সিলেটে তেল-গ্যাসের সম্ভার।

বিলেতের আয়না ডেক্স :- সিলেটে তেল-গ্যাসের সম্ভার।
বাংলাদেশ বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি তেল আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এ ক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চলের ভূমিকা মুখ্য।
এরই মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জে কৈলাশটিলায় ১০ নম্বর কূপ থেকে জ্বালানি তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখন এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কূপে কী পরিমাণ তেল পাওয়া যাবে এবং এখানে রিজার্ভ কী পরিমাণ আছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হবে।
শনিবার (১৭ ফ্রেব্রুয়ারি) ১০ নম্বর কূপ খনন প্রকল্প পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ১০ নম্বর কূপে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর পরীক্ষা করার সময় তেলের উপস্থিতি জানা যায়। কূপটিতে তিনটি গ্যাস স্তরের পাশাপাশি তেলের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১৩৯৭-১৪৪৫ মিটার গভীরতায় তেলের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে।
১০ নম্বর কূপ খনন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এরই মধ্যে এই কূপে ড্রিল করেছি। বর্তমানে আরেকটি ড্রিল করার প্রস্তুতি চলছে। এই কূপে আমরা সর্বোচ্চ গভীরে পৌঁছেছি এবং সবচেয়ে বেশি গ্যাসের প্রেসার, ৬০০০ পিএসআই পেয়েছি। আমরা আশাবাদী এই কূপ হবে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকরী একটি প্রকল্প। এই কূপ ঘিরে আমাদের বিরাট পরিকল্পনা। এর সঙ্গে আমাদের বিশেষজ্ঞরা আছেন। তারা সবাই পরীক্ষিত বিশেষজ্ঞ। আরও বেশি তেলের অনুসন্ধান পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এক প্রশ্নের জবাবে তেল প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে প্রেসারে এখন এখান থেকে তেল উঠছে এতে বোঝা যায় যে এখানে তেল আছে। তবে কী পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই শেষে জানতে আরও দুই মাস লাগবে। অনেকে বলছেন ১১ মিলিয়ন ব্যারেল আবার কেউ কেউ বলছেন এখানে ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের মজুত আছে। তবে আমরা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যেতে চাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। তিনি আরও বলেন, তেল উত্তোলনের বিষয়ে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম দিকে তেমন সক্ষমতা বা প্রযুক্তি সহায়তা ছিল না। কিন্তু এখন সেই কারিগরি সক্ষমতা আমাদের আছে। এ জন্য আমরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। এমনকি শেভরন যে কূপ খনন করছে সেখানে তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সও ব্যবহার করছে। আর এই বিষয়গুলো চলে আসায় আমাদের এখানে তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা আরও বেগবান হবে। এ ব্যাপারে দেশীয় কোম্পানির লোকেরা রাতদিন কাজ করছে। তারা এখানে যে সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়োগ করেছেন এবং আউটসোর্সিং করেছেন ড্রিলিং করার জন্য তারাও রাতদিন কাজ করছেন। অর্থাৎ সম্ভাবনা সবকিছুতেই ভালো দেখছি। তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে আরও দুটি কূপ খনন করব। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে এই এলাকায় আরও চার-পাঁচটি কূপ খননের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সিলেটে- ১০ নম্বর কূপটি খুবই সৌভাগ্যের। এখানে গ্যাসের চাপ ৬০০০ পিএসআই পাওয়া গেছে। পরীক্ষার সময় ২৫ মিলিয়ন উত্তোলন করার সময় চাপ ৩২০০ পিএসআই পাওয়া গেছে। অনেক কূপেই উত্তোলনের সময় চাপ কমে যায়, কিন্তু সিলেট -১০ খুবই ব্যতিক্রম। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির প্রাথমিক হিসাব বলছে, এই কূপে তেলের মজুত প্রায় ৮ মিলিয়ন ব্যারেল। যার মূল্য ৭ হাজার কোটি টাকা।
