বিলেতের আয়না ডেক্স :- সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির সেই দুই শিক্ষককে পুনর্বহালের নির্দেশ ইউজিসির।
সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সেই দুই শিক্ষককে পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই সঙ্গে ট্রাস্টিবোর্ড থেকে ভারতীয় নাগরিকসহ দুজনকে দুই মাসের মধ্যে বাদ দিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১২ নভেম্বর) ইউজিসির বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এসব নির্দেশনা দেন। চিঠিটি রবিবার লিডিং ইউনিভার্সিটিতে পাঠানো হয়েছে। চিঠির অনুলিপি উপাচার্যকে পাঠানো হয়।
ইউজিসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লিডিং ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন অনিয়ম এবং বিশ্ববদ্যিালয়টির উপাচার্য এবং বিওটির চেয়ারম্যানের পরস্পরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, লিডিং ইউনিভার্সিটি স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেইন এবং সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাশের বরখাস্ত আাদেশ ঘোষণাপূর্বক সকল সুযোগসুবিধাসহ তথাকথিত বরখাস্ত আদেশের স্বাক্ষরের তারিখ হতে স্বপদে পূর্নবহাল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর কোন এখতিয়ার বলে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তার কারণ দর্শানোসহ ব্যাখ্যা তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিশনে প্রেরণ করতে হবে।
ভারতীয় নাগরিক সাদিকা জান্নাত চৌধুরী ও নাবালক সাইদ আজমাইন আবদুল হাইকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থেকে বাদ দিয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ও আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনিরীক্ষিত অর্থ বছর-এর নিরীক্ষা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেই সাথে ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মাওলাকে চুক্তি অনুযায়ী বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে সকল বিভাগে আগামী ৩ মাসের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৩৩(৩) ধারা মোতাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা নিশ্চিত করার জন্যও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ ট্রাস্টি বোর্ড ১৭ বছর ধরে সরকারের স্থায়ী অনুমোদন না থাকা এবং লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের দুর্নীতি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে ইউনিভার্সিটির ব্যাংক হিসাবে ৬৮টি লেনদেনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার বরাবরে ইউজিসির দেওয়া চিঠিসহ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাদিকা জান্নাত চৌধুরী (পাসপোর্ট নং-ক৩৯২০৮৫০) ভারতের নাগরিকের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে ড. কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট ইউজিসির একটি তদন্ত কমিটি গত ২৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে। এসময় তারা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রাগীব আলী, ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ও উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলার সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসে উপাচার্যের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিন্ডিকেট মিটিং পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যা তার প্রাপ্ত দায়িত্বের এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী।
এদিকে, ইউজিসির পত্র রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন লিডিং ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. মফিজুল ইসলাম। রবিবার বেলা তিনটার দিকে যোগাযোগ করলে রেজিস্ট্রার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কোনো চিঠি পাইনি।’
ইউজিসির পত্র পেলে নির্দেশনা সম্পর্কে কী করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউজিসি এমন কোনো আদেশ দিয়ে থাকলে তাহলে যতটুকু পালন করার ততটুকু করা হবে। আর যেটুকু আমরা পালন করতে পারব না, সেটা ইউজিসিকে যথারীতি জানিয়ে দেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষককে ভিন্ন দুটো কারণ দেখিয়ে বরখাস্ত আদেশ দেখিয়েছে। স্থপতি জেরিনা হোসাইন গত ৩ সেপ্টেম্বর তার শিক্ষকতার চুক্তি বর্ধিত করার আবেদন করেন। এটি উপাচার্য মঞ্জুর করলেও সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনহীন দেখিয়ে চিঠি দিয়ে তার চাকরির মেয়াদ শেষ বলা হয়।
অন্যদিকে, স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্থপতি রাজন দাশকে পেশাগত অসাদচরণের অভিযোগ তুলে ৯ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তার মেইল আইডিতে পাঠানো নোটিশ দেখে তিনি জবাব দিতে সময় চেয়ে মেইলে আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সময় না দিয়ে ১২ অক্টোবর আরেকটি মেইল দিয়ে বরখাস্ত আদেশ পাঠান।
এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক চাকরি থেকে তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০তম সিন্ডিকেট সভায়। এ বিষয়টি আবার লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ২৩ তম সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয় বলে জানানো হয়।
স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা গত ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে জানতে পারেন। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘আমাদের স্যার কই, ম্যাম কই’ প্লে-কার্ড প্রদর্শন করে দুই শিক্ষককে বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দুই শিক্ষককে হঠাৎ বরখাস্ত করার সময়ে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে এ কাজটি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভিডিও বার্তায় উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত আইনসম্মত নয় বলে জানালে শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেরাতে আন্দোলন করছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ২২ অক্টোবর সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যনাারে সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশ গ্রহণে মানববন্ধন হয়। এ কর্মসূচির পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৩০ অক্টোবর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে সার্বিক বিষয়ে ইউজিসিকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। এরপর রবিবার ইউজিসি নির্দেশনা সংবলিত পত্রটি লিডিং ইউনিভার্সিটিতে পাঠানো হয়।
সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির সেই দুই শিক্ষককে পুনর্বহালের নির্দেশ ইউজিসির।
Share:
Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
পপুলার
আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে, নিতে নয়।
এপ্রিল ১১, ২০২৪
ঈদের দিন হামাস নেতার ছেলে ও নাতি নিহত ।
এপ্রিল ১১, ২০২৪