশের হাশিমপুর ইউনিয়নের অধিবাসী বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন:  বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে পাটগ্রামে প্রস্থতি সভা

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top