জানা যায়, প্রাথমিকভাবে এই কূপে এপিআই গ্রাভিটি ২৯.৭ ডিগ্রি পাওয়া গেছে। পরীক্ষা সম্পন্ন হলে তেলের মজুত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এর আগে কূপ থেকে উত্তোলিত তেল পরীক্ষার জন্য বুয়েট, ইস্টার্ন রিফাইনারীসহ তিনটি ল্যাবে পাঠানো হয়। রেজাল্ট পাওয়া গেলে আরও বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। কূপটির গ্যাস স্তরগুলোর অবস্থান হচ্ছে ২৪৬০ থেকে ২৪৭৫ মিটার, ২৫৪০ থেকে ২৫৭৬ মিটার ও ৩৩০০ মিটার গভীরতায়। গ্যাসের মজুত হতে পারে ৪৩.৬ থেকে ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি বর্তমানে দৈনিক ১১৫.২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করছে। কৈলাশটিলা ৮, সিলেট ১০ এবং সিলেট-১০এক্স, ও সিলেট-১১-সহ বেশ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। কোম্পানিটি আশা করছে চলমান কার্যক্রম ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হলে দৈনিক ২৫০ থেকে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
কৈলাসটিলা থেকে চার মাসের মধ্যে আসবে ২১ এমএমসিএফ গ্যাস : এর আগে গতকাল সকালে কৈলাসটিলা ৮ নম্বর কূপ পরিদর্শনে গিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে বাপেক্সকে এই রিগটি কিনে দিয়েছিলেন। এই রিগের মাধ্যমে আমরা সিলেট অঞ্চলে ড্রিলিং করেছি। বাপেক্স সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কৈলাসটিলা ৮ নম্বর কূপটি খনন করছে। আশা করছি চার মাসের মধ্যে এখান থেকে ২১ এমএমসিএফ গ্যাস পাইপলাইনে দিতে পারব। এই কূপে প্রায় ১.৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এখনো রিজার্ভ রয়ে গেছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডকে প্রায় সাতটি কূপ খনন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরও পাঁচটি কূপ খনন করার কাজ চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ড যতগুলো কূপ খনন করবে আমরা আশাবাদী আগামী দুই বছরের মধ্যে পাইপলাইনে নিয়ে আসতে পারব। আমাদের টার্গেট ৪৬টি কূপ খনন করে প্রায় ৬০০ এমএমসিএফ গ্যাস পাইপলাইনে নিয়ে আসতে পারব। বাপেক্স যেহেতু নিজস্ব রিগ এবং জনবল দিয়ে এ কূপগুলো খনন করছে এ জন্য এ গ্যাস আমরা সাশ্রয়ে পাব।
এদিকে, হবিগঞ্জের রশীদপুর গ্যাস ফিল্ডে নতুন কূপের গ্যাস সঞ্চালনের উদ্বোধন করলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ কূপের উদ্বোধনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে নতুন করে যুক্ত হলো আরও ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ গ্যাস কূপের উদ্বোধন করা হয়।
দেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিলেট অঞ্চলে জোরালোভাবে জরিপকাজ চলছে বেশ কয়েক বছর থেকে। এই অঞ্চলের মাটির নীচ থেকে প্রতিনিয়ত ভালো খবর আসছে। এখানকার গ্যাস ও তেল জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে।
‘রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন’ নামে এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৩৩ কোটি টাকার বেশি। শুরুতে এ প্রকল্পে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে ৯৫ ভাগ এবং কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে বাকি ৫ ভাগ অর্থায়নের কথা থাকলেও এখন এটি বাস্তবায়ন করা হয় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে (জিওবি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১২ মে রশিদপুর অনুসন্ধান কূপ-১১ খনন করতে ডিপিপি প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য পেট্রোবাংলায় পাঠায় এসজিএফএল। পরে ৯ সেপ্টেম্বর জ্বালানি বিভাগের বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভায় প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০২৩ সালের এক জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছর। ডিপিইসির এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় ডিপিপি তৈরি করে এসজিএফএল। নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কোম্পানির সর্বশেষ বোর্ড মিটিংয়ে নতুন ডিপিপি অনুমোদন হওয়ার পর পেট্রোবাংলায় পাঠানো হয়। পরে পেট্রোবাংলা থেকে ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। কূপগুলো হলো ১, ৩, ৪, ৭ ও ৮। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে ২ ও ৫ নম্বর কূপ। বন্ধ থাকা কূপ দুটি ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড।

আরও পড়ুন:  হুফফাজুল কোরআন বোর্ড, বাংলাদেশ এর হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ২য় রাউন্ড সফলভাবে সুসম্পন্ন

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top